মালদা, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ- মালদহের চাঁচলের মালতীপুরে প্রতি বছর দীপান্বিতা অমাবস্যা পেরোনোর পরের দিন আয়োজিত হয় এক অনন্য রীতি—কালী দৌড়। প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে শুরু হওয়া এই ঐতিহ্য আজও মালতীপুরের মানুষ সগৌরবে পালন করে আসছে। চাঁচলের রাজা শরৎচন্দ্র রায় বাহাদুর এই প্রথা চালু করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এলাকায় সম্প্রীতির বোধ আরও শক্তিশালী হবে। সেই সময় মালতীপুর অঞ্চলে শুধুমাত্র একটি মাত্র পুকুর ছিল যেখানে একসঙ্গে বহু প্রতিমা বিসর্জন হত। প্রতিযোগিতাটি এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল যে, যার কালী প্রতিমা অক্ষত থাকবে, সেই প্রতিমা হবে প্রথম বিসর্জন। প্রথাটি এমন এক উন্মাদনার সৃষ্টি করে যা এখনো মানুষকে ঐতিহ্যের শিকড়ে ধরে রাখতে সাহায্য করে।
আজও এই প্রতিযোগিতার দিন মালতীপুরে মানুষের ঢল নামে। দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো মানুষ এখানে ভিড় জমায় মা কালীর প্রতি তাদের ভক্তি নিবেদন করতে। এলাকাবাসীরা আটটি ভিন্ন কালী প্রতিমাকে কাঁধে নিয়ে ছোটেন, এগুলি হল বুড়ি কালী, চুনকা কালী, বাজারপাড়া কালী, আম কালী, হ্যান্টা কালী, হাট কালী, ও শ্যামা কালী। কাঁধে প্রতিমা নিয়ে মালতীপুর বাজার প্রদক্ষিণ করে কালীবাড়ির কাছের কালী দীঘিতে পৌঁছানোই দৌড়ের লক্ষ্য। প্রতিটি প্রতিমা ও তার দলে সমর্থকদের উচ্ছ্বাস দেখতে হলে এই দিনে মালতীপুরে যেতে হবে।পুরো এলাকা জুড়ে চলে ঢাকের তালে তালে উচ্ছ্বাস, ভক্তি আর আনন্দের ঢেউ। বাবার কাঁধে চেপে ছোট ছোট শিশুরাও মেতে ওঠে এই উৎসবে—যেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ঐতিহ্যের দৌড় থেমে না যায় কখনো।উল্লেখযোগ্যভাবে, এ বছর এই কালী দৌড়ের সাক্ষী থাকতে মালদহ জেলার পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদবও তাঁর পরিবার-সহ উপস্থিত ছিলেন। পুজো মণ্ডপ ও দৌড়ের ঐতিহ্য তিনি নিজে প্রত্যক্ষ করেন এবং স্থানীয়দের উৎসাহ ও শৃঙ্খলার প্রশংসা করেন।এছড়াও উপস্থিত ছিলেন,চাঁচল মহাকুমা পুলিশ আধিকারিক সোমনাথ সাহা,আইসি পূর্ণেন্দু কুন্ডু।কঠোর পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে এই কালী দৌড় সম্পন্ন হয়।
Leave a Reply