১০২ বছরেও সংসারের হাল সামলাতে আজও সবজি ব্যবসা করছেন কোলাঘাটের লক্ষী বালাদেবী।

পূর্ব মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:- অভাবের ঘরে স্বামীর হাত ধরে সংসারে আসা অল্প বয়সেই। সংসারের অভাব দূর করতে শুরু করেন সবজি ব্যবসা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাটে নতুন বাজারে প্রতি সোম ও শুক্রবার হাটে বসেন সবজি নিয়ে। বয়স ১০২ পার করেও আজও সংসারের দায়ভার নিজের কাছেই রেখেছেন কোলাঘাটের লক্ষীবালা দেবী। এযেন এক হার না মানা জেদ, যেখানে বয়স সংখ্যা মাত্র! লক্ষীবালা দেবীর জন্ম ১৯২০ সালে কোলাঘাটের বাগডিহা গ্রামে। ১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে আসেন যোগীবেড় গ্রামে। স্বামীর অভাবের সংসার। সেই থেকেই জীবন যুদ্ধের লড়াই শুরু। যে লড়াইয়ে আজও তিনি সামিল। এক কালে নিজের কারণে ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিয়ে ছিলেন। দেশ স্বাধীন হলে শাঁখ বাজিয়ে স্বাধীন ভারত ভূমিকে বরণ করে ছিলেন তিনি। সেই লক্ষীবালা দেবী বয়স কেয়ার না করেই সংসারে কারও কাছে বোঝা হতে চায় না। এই বয়সেও তিনি হাটে বসে আনাজ বিক্রি করেন। পাঁচ কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জননী তিনি। পুত্রের বয়স মাত্র যখন মাত্র ৭ বছর তখন তিনি স্বামীহারা হন। হাটে সবজি বিক্রি করি তিনি পাঁচ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তৈরি করেছেন পাকা বাড়ি। লক্ষ্মীবালা দেবীর স্মৃতিতে আজও লাল মুখো ইংরেজদের অত্যাচারের কাহিনী,বয়সের কারণে কানে কম শুনেন, চোখেও অনেক টাই কম দেখেন। হাঁটতে পারেন না ঠিকঠাক তবুও হাটে সবজি বিক্রি করা ছাড়েননি। বর্তমানে ছেলে নাতিরা মানা করলেও তিনি সবজি বিক্রি ছাড়েননি। তার এই হার না মানা জেদের কাছে হার মেনেছে ছেলে। কোলাঘাটের বাজারে ছেলে গৌরের চা দোকান রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে হাটবারের দিন গুলিতে লক্ষীবালা দেবী ছেলের সাইকেলে করে ভোর ৩ টায় হাটে আসেন। স্থানীয় চাষীদের কাছ থেকে শাকসবজি আনাজ কিনে নিয়ে হাটে বসেন,দুপুর পর্যন্ত করেন কেনাবেচা করেন। লক্ষী বালা দেবীর এই বয়সে হাটে বসে শাক সবজি বিক্রি করা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা অসীম দাস জানান, ‘১০২ বছর বয়সেও একজন মানুষ সংসারে বোঝা হতে চাইছেন না। তার এই হার না মানা জেদ অনেক মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।’ জীবন সংগ্রামে অনেক নারীর কাহিনী আমরা শুনতে পাই কিন্তু কোলাঘাটের লক্ষীবালা দেবীর জীবন সংগ্রাম সব কিছুকে ছাপিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *