
ওঁ নমঃ শ্রী ভগবতে প্রণবায়….!
আমাদের সত্য সনাতন ধর্মে অপূর্ব সুন্দর মূল্যবান মনুষ্য জীবনে, ভারতীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতায়,
প্রাচীনকাল থেকেই কার্তিক পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ভারতীয় উপমহাদেশে দেবসেনাপতি কার্তিক একটি গুরুত্বপূর্ণ দেবতা। উত্তর ভারতে “মহাসেন এবং কুমার” হিসাবে উপাসনা করা হয়। প্রধানত তামিলনাড়ু রাজ্য এবং দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য অংশ, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং মরিশাসে “মুরুগান” হিসাবে পূজা করা হয়। কার্তিক পুজো সূর্যের গতির উপর নির্ভরশীল। সূর্য যখন রাশি পরিবর্তন করে তুলা থেকে বৃশ্চিক রাশিতে যায়। সেই দিন, অর্থাৎ কার্তিক সংক্রান্তি বা কার্তিক মাসের শেষ দিন কার্তিকপুজো হয়। কার্তিক পূজা কোন তিথি অনুসারে হয় না। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজোর পর আসে জগদ্ধাত্রী পুজো। তারপর ঘটা করে আয়োজন করা হয় কার্তিক পুজোর।
দেবাদিদেব মহাদেব ও জগৎজননী দুর্গার চারটি সন্তান লক্ষ্মী, সরস্বতী গণপতি ও কার্তিক। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চারটি শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করেন। তারমধ্যে দেবসেনাপতি কার্তিক ক্ষত্রিয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। কার্তিক হলেন সত্য সনাতন ধর্মে একজন পৌরাণিক দেবতা, যিনি দেব সেনাপতি হিসেবে পরিচিত। তিনি শিব ও পার্বতীর পুত্র এবং গণেশের সহোদর। তার অন্য নাম হল কার্তিকেয়, স্কন্দ, সুব্রাহ্মণ্য, শণমুখা। পৌরাণিক তথ্য অনুসারে কার্তিক ছিলেন দেবতাদের সেনাপতি এবং তারকাসুর বধের জন্য তাঁর জন্ম হয়েছিল। কার্তিককে বীরত্বের প্রতীক হিসেবে সম্মান জানাতে কার্তিক পূজা করা হয়।
এছাড়াও কার্তিক পূজা প্রধানত সন্তান লাভের জন্য ও সংসারে সমৃদ্ধি আনার জন্য করা হয়। কারণ, প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী কার্তিকের আরাধনায় পুত্রসন্তান লাভ হয়। কার্তিক পুজো করলে সংসারে শ্রীবৃদ্ধি ঘটে এবং ধন-সম্পত্তিও বৃদ্ধি পায়। নবদম্পতিরা সন্তান লাভের আশায় কার্তিক পূজা করেন। বিশেষত নিঃসন্তান বা নববিবাহিত দম্পতিরা কার্তিক পূজা করেন। এই পুজোর ফলে সুন্দর ও বলিষ্ঠ চেহারার পুত্রসন্তান লাভ হয়। ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে জমিদার জয়নারায়ণ পাল স্বপ্নে আদেশ পেয়েছিলেন কার্তিক পূজা করলে তাঁর নিঃসন্তান অবস্থার অবসান হবে, যার ফলস্বরূপ তিনি কার্তিক মন্দির তৈরি করে পূজা শুরু করেন। বিশেষ করে হুগলি জেলার চুঁচুড়া-বাঁশবেড়িয়ায় বিশেষভাবে প্রচলিত।
জমিদার জয়নারায়ণ পাল ছিলেন একজন বিখ্যাত জমিদার। তিনি বর্ধমান অঞ্চলের পাল পরিবারের সদস্য ছিলেন। কথিত আছে, তিনি ও তাঁর দুই ভাই (শ্যাম পাল এবং লক্ষ্মীনারায়ণ পাল) নিঃসন্তান ছিলেন এবং নিঃসন্তান থাকার কারণে তাঁদের একটি স্বপ্নের আদেশে তিন ভাই মিলে একসাথে কার্তিক পূজা শুরু করেন। এই ঘটনার পর তাঁদের সন্তান লাভের আশায় তিনি কার্তিক পূজার প্রচলন করেন, যার জন্য একটি বিখ্যাত কার্তিক মন্দিরও তৈরি করা হয়েছিল। কথিত আছে, ১৮৫৩ সালের কাছাকাছি সময়ে তিনি স্বপ্নে কার্তিক পূজার নির্দেশ পান এবং সেই থেকে তাঁর পরিবারে কার্তিক পূজার সূচনা হয়।
কার্তিক প্রণাম মন্ত্র:-
ওঁ কার্ত্তিকের মহাভাগ দৈত্যদর্পনিসূদন। প্রণোতোহং মহাবাহো নমস্তে শিখিবাহন।
রুদ্রপুত্র নমস্ত্তভ্যং শক্তিহস্ত বরপ্রদ।
ষান্মাতুর মহাভাগ তারকান্তকর প্রভো॥
কার্তিক গায়ত্রী মন্ত্র:-
ওঁ কার্তিকেয়ায় বিদ্মহে গৌরীপুত্রায় ধিমহি তন্নো স্কন্দ প্রচোদয়াৎ॥
পঞ্জিকা অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, ২০২৫ সালে কার্তিক পূজা পড়ছে ইংরেজি ১৭ নভেম্বর, সোমবার। বাংলা তারিখ হিসেবে ১৪৩২ সনের ৩০ কার্তিক। কারণ ওই দিন কার্তিক সংক্রান্তি বা কার্তিক মাসের শেষ দিন।
জগৎ গুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজের ও দেব সেনাপতি কার্তিকের শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ সকলের শিরে বর্ষিত হোক এই প্রার্থনা করি…!
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ।












Leave a Reply