সৌমেন্দু অধিকারীকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় ১০ ঘণ্টা ম্যারাথন জিজ্ঞাসা সবার চলে কাঁথি থানায়।

পূর্ব মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:- সকাল প্রায় ১০টা থেকে প্রায় ১০ ঘণ্টা পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে সৌমেন্দু অধিকারী। শুক্রবার কাঁথি থানার পুলিশ ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করে সৌমেন্দুকে। তিনি কাঁথি পুরসভায় দু’বারের পুরপ্রধান ছিলেন। তৎকালীন সময়ে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল পুরসভার বিরুদ্ধে। কখনও কাঁথি শহরে পথবাতি বসানোর নামে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ, কখনও আবার পুরসভার রাঙামাটি শ্মশানে স্টল দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে। পাশাপাশি সারদার লক্ষ লক্ষ টাকা দুর্নীতির সঙ্গেও নাম জড়িয়ে যায় এই পুরসভার। ছিল ত্রিপল চুরির মতো অভিযোগও। একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কাঁথি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। তদন্তে নেমে পথবাতি মামলায় এই দিন সৌমেন্দুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে তাঁর আইনজীবী জানিয়েছেন।
শুক্রবার সকাল ৯টা ৫৩ মিনিটে কাঁথি থানায় পৌঁছন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই বিজেপি নেতা সৌমেন্দু অধিকারী। সকাল ১০টা নাগাদ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয় বলে সূত্রের খবর। এরপর প্রায় ১০ ঘণ্টা ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ চলে সৌমেন্দুকে। যদিও কাঁথি থানায় যে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তার ভিত্তিতে সৌমেন্দুর কাছে কলকাতা হাইকোর্টের রক্ষাকবচ আছে। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এই রক্ষাকবচ দিয়েছে কোর্ট। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে পুলিশ তদন্ত করতে পারবে, কিন্তু সৌমেন্দুকে এই সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা যাবে না। এদিন কাঁথি থানায় সৌমেন্দুর হাজিরা দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী অনির্বাণ চক্রবর্তী।
কাঁথি পুরসভায় পথবাতি বসানোর নামে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেন কাঁথির বাসিন্দা পল্লব দও। সেখানে নাম জড়ায় কাঁথি পুরসভার তৎকালীন পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারীর। পুলিশ তদন্তে নেমে প্রথমে কাঁথি পুরসভার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ চৌহানকে গ্রেফতার করে। এরপর এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে কাঁথির কনকপুরের বাসিন্দা ভরত প্রধানকে গ্রেফতার করা হয়। দিলীপ চৌহান জামিন পেলেও ভরত প্রধান এখনও কাঁথির জেলে রয়েছেন।
অন্যদিকে কাঁথি শহরের রাঙামাটি শ্মশান স্টল নির্মাণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পুলিশ তদন্তে নেমে পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ বেরা, সৌমেন্দু অধিকারীর এক সময়ের গাড়ির চালক গোপাল সিং, ঠিকাদার সতীনাথ দাস অধিকারী ও অলোক সাহুকে গ্রেফতার করে। যদিও শর্তসাপেক্ষে চারজনকে জামিনে মুক্তি দেয় কাঁথি মহকুমা আদালত। এরপর আয় বহির্ভূত সম্পত্তির অভিযোগে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ বেরাকে গ্রেফতার করে কাঁথি থানার পুলিশ। যদিও তিনিও কয়েকদিন আগে আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পান।
এসবরে মধ্যেই আবার কিছুদিন আগে কলকাতায় বিস্ফোরক দাবি করেন সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, কাঁথির তৎকালীন পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারীকে একাধিক বিল্ডিং নির্মাণ নিয়ে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। এরপর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে কাঁথি থানার পুলিশ। কাঁথি থানার তদন্তকারীরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আলিপুর প্রেসিডেন্সি জেলে পৌঁছয়। সেখানেই সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনকে জিজ্ঞাসাবাদ চালায় পুলিশ বলেও সূত্রের খবর।
এই দিন থানা থেকে বেরিয়ে সৌমেন্দু অধিকারী বলেন, “পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। উচ্চ আদালত বলেছে, তাই তদন্তে সহযোগিতা করতে এসেছি। সমস্ত বিষয়টি ১ হাজার ৯৫৬’র জ্বালাযন্ত্রণা থেকে হচ্ছে। আগামী সোমবার আবার জিজ্ঞাসাবাদ পরবর্তী দিন ধার্য হয়েছে।” একইসঙ্গে সৌমেন্দু জানান, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের পর থেকে শুরু হয়েছে সমস্ত মামলা। সৌমেন্দু অধিকারীর আইনজীবী অনির্বাণ চক্রবর্তী বলেন, “কাঁথি পথবাতি দুর্নীতি মামলায় সৌমেন্দু অধিকারীকে হাজিরা দেওয়ার জন্য একটি নোটিস দেওয়া হয়। মহামান্য আদালতের নির্দেশ মেনেই সৌমেন্দু অধিকারী কাঁথি থানাতে হাজিরা দিয়েছেন। প্রচুর মিথ্যা মামলা দিয়ে আমার মক্কেলকে ফাঁসানো হচ্ছে। এটাও একটি মিথ্যা মামলা।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *