বেকাল: কেরালার সমুদ্রতীরের স্বপ্নরাজ্য।

কেরালার উত্তর প্রান্তে, কাসারগোড় জেলার এক শান্ত সমুদ্রতীরবর্তী গ্রাম — বেকাল (Bekal)। এখানে ইতিহাস, প্রকৃতি ও শান্ত সৌন্দর্য মিশে তৈরি করেছে এক মনোহর ভ্রমণগন্তব্য। প্রাচীন দুর্গ, বিস্তৃত সৈকত, নারকেল গাছের সারি আর নীল সমুদ্রের মেলবন্ধন বেকালকে এক অনন্য রূপে সাজিয়েছে। দক্ষিণ ভারতের ভ্রমণ তালিকায় যারা প্রকৃতির সঙ্গে ইতিহাসের ছোঁয়া খুঁজছেন, তাদের জন্য বেকাল এক আদর্শ স্থান।


বেকাল দুর্গ: ইতিহাসের সাক্ষী

বেকালের প্রধান আকর্ষণ হলো বেকাল ফোর্ট (Bekal Fort) — কেরালার সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত দুর্গ।
১৭শ শতকে শিবাপ্পা নাইক এটি নির্মাণ করেন প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্যে। পরে এটি টিপু সুলতান-এর অধীনে আসে, এবং পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসনের অংশ হয়।

এই দুর্গটি প্রায় ৪০ একর জমির উপর বিস্তৃত, এবং সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে যেন অতীতের গল্প বলে যায়। দুর্গের উঁচু প্রাচীর থেকে আরব সাগরের নীল জলরাশি দেখতে দেখতে মনে হয়, ইতিহাস ও প্রকৃতি যেন এখানে হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে।


বেকাল সৈকত: নীল তরঙ্গে শান্তি

দুর্গের পাশেই অবস্থিত বেকাল সৈকত (Bekal Beach) — এটি কেরালার অন্যতম পরিচ্ছন্ন এবং সুন্দর সমুদ্র সৈকত।
সাদা বালু, নীল জল, আর দূরে পাহাড়ি প্রান্তর — এই সৈকত ফটোগ্রাফারদের জন্য স্বর্গ। সন্ধ্যাবেলায় সূর্যাস্তের দৃশ্য বেকালের অন্যতম আকর্ষণ।

সৈকতের পাশে নির্মিত ভিউ টাওয়ার থেকে পুরো দুর্গ এবং সমুদ্রের মিলন দৃশ্য দেখা যায়।


প্রকৃতি ও প্রশান্তি

বেকালের আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য নারকেল গাছের বাগান, ছোট ছোট নদী, এবং শান্ত জেলেপাড়া।
এখানে শহরের কোলাহল নেই, তাই প্রকৃতির মাঝে কিছুদিনের নির্জন অবকাশ কাটাতে বেকাল আদর্শ।
চন্দ্রগিরি নদী, কাপিল সৈকত, এবং পল্লিকেরে সৈকতও কাছাকাছি ঘুরে দেখা যায়।


‍♂️ রিসোর্ট ও অভিজ্ঞতা

বেকালে এখন অনেক বিলাসবহুল রিসোর্ট ও স্পা রয়েছে, যেমন Taj Bekal Resort & Spa, যা সমুদ্রের ধারে বিশ্রামের জন্য অসাধারণ।
এছাড়াও, বেকালের হাউসবোট ভ্রমণ এক নতুন অভিজ্ঞতা দেয়, যেখানে নারকেল গাছের ছায়ায় নদীপথে চলতে চলতে প্রকৃত কেরালার সৌন্দর্যকে দেখা যায়।


কীভাবে যাবেন

  • বিমানপথে: নিকটতম বিমানবন্দর হলো মাঙ্গালুরু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (প্রায় ৭০ কিমি দূরে)।
  • রেলপথে: বেকাল ফোর্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকেই ট্রেনে নামা যায়।
  • সড়কপথে: কেরালা ও কর্ণাটকের বিভিন্ন শহর থেকে নিয়মিত বাস ও ট্যাক্সি চলাচল করে।

☀️ ভ্রমণের সেরা সময়

নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়টি বেকাল ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। তখন আবহাওয়া মনোরম থাকে, আর সমুদ্রও শান্ত থাকে ভ্রমণের উপযোগী।


স্থানীয় খাবার

কেরালার ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নিতে ভুলবেন না — মালাবার বিরিয়ানি, কারিমিন ফ্রাই, এবং নারকেল দুধে তৈরি সি-ফুড কারি এখানকার বিশেষত্ব।


শেষকথা

বেকাল শুধু একটি ভ্রমণস্থান নয়, এটি এক অনুভব — যেখানে ইতিহাসের গম্ভীরতা, প্রকৃতির মাধুর্য, আর সমুদ্রের শান্তি একত্রে মিশে গেছে।
দুর্গের প্রাচীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে, সূর্যাস্তের সোনালি আলোয় সমুদ্রকে দেখতে দেখতে মনে হয় — জীবনের ব্যস্ততার মধ্যে একটুখানি শান্তি এখনো আছে, তার নাম বেকাল।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *