দঃ দিনাজপুর, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ- দক্ষিণ দিনাজপুর: আজব গ্রাম! গ্রামে কারো বাড়িতে নেই শৌচাগার – খোলা মাঠেই মহিলাদের করতে হয় শৌচকর্ম, যাতায়াতের অযোগ্য রাস্তার কারণে বাড়িতে বা চলন্ত টোটোতেই হয়ে যায় মহিলাদের প্রসব, ইলেকট্রিক পোলে বিদ্যুৎ থাকলেও গ্রামের বাড়িগুলিতে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ- ঝুঁকিপূর্ণভাবে হুকিং করে জ্বলে বাড়িতে আলো। স্বঘোষিত নির্মল জেলা দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের ৭নং রামচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শিকারপুর গ্রামের অনুন্নয়নের ছবি লজ্জা প্রশাসনের। শিকারপুর গ্রামে বসবাস প্রায় ১৫০ পরিবারের। যাদের অধিকাংশই তপশিলী উপজাতিভুক্ত। গ্রামে প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি মাটির রাস্তা, বর্ষাকালে তো দূর অন্ত গীশ্মকালেই যে রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে নাভিশ্বাস উঠে গ্রামবাসীদের। যে কারনে গ্রামে ঢোকে না কোন এম্বুলেন্স। ফলে প্রসব বেদনা উঠলে হয় বাড়িতেই হয় প্রসব নতুবা কোন কোন সময় চলন্ত টোটোতেই প্রসব হয়ে যায় মহিলাদের, বক্তব্য গ্রামবাসীদের। গ্রামবাসীদের এও বক্তব্য একাধিকবার সরকারি সহায়তায় শৌচালয়ের জন্য আবেদন জানিয়েও শৌচালয় না পাওয়ার কারনে তাদের গ্রামের বাড়িগুলিতে কোন শৌচালয় নেই। যে কারনে গ্রামের মহিলারাও খোলা মাঠেই শৌচকর্ম করতে বাধ্য হন, খোলা মাঠে শৌচকর্ম করার কারনে জমির মালিকদের কাছ থেকে মহিলাদের শুনতে হয় গালিগালাজ। শুধু তাই নয় গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি পোতা থাকলেও এবং খুঁটিগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও আদিবাসী অধ্যুষিত হতদরিদ্র গ্রামের ঘরে ঘরে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। ফলে ঝুঁকিপূর্ণভাবে হুকিং করে বাড়িতে আলো জ্বালাতে বাধ্য হচ্ছেন গ্রামবাসীরা।
শিকারপুর গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্ণী মার্ডি বলেন আগেও আবেদন করেছিলাম শৌচালয় দেয়নি, যে কারনে মাঠে ঘাটে পায়খানা করি, মাঠে পায়খানা করি বলে জমির মালিকরা গালিগালাজ করে। তিনি বলেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত বলে হবে হবে কিন্তু হয় না। গ্রামের মহিলা কলিতা সরেন বলেন অন্যের জমিতে গিয়ে পায়খানা করতে হয়, পঞ্চায়েতকে বলে বলে হাফিয়ে গেছি, ৯০০ টাকা করে জমা দিয়েও পায়খানা পায়নি। হীরামনি মার্ডি বলেন শৌচালয় নেই, পঞ্চায়েতের মেম্বাররা বলে শৌচালয় আসবে, ২০ বছর ধরে এখনও আসছেই। চুড়কি হাসদা বলেন দিদির সুরক্ষা কবচ নিয়ে নেতারা গ্রামে এসেছিল সমস্যার কথা না শুনেই চলে গেছে, ভোট-ই দিব না, কারো বাড়িতে শৌচালয় নেই, মেয়ে মানুষদের কত সমস্যা হয় তা কেউ বোঝে না। কল্পনা সরেন বলেন অনেকবার দরখাস্ত জমা দিয়েছি, টাকাও দিয়েও শৌচালয় পাইনি যে কারনে মাঠে জঙ্গলে পায়খানা করি।
গ্রামবাসীদের দুর্দাশার কথা লোকমুখে প্রচারিত হতেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে গ্রামের মানুষদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পরেও এতদিন স্বঘোষিত নির্মল জেলা দক্ষিণ দিনাজপুরের রামচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের প্রবেশ দ্বারে “মাঠে ঘাটে পায়খানা-মৃত্যুর পরোয়ানা”, “মিশন নির্মল বাংলা – প্রচারে ৭নং রামচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত” লেখা হোডিং টাঙ্গানো থাকলেও কেন আদিবাসী অধ্যুষিত গোটা গ্রাম বছরের পর বছর কেন শৌচালয়হীন অবস্থায় রয়েছে। জেলাবাসীদের একাংশ ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছে স্বঘোষিত নির্মল জেলা দক্ষিণ দিনাজপুরের শিকারপুর গ্রামের অনুন্নয়নের ছবি লজ্জা প্রশাসনের। শিকারপুর গ্রামের বাসিন্দাদের দুর্দশা প্রসঙ্গে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বক্তব্য জানতে ৭নং রামচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে গেলেও সেই সময় গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিস তালাবদ্ধ থাকায় প্রধান-এর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তপন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রাজু দাস বারে থাকায় টেলিফোন মাধ্যমে তিনি জানান, এটা আমার জানা ছিল না, আপনাদের কাছ থেকেই শুনলাম, শুনে ব্যক্তিগতভাবে খুব খারাপ লাগল যে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী এত উন্নয়ন করার পরেও আদিবাসী মানুষরা পিছিয়ে পড়ে আছে। তিনি বলেন যাতে তারা
বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ অর্পিতা ঘোষ, জানান,শিকার পুরের শৌচালয় নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, শৌচালয়গুলি পায় সে ব্যবস্থা করব এবং আমাদের ব্লকের তরফ থেকে সেই কাগজগুলিকে আমি এন্ট্রি করব যাতে প্রত্যেকটি পরিবার বঞ্চিত না হয় এবং এই সূযোগ সুবিধাগুলি পায় সেই চেষ্টা করব। তিনি আরও বলেন আমরা দেখব কোন এন.জি.ও এই কাজটি করেছিল, সেই এন.জি.ও-কে ধরবার চেষ্টা করব, আমি বিডিও-কে জানাব, আমাদের ব্লকের টিমও তদন্তে যাবে, এগুলি না দেখে কিছু বলতে পারব না।
সুতরাং বর্তমানে আসন্ন ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে অনুন্নয়নের কারণে ক্ষোভে ফুসছে আদিবাসী অধ্যুষিত শিকারপুর গ্রাম। যন্ত্রনাভরা কন্ঠে শিকারপুর গ্রামের বাসিন্দা পানসারি বেসরা-র হুংকার – “ভোট চাইতে আসলে ঝাটাপেটা দেব নেতাদের”।
Leave a Reply