
পশ্চিমবঙ্গের হৃদয়স্থল বর্ধমান জেলা শুধু রাজবাড়ি, মন্দির বা ঐতিহাসিক নিদর্শনের জন্যই নয়, শিক্ষা ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও তার অবদানের জন্য সুপরিচিত। সেই বর্ধমান শহরের অন্যতম আকর্ষণীয় ও আধুনিক স্থাপনা হল “বিজ্ঞান ভবন”। এই বিজ্ঞান ভবনটি কেবলমাত্র একটি স্থাপত্য নয়, এটি একপ্রকার বিজ্ঞানপ্রেমী সমাজ গঠনের প্রতীক, যেখানে কৌতূহল, জ্ঞান ও শিক্ষার মেলবন্ধন ঘটে প্রতিদিন।
বিজ্ঞান ভবনের অবস্থান ও পরিচিতি
বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই অবস্থিত এই বিজ্ঞান ভবন। এটি বর্ধমান জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গঠিত হয়, যাতে জেলার সাধারণ মানুষ ও ছাত্রছাত্রীরা বিজ্ঞান সম্পর্কে বাস্তব ধারণা লাভ করতে পারেন। ভবনটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে নির্মিত—বড় গম্বুজাকৃতির ছাদ, প্রশস্ত প্রাঙ্গণ, এবং চারপাশে সবুজ বাগান তার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিজ্ঞান ভবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
এই ভবনের মূল উদ্দেশ্য হল বিজ্ঞানের প্রতি জনসাধারণের আগ্রহ বৃদ্ধি করা, বিশেষ করে গ্রামের ও ছোট শহরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। স্কুল-কলেজের বাইরে একটি এমন জায়গা যেখানে বিজ্ঞান শুধুমাত্র বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং চোখে দেখা যায়, হাতে ছোঁয়া যায়, মন দিয়ে অনুভব করা যায় — সেই অভিজ্ঞতাই দেয় বর্ধমান বিজ্ঞান ভবন।
⚙️ প্রদর্শনী ও কার্যক্রম
বিজ্ঞান ভবনের ভিতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে নানা আকর্ষণীয় বৈজ্ঞানিক মডেল ও প্রদর্শনী। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিজ্ঞান থেকে শুরু করে মহাকাশ ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিভাগে সাজানো রয়েছে শিক্ষণীয় প্রদর্শনী।
- এখানে রয়েছে পৃথিবীর গঠন, সৌরজগত, চুম্বকত্ব, আলো ও শক্তি বিষয়ক নানা মডেল।
- শিশুদের জন্য রয়েছে ইন্টার্যাকটিভ সায়েন্স গেমস, যা শেখার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দও দেয়।
- মাঝে মাঝে বিজ্ঞান মেলা, সেমিনার ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, যেখানে জেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেয়।
ডিজিটাল ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার
বিজ্ঞান ভবনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও যথেষ্ট। ডিজিটাল স্ক্রিনে দেখানো হয় বিভিন্ন সায়েন্স ফিল্ম, ৩ডি অ্যানিমেশন, এবং মহাকাশ ভ্রমণের ভিডিও। এর ফলে দর্শনার্থীরা যেন এক ভিন্ন জগতে প্রবেশ করেন — এক জগৎ যেখানে জ্ঞান ও কল্পনা মিলেমিশে তৈরি করে বিস্ময়ের অনুভূতি।
শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ
এই বিজ্ঞান ভবনটি স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীদের কাছে যেন এক মুক্ত পাঠশালা। এখানে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসেন বাস্তব বিজ্ঞানের জগতে। বিজ্ঞান প্রকল্প, প্রশ্নোত্তর প্রতিযোগিতা, ওয়ার্কশপ — এসবের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিজ্ঞানচর্চা আরও সহজ ও আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে।
পরিবেশ ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ
বিজ্ঞান ভবনের চারপাশে রয়েছে মনোরম উদ্যান, যেখানে নানা ধরনের গাছপালা ও ফুল ফুটে থাকে। ভবনের ভিতরেও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি যেমন সৌরবিদ্যুৎ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ও জল সংরক্ষণ ব্যবস্থার প্রয়োগ দেখা যায়। এটি তরুণ প্রজন্মকে পরিবেশ সচেতন হতে উৎসাহিত করে।
আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা
আমি যখন প্রথম বর্ধমান বিজ্ঞান ভবনে যাই, তখন তার গঠন ও পরিসর দেখে অভিভূত হয়ে যাই। ভেতরের প্রদর্শনীগুলি এত আকর্ষণীয় ও শিক্ষণীয় যে সময় কেটে যায় অজান্তেই। শিশুদের চোখে কৌতূহলের ঝিলিক, বিজ্ঞানীদের উদ্যম, এবং শিক্ষকদের নির্দেশনায় প্রতিটি মুহূর্ত যেন হয়ে ওঠে “বিজ্ঞানের উৎসব”।
উপসংহার
বর্ধমান জেলার বিজ্ঞান ভবন কেবল একটি স্থাপনা নয় — এটি এক জ্ঞানমন্দির, যেখানে অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে বিজ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়ে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যুক্তিবাদী, অনুসন্ধিৎসু ও প্রযুক্তিনির্ভর নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এই বিজ্ঞান ভবনের ভূমিকা অপরিসীম।
সারসংক্ষেপে:
“বর্ধমানের বিজ্ঞান ভবন শুধু বিজ্ঞান শেখার স্থান নয়, এটি ভবিষ্যতের স্বপ্ন গড়ার স্থান—
যেখানে কল্পনা মেলে ডানা, আর জ্ঞানের আলো ছুঁয়ে যায় আকাশ।”












Leave a Reply