Skip to content
  • Saturday, 24 May 2025
  • 2:30:19 AM
  • Follow Us
Sob Khabar

Sob Khabar

  • হোম
  • রাজ্য
    • উত্তর বাংলা
      • আলিপুরদুয়ার
      • কোচবিহার
      • দক্ষিণ দিনাজপুর
    • দক্ষিণ বাংলা
      • পশ্চিম মেদিনীপুর
      • পুরুলিয়া
      • পূর্ব মেদিনীপুর
      • ২৪পরগনা
        • গোসাবা
  • কলকাতা
  • দেশ
  • বিদেশ
  • ওপার বাংলা
  • খেলা
  • বিনোদন
    • ভ্রমণ
    • সাক্ষাৎকার
  • লাইফস্টাইল
  • স্বাস্থ্য
  • সাহিত্য
  • রেসিপি
  • সম্পাদকীয়
  • Home
  • মহিলা ঢাকির ঝাঁঝ (ধারাবাহিক উপন্যাস; তৃতীয় পর্ব) : দিলীপ রায় (+৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।
Featured সাহিত্য

মহিলা ঢাকির ঝাঁঝ (ধারাবাহিক উপন্যাস; তৃতীয় পর্ব) : দিলীপ রায় (+৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

sobkhabaradmin Jan 31, 2021 0

তারপর ……?
তারপর সায়ন তার বন্ধু কুহককে নিয়ে তার নিজের ঘরে ঢুকলো ।
এদিকে খেমটির আর বিছানায় শোওয়ার এতটুকু ইচ্ছা নেই । ঘুমানো দূরে থাক, ঘরে এক মুহূর্ত বসে থাকতে ইচ্ছা করছে না । তার মনের ভিতর নানান ধরণের কথাবার্তা ঘুরপাক খাচ্ছে ! সমাজে এখনও জাত-পাতের কচলাকচলির ট্রাডিশন সমানে চলছে । খেমটির মনে একটা উচ্চ ধারণা ছিলো, “যতো দিন যাচ্ছে মানুষের চিন্তাভাবনা ততো উন্নত ও আধুনিক হচ্ছে ।“ সায়নদের গাঁয়ে না এলে সে বুঝতেই পারতো না, মানুষ আধুনিক সভ্যতা থেকে কতো পিছিয়ে ? আর তাছাড়া নীচু জাতিতে জন্ম হওয়া কতো ভয়ংকর । স্রেফ বায়েন সম্প্রদায়ের মেয়ে হওয়ার জন্য স্কুল, কলেজে এমনকি রাস্তা-ঘাটে, দোকান-বাজারে নানানভাবে সে অন্য সম্প্রদায়ের বন্ধু-বান্ধবীদের অভব্যতার শিকার । এর বাইরে গাঁয়ে-গঞ্জে মানুষের মধ্যে এখনও জাত-পাত নিয়ে অবর্ণনীয় ধুন্ধুমার, তার সাক্ষী আজ সে নিজে । সত্যিই ভাবতে গলা ছেড়ে তার কান্না পাচ্ছে ।
কুহক পাশে না দাঁড়ালে মাসিমার অপ্রীতিকর গঞ্জনা অনবরত খেমটির উপরে বর্ষিত হোতো । তাকে আরও অসহনীয় গঞ্জনা সইতে হোতো । ভাগ্যিস, দেবদূতের মতো ঠিক সময়ে কুহক তার ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলো । নতুবা তার ঢাকের বাজনার পরিণতি কী সর্বনেশে রুপ নিতো সে নিজেও জানে না !
বিভিন্ন ধরণের ঢাকের তাল, বোল তার জানা । সে ভেবেছিলো, প্রাণ খুলে মায়ের পূজোতে ঢাক বাজাবে ! সে গুড়ে বালি । মান্ধাতা আমলের ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী পুরোহিত ঠাকুর মহাশয়, মহিলা ঢাকি হওয়ার কারণে বেঁকে বসলেন । ভিতর ভিতর তিনি খেমটিকে সহ্য করতে পারছিলেন না উপরন্ত তাকে পূজা মন্ডপ থেকে তাড়াতে চেয়েছিলেন । পুরোহিত ঠাকুর মহাশয়ের আস্পর্ধা দেখে খেমটি রীতিমতো তাজ্জব । অন্যায় ও অযৌক্তিক জেনেও খেমটিকে ঢাক বাজানো বন্ধ করার মতো গর্হিত কাজ করতে তার এতটুকু বিবেকে বাধছিলো না । কতো বড় দুঃসাহস ! আজকের দিনে খবরের কাগজ খুললে দেখা যায়, পূজা অর্চনার ক্ষেত্রে ব্রাম্মন পুরোহিতদের একচেটিয়া রমরমা বাজার অবসানের পথে । পুরোহিতগিরিতে অব্রাম্মনদের প্রাধান্য ক্রমশ চোখে পড়ার মতো । তবুও সায়নদের বাড়িতে শক্তি দেবী মা কালীর পূজোতে পূজারী যেসব আচার আচরণ করলেন সেটা এক কথায় নিন্দনীয় ও গর্হিত । বায়েনদের শিক্ষিত মেয়ে খেমটির ঢাক বাজানোর প্রতি পুরোহিত মশায় থেকে মাসিমা এবং গাঁয়ের মানুষদের যেভাবে বিদ্বেষ প্রদর্শন, ডিজিটাল যুগে সত্যিই সেটা ভাবনার বিষয় ! এহেন মান্ধাতা আমলের চিন্তাভাবনার অবসান ঘটাতে যেটা আশু প্রয়োজন, সেটা অবিলম্বে শিক্ষার সুসংহত বিকাশ !
খেমটি যতো কুহকের কথা ভাবে ততোই তার হৃদয় কুহকের প্রতি দুর্বল হতে থাকে । কিন্তু এতকাল, একই গ্রামের ছেলে হিসাবে সে কুহকে মোড়লের ছেলে হিসেবে জানে । আর তাছাড়া শিবদাস মোড়ল জাতিতে ব্রাম্মণ । সুতরাং কুহকের প্রতি তার দুর্বলতা নিছকই সাময়িক । কেননা সে জানে কুহক তাদের ব্রাম্মণের আগ্রাসী রুপ ধারণ করলে কুহকের প্রতি খেমটির ভালবাসার উদ্ভাস্‌ নিমেষেই গঙ্গার জলের স্রোতে হারিয়ে যাবে । তাই কুহককে নিয়ে খেমটি বেশী ভাবতে নারাজ । তথাপি তার হৃদয়ে তোলপাড়, কুহকের মতো আধুনিক মনস্ক ও সচেতন শিক্ষিত মানুষেরাই পারবে সমাজের ঘূণধরা বস্তাপচা কুসংস্কারগুলির অবসান ঘটাতে । তাই খেমটি মনেপ্রাণে চায়, অন্যান্য যুবক যুবতীরাও কুহককে অনুসরণ করুক । ঐ যুবক যুবতীদের দলে খেমটি নির্দ্বিধায় নিজেকে জড়িয়ে দেশের উন্নয়নে সামিল হোতে সমভাবে আগ্রহী ।
চারিদিকে ভোরের আলো । সূর্য উদয়ের পথে । এখনও সায়নদের বাড়ি নিস্তব্দ । বাইরে উঁকি দিয়ে খেমটি দেখে, সায়নের বাবা উঠোনে হাঁটাচলা করছেন । আর দেরী না করে খেমটি সোজা নীচের মন্ডপে । খেমটিকে দেখেই সায়নের বাবা জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি রাত্রিতে ঘুমাও নি ?”
ঘুম পায়নি কাকাবাবু ।
সে কী ! সকলেই তো এখন ঘুমোচ্ছে ।
না ঘুমালেও আমি ঠিক আছি কাকাবাবু । আমাকে নিয়ে আপনি অযথা উতলা হবেন না । আচ্ছা কাকাবাবু ……… ?
কিছু বলবে ?
বলছি, এখন কী ঢাক বাজাবো ? সূর্যের আলো এখন চারিদিকে বিকশিত । ভোরের পাখির কলরব তুঙ্গে । গাঁয়ের চাষিরা লাঙ্গল কাঁধে নিয়ে মাঠে ছুটছেন । গরুর দুধ আনতে গোয়ালারা দুধের ক্যান নিয়ে সাইকেলে এদিক-ওদিকে ধাবিতো । গাঁয়ের কিছু মানুষেরা সবজি মাথায় নিয়ে সম্ভবত বাজারে যাচ্ছে বিক্রি করতে । রাস্তায় এখন মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো । সুতরাং আপনি চাইলে, আমি ঢাক বাজনা শুরু করতে পারি ।
গাঁয়ে গঞ্জে প্রবাদ আছে, সকালে ঢাকের বাদ্য যথেষ্ট ভাল লক্ষণ । ঢাক বাজানোতে আমার আপত্তি থাকবে কেন ? এতে আমি বরং খুশী হবো । সুতরাং তুমি মুখ-হাত ধুয়ে ঢাক বাজাও । আমি তোমার চা-জল খাবারের দিকটা দেখছি ।
সায়নের বাবার অনুমতি পেয়ে খেমটি ঢাক কাঁধে তুলে নিলো । তারপর কাঠি দিয়ে ঢাক বাজিয়ে বোল তুলতে শুরু করলো । সকালের ঢাকের বোল খুব মিষ্টি । খুব নিষ্ঠার সাথে এত সুন্দরভাবে ঢাক বাজাতে লাগলো, যার জন্য বাজনাটা খেমটির শরীরে এক অজানা আনন্দের জোয়ার বয়ে আনলো । মনের উচ্ছ্বাসে খেমটি মা কালীর দিকে তাকিয়ে ঢাকের বাজনা বাজিয়ে যাচ্ছে । যার জন্য তার মনের ভিতর একটা অভুতপূর্ব আনন্দের অনুভূতি ।
নিমেষের মধ্যে সায়নের মাসিমা সটান খেমটির কাছে এসে দন্ডায়মান । “বলি, তোমার আক্কেল বলে কিছু নেই । বেহায়ার মতো প্রত্যুষে উঠে ঢাকে কাঠি ! বেজাতের মেয়ে হওয়ার কারণেই ঢাক নিয়ে এত লম্ফঝম্ফ । এদিকে ঢাকের বাজনার জন্য বাড়ির সকলের ঘুম উধাও, তার কী হবে ?”
“গালি-গালাজ করছেন কেন মাসিমা ? আপনার মুখে কী মিষ্টি ভাষা বাড়ন্ত । আচ্ছা বলুন তো, আমি আপনার দুচক্ষের বিষ কেন ? বায়েন সম্প্রদায়ের বলে আমরা মানুষ নই । আপনাদের কাছে আমাদের কী একটুও ন্যায্য মর্যাদা পাওয়ার অধিকার নেই ? সর্বক্ষণ আপনি আমাকে চোখ রাঙাচ্ছেন ? শুনুন, ভালভাবে আপনাকে বলে রাখছি,”খবরদার, আপনি আমাকে আর একটাও কটু কথা শোনাবেন না ।” কথাগুলি খেমটি খুব আক্ষেপের সঙ্গে মাসিমাকে বললো ।
কী করবে শুনি ?
এরপর আপনি না শুধরালে আমি আপনার সম্মান রাখতে পারবো না, কথাটা অগ্রিম জানিয়ে রাখলাম ।
“নীচু জাতের মেয়ের রাগের বহর দেখলে গা-জ্বালা করে । শোনো বায়েন মেয়ে, বাজনা এক্ষুণি বন্ধ করো । নতুবা তোমার মতো বেজাতের বেহায়া মেয়েকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিতে আমার কয়েক সেকেন্ডের কাজ ।“ মাসিমার হুমকি !
সঙ্গে সঙ্গে খেমটি ঢাক নামিয়ে রেখে সোজা মাসিমার সামনে এসে চোখ গরম করে বললো, “তাড়ান তো ? হিম্মত থাকলে আমাকে তাড়িয়ে দিন । আসলে আমাকে তাড়ানোর ক্ষমতা আপনার নেই । বেশী অপ্রয়োজনীয় উচ্চবাচ্চ্য করলে, আপনার মুখটা বন্ধ করার ফন্দি-কৌশল আমি জানি । আমাকে অনর্থক বেইজ্জ্বতি । সেটা আবার জাতপাত তুলে ।“ খেমটি এখন মানসিকভাবে দৃঢ় । নিজের প্রতি ভীষণ আত্মবিশ্বাসী । তাই ঠান্ডা মাথায় খেমটি মাসিমাকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিলো ।
“খবরদার ঢাকির মেয়ে । বেশী বাড়লে, মাথা দুমড়িয়ে হেলিয়ে দেবো । আমিও কায়েতের বাড়ির বিধবা, আমার অতশত ভয়ডর নেই । তুমি ঝাঁঝ মাখানো কথার খই ছিটাবে, আমি তাই শুনে ভড়কে যাবো ভাবছো ?” মাসিমার শাসানোর ঝাঁঝ লাগামছাড়া ।
সায়নের বাবা ছুটে এসে মাসিমাকে থামতে বললেন । তাতেও তিনি দমবার পাত্রী নন । জাত তুলে বেশরম কচলানো ।
মাসিমার কর্কশ আওয়াজ পেয়ে কুহক একরকম ছুটে তর্কাতর্কির স্পটে এসে হাজির । “কী হয়েছে কাকাবাবু ?” কুহক প্রশ্নটা সরাসরি সায়নের বাবাকে করলো ।
মাসিমা কোমড়ের শাড়ি শক্ত করে গুঁজে সায়নের বাবার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললেন, “এই নচ্ছার মেয়েছেলে ঢাকিকে এখনই বাড়ি থেকে বিদায় না করলে আমি নিজেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবো । “
কুহক মাসিমাকে উদ্দেশ্যে করে স্পষ্ট ভাষায় জানালো, “ঢাকির বাজনার ন্যায্য টাকা মিটিয়ে দেন, খেমটি তার নিজের বাড়িতে ফিরে যাবে । আপনার মতো খেমটী এই বাড়িতে অনেকদিন থাকতে আসেনি । আপনাদের বায়না মোতাবেক সে ঢাক বাজাতে এখানে এসেছে ।“
এই ছোকরাটা বড্ড মাতবরি করছে । দুদিনের ছোকরা, এখনও নাক টিপলে দুধ বের হয় তার আবার হুল ফোটানো কথা !” এবার কুহকের দিকে কটমট করে তাকিয়ে মাসিমা বললেন, “ঢাকি মেয়েটাকে ঢাক বাজানো বাবদ এক পয়সাও দেওয়া হবে না । অপবিত্র ঢাকির ঢাকের বাজনা আমাদের মায়ের পূজায় আর দরকার নেই । মেয়েটা যতো শীঘ্র সম্ভব পালালে বরং বাড়ির মঙ্গল ।“
“জুলুমবাজী হচ্ছে মাসিমা । এখনই আপনার অন্যায্য জুলুমবাজী বন্ধ করুন, তারপর আমার কথা শুনুন ।“ কুহক মাসিমাকে বললো ।
তোমার কথা কী শুনবো ? আমাকে কী তুমি হুমকি দিচ্ছো ?
আপনি এক্ষুণি খেমটির কাছে ক্ষমা চান ?
ক্ষমা চাইবো, তাও আমি ! মুচকি হেসে মাসিমা বললেন, “ আমি কেন ক্ষমা চাইবো ? ক্ষমা চাওয়ার কথা শোনাচ্ছো কেন হে ছোকরা ?” অন্যায় করেছো তোমরা, আর আমি ক্ষমা চাইবো ? দেহে প্রাণ থাকতে কখনই আমি ঐ নীচু জাতের মেয়েছেলের কাছে ক্ষমা চাইবো না ।
আপনি খেমটিকে জাত-পাত তুলে গালিগালাজ করছেন । অথচ খেমটি মেয়েটি শিক্ষিত, যার জন্য আপনার কথার উপরে টু-শব্দ পর্যন্ত করেনি । আপনার অন্যায় জেনেও আপনাকে সম্মান দিয়ে যাচ্ছে । অন্য কেউ হলে আপনাকে গালিগালাজ করার জঘন্য অপরাধটা বুঝিয়ে ছাড়তো ।
সায়ন কোথা থেকে ছুটে এসে একরকম জোরপূর্বক বগলদাবা করে কুহককে সেখান থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে গেল ।
সকাল ১১টার মধ্যে ঠাকুর বিসর্জনের পর্ব শেষ ।
ভোরবেলা থেকে ঠাকুর বিসর্জন পর্যন্ত খেমটি একটানা ঢাক বাজিয়ে খুশীতে ভরপুর । কেননা দিনের বেলায় গাঁয়ের মোড়ল, মাতবর সহ অনেক মানুষের সমাগম । কেউ একটিবারের জন্য মহিলা ঢাকি হিসেবে তার ঢাক বাজানোতে কোনো ওজর-আপত্তি তোলেন নি । বরং গ্রামের কিছু মানুষ বিশেষ করে তরুনেরা তার ঢাক বাজানোতে উৎসাহ জুগিয়েছেন এবং ভূয়সী প্রশংসা করেছেন । এমনকি তার ঢাক বাজানোর দৃশ্যে তরুনেরা তাদের মোবাইলে ভিডিও রেকর্ডিং করেছেন, সম্ভবত সেগুলো এতক্ষণ সোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়ার কথা ।
বিসর্জন শেষ । বাইরের অতিথিরা ফিরে যাওয়ার জন্য তল্পিতল্পা গুটাচ্ছেন । ভাঙ্গা হাট । লোকজন ছত্রভঙ্গভাবে ঘোরাফেরা করছেন । এবার ঢাকি বিদায়ের পালা ।
সায়নের বাবা কুহককে ডেকে বললেন, “ঢাকি বিদায়ের জন্য কতো টাকা দেওয়া যায় ?”
“কেন কাকাবাবু ? যে টাকায় বায়না করেছেন, পুরো টাকাই দেবেন ।“ কুহক সায়নের বাবাকে আবার বললো, “আপনারা মেয়েটাকে যেভাবে বাড়ি ভর্তি মানুষের মধ্যে অশুচি বানালেন, এটা লজ্জাকর ! নারী জাতির কাছে অপমান । কেননা প্রাকৃতিক নিয়মে খেমটি অসুস্থ । সেই সু্যোগে একটা শিক্ষিত মেয়েকে ঐভাবে হেনস্থা করা নিঃসন্দেহে গর্হিত কাজ ! আমি না থাকলে ঐ মাসিমা ও পুরোহিত উভয়ে মিলে খেমটির ঢাক বাজানো দূরে থাক, তাকে তাড়িয়ে ছাড়তেন । সবচেয়ে দুঃখজনক, আপনারাও মাসিমার অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলেন । মাসিমার কথায় তাল দিয়ে মেয়েটাকে অপবিত্র বানালেন । নিবিড়ভাবে চিন্তা করে দেখবেন, গতরাত্রের ঘটনাটা সমগ্র নারী জাতির কাছে কলঙ্ক ।
সায়নের বাবা কুহকের হাত দুটি চেপে ধরে আবেগজড়িত কন্ঠে বললেন, “আমাকে ক্ষমা করো বাবা । পুরো ঘটনাটা আমার ইচ্ছাবিরুদ্ধ । সেই সময় আমার হাত-পা ছিলো বাধা, আমি ছিলাম অসহায় ।“
কুহক বুঝতে পারছে, তার কথা শুনে সায়নের বাবা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছেন । তাই কুহকের কাছে তাঁর আকুতি-মিনতি ।
তারপর……………?
তারপর বেলডাঙ্গা দিয়ে ভাগীরথী গঙ্গা পার হয়ে চৌরীগাছা স্টেশন থেকে কুহক ও খেমটি দুজনে ভ্যান রিক্সায় উঠলো । ভ্যান রিক্সা বাবলা নদীর দিকে ধাবিতো । নদী পার হলেই তাদের ঘোড়াডাঙ্গা গ্রাম । প্রথমে কুহকের বাড়ি এবং তারপরে গ্রামের শেষ মাথায় খেমটিদের বায়েন পাড়া ।
ভ্যানে বসে কুহক আচমকা খেমটিকে প্রশ্ন করলো, “বাবার খবর নিয়েছেন ?”
সকালে ফোন করেছি । বাবা তখন ঘুমোচ্ছিলো । তবে…………।
তবে কী ?
মা বললো, “জ্বরটা নেই । শরীর খুব দুর্বল ।“
দুর্বল হওয়াটাই স্বাভাবিক ! কঠিন একটা অসুখ । ডাক্তারের দেওয়া কড়া ডোজের ঔষধ শরীরকে দুর্বল করে দেয় । আপনি চিন্তা করবেন না । আপনার বাবা শীঘ্রই ভাল হয়ে উঠবেন ।
তারপর কুহক আবার বলল,”আপনার এরপরের প্রোগ্রাম কী ?”
“এর পরের প্রোগ্রাম ঠিকমতো আপনার সাথে বাড়ি পৌঁছানো । তারপর খাওয়া- দাওয়া আর ঘুম ।“ বলেই মুচকী হাসলো খেমটি ।
তরতাজা যুবকের ন্যায় কুহক প্রায় সঙ্গে সঙ্গে খেমটিকে বললো, “আমি সেটা বলিনি ম্যাডাম । আমি জানি, আপনি গত রাত্রিতে এক ফোটাও ঘুমোন নি । তাছাড়া রাতটাও কেটেছে তীব্র মানসিক অশান্তিতে ।“
মানসিক অশান্তি ততোটা হয়নি ।
কেন ? এই কথা বলার অর্থ আমার মাথায় ঢুকলো না ।
আপনি ঐসময়ে উপস্থিত থেকে আমার পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, এইজন্য ।
আমি আবার কী করলাম ?
আপনি সময়মতো উপস্থিত না থাকলে বরং আমাকে আরও লাঞ্ছনার শিকার হতে হোতো, যেটা সামলানো আমার পক্ষে ভীষণ বেদনাদায়ক ছিলো ।
আচ্ছা আপনি এতটা ভীতো কেন ?
এটা এক ধরণের ব্যাধি যেটা সমাজে তথাকথিত চলমান পরম্পরার গতিধারা । অযৌতিক চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ! সামাজিক অবক্ষয়ের নমুনা । মাসিমা এখানে সেই গতিধারার ধারক ও বাহক ।
তারপর কুহকের দিকে তাকিয়ে খেমটি আবার বললো, “আপনার বন্ধুটাও অকর্মার ঢেঁকি ! তার কোনো ব্যক্তিত্ব নেই । মুখের ভয়েস্‌ উধাও । মাসিমাকে বোঝাবার হিম্মত নেই । অথচ ডাক্তারী পড়ছে । ফাইনাল ইয়ার । তার অনেক আধুনিক হওয়া সর্বাগ্রে প্রয়োজন । অথচ সে কিনা ঢেঁড়শ ।
ছাড়ুন ঐসব কথা ।
ঠিক আছে ছাড়লাম । এবার অন্য কথায় আসা যাক্‌ ।
“অন্য কথা, সেটা আবার কী ?” উৎসাহ নিয়ে কুহক জিজ্ঞাসা করলো ।
একে অপরকে আমাদের ভালভাবেই জানা হোলো না । সুতরাং আপনি নিজের সম্বন্ধে বলুন ?
ইতিমধ্যে কুহক তার ডান হাতটা খেমটির দিকে সটান বাড়িয়ে দিয়ে বললো, “আজ থেকে আপনি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ।“
খেমটি বা-হাতে ঢাকটা শক্ত করে ধরে ডান হাত দিয়ে কুহকের ডান হাতটা ছুঁয়ে বললো, “যথা আজ্ঞা । আজ থেকে আমরা একে অপরের ভাল বন্ধু ।“ তারপর দুজনের মুখে একই সঙ্গে মিষ্টি হাসি ! হৃদয়ে তাদের ভাললাগা আনন্দের ঘনঘটা ।
তাদের মাথার উপর দিয়ে একদল বেলে হাসের ঝাঁক উড়ে বাবলা নদীর দিকে ধাবিতো । দূরে জমিতে কৃষকেরা চাষ নিয়ে ব্যস্ত । সূর্য তখন মাথার উপরে । এক ভদ্রলোক তাঁর স্ত্রী সহ পুরো পরিবার সাইকেলে চেপে কোথাও যাচ্ছেন । সাইকেলের পেছনের সিটে স্ত্রী বসেছেন বাচ্চা কোলে, আর অন্যদিকে সাইকেলের সামনের সিটে তাদের বড় মেয়ে । খেমটি সাইকেলে চেপে যাওয়া পরিবারের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, তাঁদের পারিবারিক বন্ধন কতো দৃঢ় । হঠাৎ একটি বাছুর লাফাতে লাফাতে ভ্যানের সামনে আসায় চলন্ত ভ্যান রিক্সা হঠাৎ ব্রেক চেপে দেওয়ায় খেমটি আচমকা হুমড়ি খেয়ে পড়লো কুহকের ঘাড়ে, আর তার বা-হাতে ধরা ঢাক রাস্তার পাশে ঘাসের উপর গড়িয়ে পড়লো । বেচারা কুহক ঘাবড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা । ভ্যান থেকে নেমেই আগে ঢাক সামলালো । তারপর ভ্যানে উঠে খেমটির হাত চেপে ধরে তার পাশে বসে বললো, “এখন আর পড়বেন না ।“ আবার ভ্যান চলতে শুরু করলো । অপর একটি ভ্যান রিক্সা মাইক বাজাতে বাজাতে তাদের পাশ দিয়ে স্টেশনের দিকে ছুটছে । সুমধুর একটি গান বাজছে, “এপথ যদি শেষ না হয় তবে কেমন ……!”
ভ্যানওয়ালা খেয়া ঘাটে পৌঁছে ভ্যান থামিয়ে বললো, “আপনারা এবার নামুন, খেয়া ঘাটে পৌঁছে গেছি ।“
তখনও দুজনের হাত দুজনে ধরা ।
ইতস্ততঃ ঘাবড়ে গিয়ে দুজনে একরকম লাফিয়ে রিক্সা থেকে নেমে সোজা খেয়া নৌকায় গিয়ে উঠলো । বিশাল বাবলা নদী । নদীতে স্রোত সমানে বইছে । কিন্তু নদীর জলের অবস্থান শান্ত । ধীর গতিতে খেয়া নৌকা এগোচ্ছে । ঘোড়াডাঙ্গা গ্রামের পারে এসে দুজনে নামলো । দুজনের এবার বাড়ি ফেরার পালা । কিন্তু তাদের বন্ধুত্ব অমর হয়ে রইলো । বলা চলে তাদের বন্ধুত্বের গতিধারা নদীর স্রোতের ন্যায় নিরন্তর বহমান । নদীর পারে দাঁড়িয়ে দুজনের মধ্যে মন খোলা হাসি ! তারপর…… !
তারপর কেটে গেলো বেশ কিছুদিন । প্রায় তিন বছরের উপর ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিলো কুহক । অন্যদিকে খেমটি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এম-এ পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরলো ।
তারপর কুহকের ভাবনার শেষ নেই । সায়নদের বাড়ি থেকে খেমটির সঙ্গে আলাপের পর খেমটির উপর কুহকের ভীষণ টান । কুহকের কাছে এই হৃদয়ের টান্‌টার অবর্ণনীয় অনুভূতি । বলা চলে মরা গাঙে জোয়ার আসার ন্যায়, ভালবাসার জোয়ার । সায়নদের বাড়িতে পুরোহিত ঠাকুর মশায় ও মাসিমার সঙ্গে বাদানুবাদের মধ্যে কুহক খেমটিকে যতোটুকু বুঝেছে , তাতে খেমটির ব্যবহার, চাল-চলন, আচার-আচরণ, যথেষ্ট মর্যদাসম্পন্ন । বাংলা সাহিত্যে তার অনেক জ্ঞান । তার বাচনভঙ্গি পরিস্কার । স্পষ্ট উচ্চারণ । তাছাড়া বাংলা শব্দের উপর প্রচন্ড দখল । মানুষের সঙ্গে কথা বলায় যথেষ্ট মার্জিত । এটা ঘটনা, বায়েন সম্প্রদায়ের মেয়ে খেমটি । অথচ কেউ পরিচয় করিয়ে না দিলে খেমটির চেহারা দেখে কেউ অনুমান করতেই পারবেন না সে নীচু ঘরের মেয়ে । এমনই তার চেহারার জৌলুস । খেমটির মিষ্টি ব্যবহার, মায়া ভরা চোখ, মুখের মিষ্টি হাসি কুহককে ভীষণভাবে ভাবায় । তাকে আকৃষ্ট করে । যার জন্য কুহকের মনের গহন গাঙে এখন সর্বদাই খেমটির বিচরণ ।
ইতিমধ্যে খেমটিদের বাড়ি ঘোরা হয়ে গেছে কুহকের । খেমটিদের বাড়ির উঠোনে দুজনে একসঙ্গে বসে মুড়ি ও চা খাওয়া উভয়ের কাছে পরম তৃপ্তির ও আনন্দের । আনন্দ উচ্ছ্বাসে মুড়ি খাওয়ার ভিতর দিয়েই তাদের হর্ষজনক মেলবন্ধনের শুভ সূচনা ।
ঘোড়াডাঙ্গা গ্রামের আনাচে কানাচে ব্রাম্মণের ছেলে কুহকের বায়েনদের বাড়ি আনাগোনা একটি বড় খবর। গাঁয়ের অধিকাংশ মানুষ জেনে গেছেন, খেমটির সঙ্গে কুহকের অন্তরঙ্গতা । তাদের ঘনিষ্ট মেলামেশা । তড়িৎ গতিতে সেই খবর শিবদাস মোড়লের কানে পৌঁছে গেল । যার জন্য শিবদাস মোড়ল বেজায় চটেছেন শিবু বায়েনের উপর । তার এত বড় আস্পর্ধা, ছোট মেয়ে খেমটিকে ভেজিয়ে দিয়েছে তাঁর একমাত্র ছেলে কুহকের সাথে । তিনি সত্বর উভয়ের মেলামেশা বন্ধ করতে তৎপর । নতুবা তাদের গভীর ভালবাসার পরিণতি বিয়েতে গিয়ে দাঁড়ালে শিবদাস মোড়লের কাছে সেটা হবে অসহনীয় ও যন্ত্রণাদায়ক । তিনি বেঁকে বসেছেন, ছেলের বিয়ে কিছুতেই বায়েন সম্প্রদায়ের মেয়ের সঙ্গে দেবেন না । তার একমাত্র ছেলের বিয়ে হবে অন্যত্র অর্থাৎ ব্রাম্মণ সম্প্রদায়ের মেয়ের সাথে ।
এখানেই কুহকের সাথে তার বাবার মতের অমিল । সে খেমটির সাথে মিশছে, কিন্তু সেটা এখনও ভালবাসার স্তরে । তাদের ভালবাসার পরিণতি পায়নি । এখনও পর্যন্ত খেমটির সঙ্গে কুহকের মেলামেশাটা প্রাথমিক পর্যায়ে, বলা চলে ঘনিষ্ঠভাবে দুজনে একে অপরের কাছাকাছি আসতে পারেনি । খেমটিকে কুহকের ভীষণ পছন্দ । ভাললাগার পছন্দ । তাই তাদের বাড়ি নিয়মিত যাতায়াত । তার ব্যক্তিগত ধ্যান ধারণায় ভাললাগাটার ক্ষেত্রে কোনো জাত-পাত প্রসঙ্গ উঠতে পারে না । শুধু অন্তরের ভাললাগার নির্যাস ।
কোথায় যেনো কুহকের খেমটিকে অত্যধিক ভাললাগে । তার ভাললাগার অনুভূতি সে কাউকে বোঝাতে পারবে না । সায়নদের বাড়ি থেকেই তাদের মধ্যে ভাললাগার আনুষ্ঠানিক সূত্রপাত । আগেভাগে গাঁয়ের মেয়ে হিসেবে তেমন কোনো তাদের মধ্যে জানাশোনা ছিলো না । তবে খেমটির বাবাকে সে কিছুটা চিনতো । কেননা ঢাক বাদ্যিকার হিসেবে শিবু বায়েনের নাম ডাক কুহক বিলক্ষণ জানতো । আশেপাশের গ্রামে ঢাকের বাদ্যিকার হিসেবে শিবু বায়েনের কদর সর্বাগ্রে । বায়েন পাড়ার অন্যান্যরা সেভাবে শিবু বায়েনের মতো ঢাকের বোল সম্পর্কে ততোটা অবগত নয় । এমনকি তেমনভাবে অভিজ্ঞ নয় । যার জন্য খেমটি তার বাবার কাছ থেকে ঢাকের তাল, বোল ধীরে ধীরে রপ্ত করেছে । ঢাক বাজানোটা মনোযোগ দিয়ে শিখেছে । ঘটনাচক্রে সায়নদের বাড়ি গিয়ে মায়ের পূজোর সময় খেমটির ঢাক বাজানো কুহক চাক্ষুস অনুধাবন করার সুযোগ পাওয়ার কারণেই বুঝতে পারলো মেয়েটা যথেষ্ট বুদ্ধিমতী । নিজের কর্তব্যপরায়নে সতত সজাগ । আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান ।
একদিন চৌরীগাছা স্টেশনে বসে চা খাচ্ছিলো কুহক । তখন সকাল দশটাও বাজেনি । যাবে বহরমপুরে । ট্রেনটা দেরীতে ঢুকছে । ট্রেন প্লাটফর্মে ঢোকার খবর জানার পর অনেকক্ষণ বসে থাকতে হবে ভেবে চা খেতে বসা । স্টেশনে গোবিন্দের চায়ের দোকান নামকরা । তাঁর চায়ের দোকানে বসে কুহকের চা খাওয়ার অনেকদিনের অভ্যাস । গোবিন্দকে চা বানাতে বলে, দুটো বিস্কুট চাইলো । সেই সময় হঠাৎ ফোকলার সঙ্গে দেখা । ফোকলাকে ডেকে কুহক চায়ের দোকানে বসালো । তারপর কুহক গোবিন্দকে আরও এককাপ চা ও দুটো বিস্কুট দিতে বললো । দুজনে চা খেতে খেতে পুরানো দিনের কথায় ঢুকে পড়লো । হাসি মস্করায় দুজনে মশগুল । ফোকলা আবার কুহকের ছোটবেলার বন্ধু । ফোকলার একটা ভাল নাম রয়েছে । কিন্তু তার উপরের পাটির দাঁত কিছুটা ফাঁকা বলে বন্ধুরা তাকে খ্যাপাতো দাঁত ফোকলা বলে । সেই থেকে তার নাম হয়েছে ফোকলা । কুহকের কাছেও সে ফোকলা নামেই পরিচিত । কিন্তু নাম যাই থাক্‌, দুজনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক সাংঘাতিক মধুর । মাঝখানে কুহকের বাইরে পড়াশুনার ব্যস্ততায় কিছুদিন গ্যাপ । বাড়ি ফেরার পর স্টেশনের প্লাটফর্মে দুজনের এই প্রথম দেখা । ফোকলার আবার বাড়ির অবস্থা ভাল । জমি জায়গা ছাড়াও তাদের নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে । তাদের ফ্যামিলি অনেক বড় । ফোকলারা পাঁচ ভাই-বোন । ফোকলা বাড়িতে বড় । তাই পরিবারের প্রতি নজর দিতে গিয়ে ফোকলা চিড়ে চ্যাপটা । পড়াশুনা ঐ কলেজের চৌকাঠ অবধি । স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার আগেই পারিবারিক ব্যবসায় প্রত্যাবর্তন । বাড়ির বড় ভাই হওয়ার সুবাদে সংসারে দায়িত্বও বেশী । যার জন্য সংসারে সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের তাগিদে তাকে উপায়ের কথা ভাবতে হচ্ছে সর্বাগ্রে ।
অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকার জন্য ফোকলা সোজাসুজি কুহককে জিজ্ঞাসা করলো, “তোর খেমটির খবর কী ?”
খেমটি আমার নয় প্রিয় বন্ধু । সে শিবু বায়েনের ছোট মেয়ে ।
ঘোড়াডাঙ্গা ও বায়েন পাড়ার সকলেই জানে খেমটি শিবু বায়েনের ছোট মেয়ে বটে, কিন্তু কুহকের ভালবাসার আপনজন ।
তুই এভাবে বলছিস কেন ?
কারণ খেমটির প্রতি তোর অন্তরের নির্যাসিত ভালবাসা আজ সর্বজনবিদিত ।
“কী যে বলিস্‌ ।“ হাসলো কুহক ।
“তবে একটা কথা । কথাটা খানিকটা সুপারিশের মতো ।“ এইটুকু বলার পরে ফোকলা লক্ষ্য করলো কুহক তার কথা শোনার জন্য মুখিয়ে রয়েছে । তাই আবার বললো, “এবার দয়া করে “খেমটি” নামটা পরিবর্তন করে একটা আধুনিক গোছের নাম রাখ্‌ । নামটা বড্ড বেখাপ্পা ।“
হাসলো কুহক । তারপর বললো, “যথা আজ্ঞা ।“
আচ্ছা বল্‌ তো কুহক ?
কী ?
হঠাৎ বায়েনদের মেয়ের প্রতি তোর ভালবাসা উত্থলে উঠলো কেন ?
কঠিন প্রশ্ন ? তবে প্রশ্নটা প্রাসঙ্গিক । আমার মনেও এই প্রশ্নটা মাঝে মধ্যে উঁকি দেয় । ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি, খেমটির দেহসৌষ্ঠব আশাতীত প্রাচুর্যে ভরা । ঈর্ষা করার ন্যায় । তাছাড়া লেখাপড়ায় অনেক উন্নত । তার অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ার অনেক উজ্জ্বল । বাংলা সাম্মানিকে স্নাতক ডিগ্রিতে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম । তবে এম-এ ফাইনাল দিয়েছে, কিন্তু রেজাল্ট বের হয়নি । বাংলার মতো বিষয়ে গভীরে প্রচন্ড জ্ঞান না থাকলে মার্ক তোলা ভীষণ কঠিন । সেটা তুই আমার চেয়েও ভাল জানবি । এছাড়াও নিস্কলুষ স্বভাব চরিত্র । মার্জিত ব্যবহার । সুতরাং খেমটির গুণগত মান এক কথায় প্রশংসনীয় ।
সবটাই বুঝলাম । কিন্তু ………?
“কিন্তু কী ?” উদগ্রীবভাবে কুহক জানতে চাইলো ।
কিন্তু আমার বক্তব্য অন্য জায়গায় । তুই গোঁড়া ব্রাম্মণের সন্তান । ছোটবেলা থেকেই ব্রাম্মণের সঙ্গে সংযুক্ত সবকটি নিয়মকানুন তোদের পরিবারে প্রচলিত । এমনকি মহাধুমধামে তোর উপনয়নের ক্রিয়াকর্ম যথাযথভাবে পালিত হতে আমরা দেখেছি । সেই কট্টর ব্রাম্মণ কুহক, অথচ তোর মনটা হঠাৎ একটা উপজাতি বায়েন সম্প্রদায়ভুক্ত মেয়ের প্রতি ঝুঁকলো কিভাবে ?
আমি যেটা বুঝি, প্রেম-ভালবাসা জাত-পাতের নিরিখে উদ্ভাসিত হয় না । আমার ক্ষেত্রেও তদ্রুপ । খেমটির ভিতরের নিজস্বতা, তার সহজাত গুণাবলী আমাকে আকৃষ্ট করেছে অপরিসীম । এখন মানুষ অনেক আধুনিক । তুই চারিদিকে তাকালে দেখতে পাবি, সমাজে ইন্টারকাস্ট বিয়ে অহরহ । সচেতন মানুষ জাত-পাতের গোঁড়ামির গোঁ’তে আর আবদ্ধ নেই । অনেক স্বাধীনচেতা, উন্নত মন সম্পন্ন । তাছাড়া খেমটির চিন্তাভাবনা অনেক স্বচ্ছ এবং আধুনিকমুখী । তার সঙ্গে মিশে যেটা বুঝেছি, সে সমাজের আর দশটা মেয়ের মতো নয় । তার মধ্যে একটা সৃষ্টিশীলতার আগ্রহ কাজ করে । সমাজের উন্নয়নের কথা ভাবে । তাদের নিজের সম্প্রদায়ের উন্নয়নের কথা ভাবে । সর্বোপরি নারী চেতনার সমৃদ্ধি নিয়ে তার চিন্তাভাবনা নিরন্তর । এইসব কারণে খেমটি ব্যতিক্রম ।
ফোকলা আবার বললো, “তুই বলছিস্‌, নারী চেতনার সমৃদ্ধিতে খেমটির চিন্তাভাবনা অপরিসীম । সেটা ঠিক বুঝলাম না ?”
“সায়নদের বাড়িতে যখন জাত-পাতের শোরগোলে খেমটির ঢাক বাজানোতে বিঘ্ন ঘটাচ্ছিলো, তখন সে মনে মনে স্থির করেছে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর লোকসংস্কৃতিতে পি-এইচ-ডি ডিগ্রি নেবে । সিদ্ধান্ত তার পাকা ।“ এই কথাগুলি বলার পরে কুহক আবার বললো, “আরও একটা চিন্তাভাবনা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ?”
“সেটা কী, খুলে বললে সমৃদ্ধ হতাম ।“ ফোকলা চায়ের খালি ভাঁড় নির্দ্দিষ্ট জায়গায় ফেলে কুহকের উত্তর শোনার জন্য মনোযোগ সহকারে কান খাঁড়া রাখলো ।
খেমটি আরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সমকক্ষ কয়েকজন মহিলা নিয়ে একটি মহিলা ঢাকের বাদ্যির দল গড়বে । ঢাক বাজনা সমাজ জীবনে জনপ্রিয় করতে সে আগ্রহী । আর একটা কথা ………?
কী কথা কুহক ?
তুই সমস্ত কিছু শোনার পর নিশ্চয় খেমটির জাত নিয়ে আর প্রশ্ন করবি না । তার এতগুলি চারিত্রিক গুণাবলী অবশ্যই তোর মনে দাগ কাটবে । নিম্ন বর্গীয় মেয়ে হয়ে জন্মালেও তার গুণ যে মর্যাদাসম্পন্ন, সেটা তোর অস্বীকার করার আর জায়গা রইলো না ।
ইতিমধ্যে স্টেশনের প্লাটফর্মে বহরমপুরে যাওয়ার জন্য ট্রেন ঢুকে পড়লো । কুহক ছুটে গিয়ে ট্রেনে উঠলো । অন্যদিকে ফোকলা ফেরার জন্য গোবিন্দোর চায়ের দোকান থেকে বাড়ির দিকে রওনা দিলো । কিন্তু বাড়ি ফেরার রাস্তা দিয়ে চলার সময় ফোকলা খেমটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা ভেবে তাজ্জব ! ঢাকির বাদ্যির দল গড়তে চায় খেমটি । এটা একটা মহত কাজ । আমি তার কর্মকান্ডের প্রতি শ্রদ্ধাশীল । তাছাড়া বায়েন সম্প্রদায়ের মধ্যে সাওতালি নাচটা ভীষণ জনপ্রিয় । সুতরাং মেয়েদের নিয়ে ঢাকের বাদ্যির দল গড়ার সিদ্ধান্ত সময়োচিত ও যথার্থ ।
তারপর ………?
তারপর নদীর পারে বসা থেকে হঠাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে, রাস্তার উপরে খেমটি দাঁড়িয়ে । মিটিমিটি হাসছে ।
নদীর পার থেকে উঠে রাস্তায় খেমটির কাছে পৌঁছে কুহক জিজ্ঞাসা করলো, “কী ব্যাপার ? হঠাৎ আগমন ?”
হঠাৎ আগমনের হেতু বলে দিলে তো সারপ্রাইজের গুরুত্ব আর থাকবে না !
“ব্যাপারটা সেটা নয় । শুনুন ম্যাডাম, হেয়ালী বন্ধ রেখে এখানে আসার হেতুটা প্লীজ জানাবেন ?”
সেটাই তো জানাতে চাই । তার আগে প্রশ্নের শেষ নেই ।
“আমার প্রশ্ন শেষ । এবার দয়া করে আগমনের হেতুটা জানিয়ে আমাকে উদ্ধার করলে ধন্য হই ।“ কুহক উত্তর শোনার জন্য উদগ্রীব । অনেকদিন আগে থেকেই তাদের উভয়ের মধ্যে কথাবার্তায়, আলাপ-আলোচনায় “তুমি” সম্মোধন পাকাপাকিভাবে বাসা বেঁধেছে । যারজন্য তারা এখন তুমি শব্দটা ব্যবহারে যথেষ্ট সাবলীল ।
এম-এ রেজাল্ট বের হয়েছে ।
“রেজাল্টের খবর কী ?” সব ভুলে কুহক এখন রেজাল্টের খবর শোনার জন্য ছটফট করতে থাকলো ।
প্রথম শ্রেণী ।
“অভিনন্দন !” হাতটা বাড়িয়ে দিলো খেমটির দিকে । খেমটি কুহকের হাতটা চেপে ধরে আরও বললো, “একটুর জন্য প্রথম শ্রেণিতে প্রথম সম্ভব হয়নি, তবে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান ।“
খুশীতে কুহক ভরপুর । আনন্দের উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা । তার এতক্ষণের দুশ্চিন্তার অবসান । খেমটির স্নাতকোত্তর রেজাল্টের খবরে কুহক উল্লসিত । তার মনের ভিতর ঝড় । তখনও খেমটির হাতটা কুহকের হাতে ধরা । কিছুতেই খেমটির হাত ছাড়তে নারাজ কুহক ।
ইত্যবসরে কুহকের মা কুহককে খুঁজতে গুটিগুটি পায়ে নদীর তীরে ঠিক উপস্থিত । সেই কখন বাড়ি থেকে মনোক্ষুন্ন হয়ে ছেলে বের হয়ে এসেছে অথচ বাড়ি ফেরার নাম নেই । সেইজন্য কুহকের মা ছেলের তল্লাসিতে সোজা নদীর পারে এবং খুঁজতে খুঁজতে তিনি যথাসময়ে নদীর তীরে হাজির ।
কুহকের মাকে দেখতে পেয়েই খেমটি তার হাত ছাড়াতে ছটফট । কুহকের হাত থেকে নিজের হাত সরাতে তার মরিয়া প্রয়াস । কিন্তু খেমটির যতোই তার হাত ছাড়াতে চেষ্টা, ততোই কুহক খেমটির হাত শক্ত করে চেপে ধরছে । কিছুতেই ছাড়তে চাইছে না । কুহকের হাত না ছাড়ার পরিস্থিতি অনুধাবন করে খেমটি চোখের ইশারায় বোঝাতে চাইলো তার পেছনে কেউ এসেছে । তাতেও কুহক পূর্বাপরন্যায় । তাই বাধ্য হয়ে কুহকের মায়ের দিকে তাকিয়ে এক গাল হাসি হেসে খেমটি বললো, “কাকীমা, আপনি কেমন আছেন ? আপনার শরীর এখন কেমন ?”
কুহক সঙ্গে সঙ্গে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে তার মা স্বয়ং দন্ডায়মান । খেমটির হাত ছেড়ে দিয়ে মাকে দেখেই উৎফুল্ল চিত্তে কুহক বললো, “জানো মা, খেমটি এম-এ পরীক্ষার রেজাল্টে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে ।“ স্পষ্টতই মায়ের চোখ দুটি আনন্দে বিহ্বল । তিনিও হাসি মুখে বললেন, “বাঃ ! খুব ভাল খবর । রেজাল্টের খবরে আমি ভীষণ খুশী ।“ খেমটির মাথায় হাত রেখে কুহকের মা আরও বললেন, “ঈশ্বর তোমাকে মঙ্গল করুন । তুমি আরও বড় হও ।“
তারপর আবার খেমটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “এরপর কী করবে মা ?”
ভাবছি লোক সংস্কৃতির উপর পি-এইচ-ডি করবো ।
সঙ্গে সঙ্গে কুহক মাকে জানিয়ে দিলো, “গবেষণা করাটা খেমটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে । বাংলার লোকসংস্কৃতি সম্বন্ধে খেমটির আগ্রহ যথেষ্ট ।“
কুহকের মা শান্ত অথচ মিষ্টি ভাষায় বললেন, “তোমার প্রয়াসের প্রতি আমার আশীর্বাদ রইলো । তুমি তোমার নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়েছো এটা শুনে আমি যারপরনাই আনন্দিত । আজকালকার মেয়েরা তোমার মতো চটজলদি সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি করে, নতুবা তারা সিদ্ধান্ত নিতে অন্তত সাতবার ভাবে । সহজে সিদ্ধান্তে আসতে পারে না । ভবিষ্যৎ গঠনে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা যেমন সাহসিকতার প্রয়োজন, ঠিক তেমনি আত্মবিশ্বাসও দরকার । এই রকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে তুমি লোকসংস্কৃতির উপর গবেষণা করতে চাইছো সেটা এক কথায় প্রশংসনীয় ।
খেমটি এগিয়ে গিয়ে কুহকের মাকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো ।
প্রণাম করতে হবে না মা । তোমার প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস, তুমি সবদিক বজায় রেখে নিজের লক্ষ্য পূরণে সম্পূর্ণ অটল থাকবে । আমার আশীর্বাদ সর্বক্ষণের জন্য রইলো । তারপর খানিকটা মাথা চুলকিয়ে চিন্তিত মুখে বললেন, “আমি ভাবছি অন্য কথা ?”
“কী কথা, কাকীমা ?” কৌতুহলি দৃষ্টিতে খেমটি জিজ্ঞাসা করলো । তারপর খেমটি কুহকের মায়ের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো, তিনি কী উত্তর দেন সেটা শোনার জন্য ।
তোমাদের মেলামেশা নিয়ে আমার ভীষণ চিন্তা !
কেন ? কোনো সমস্যা কাকীমা ?
সমস্যা তো বটেই ! কুহকের বাবা চান না তাঁর একমাত্র ছেলে বায়েনদের মেয়ের সাথে মিশুক । তিনি শিক্ষা-দীক্ষার গুরুত্ব দেন না, তাঁর কাছে পারিবারিক পরিচয় ছেলের বিয়ের ক্ষেত্রে মূল চাবিকাঠি । তাই তোমাদের মেলামেশাটা তাঁর সম্পূর্ণ ইচ্ছাবিরুদ্ধ । এই মেলামেশাকে কেন্দ্র করে খাওয়ার টেবিলে বাপ-বেটার মধ্যে তুমুল অশান্তি । তার জন্যই ছেলের এত গোসা । নদীর ধারে এক রাশ বেদনা নিয়ে নদীর ধারে এতক্ষণ বসে নদীর জলের দিকে তাকিয়ে নানান ওলট-পালট চিন্তায় আবদ্ধ ছিলো । তুমি আসার পরে আমার গুণধর ছেলের স্বাভাবিক জীবনে হুঁশ ফিরেছে । আমি তো এখানে কুহককে খুঁজতে এসেছি । নতুবা আমার এখানে আসার কথা নয় । আমি তো জানি, আমার ছেলের গতিবিধি । রেগে গেলে বা কোনো কারণে মনের ভিতর অজানা অশান্তির বাসা বাঁধলে সে সোজা ফাঁকা জায়গায় নদীর পারে এসে বসে । নদীর জলের দৃশ্যই তাকে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে দেয় ।
খেমটি কী বলবে বুঝতে না পেরে একবার কাকীমার দিকে আর একবার কুহকের দিকে তাকাতে থাকে । এসব কথা শোনার পর খেমটির কী করণীয় সে বুঝে উঠতে পারছে না ।
খেমটির অস্থিরতা অবলোকন করে কুহকের মা খেমটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “হতাশ হবে না মা । তোমাদের পাশে আমি সর্বদা রয়েছি ।“
কুহক মায়ের কাছে জিজ্ঞাসা করে, “বাবা কী করছেন ?”
কুহকের মা আবার বললেন, “তোমার বাবা তোমাদের সম্পর্ক কোনোদিন মেনে নেবেন না । তিনি গাঁয়ের মোড়ল । গাঁয়ের মানুষের কাছে তাঁর মানসম্ভ্রমের ব্যাপার ! পাঁচটা মানুষে পাঁচরকম বেফাঁস কথা বলবে, সেটা তিনি শুনতে নারাজ । কিন্তু তাঁকে কিছুতেই বোঝানো যাবে না, আজকের দিনে জাতটা বড় জিনিস নয়, বড় জিনিস হচ্ছে মনের মিলন । যাকে বিয়ে করা হচ্ছে তার মানসিক স্থিতি, শিক্ষা-দীক্ষা, মনুষ্যত্ববোধ কতোটা……! উভয়ের ভালবাসার বন্ধন কতোটা মজবুত, কতোটা দড়, এইসব দেখা !
“আমি ভাবছি অন্য কথা !” কুহক মায়ের উদ্দেশ্যে হঠাৎ বললো ।
“অন্য কথা কী ভাবছো, বাবা ?” মা জানতে চাইলেন ।
ভাবছি, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাবার সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারে আলোচনায় বসবো ।
“সেটা তো অবশ্যই । পায়ের তলার ভিত শক্ত না হলে অর্থাৎ নিজের পায়ে না দাঁড়াতে না পারলে তোমাদের এই মিষ্টি মধুর সম্পর্কের রাশ বেশীদিন টানতে পারবে না ।“ কুহকের মা কুহককে ও খেমটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন ।
তারপর কুহকের মা বাড়ি ফিরে গেলেন । অন্যদিকে কুহক ও খেমটি বায়েন পাড়ায় খেমটিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো ।
খেমটির বাবার শারীরিক পরিস্থিতি ভাল না বরং ক্রমশ অবনতির পথে । শরীর ভীষণ দুর্বল । ডাক্তারী চিকিৎসা এবং ডাক্তারের নির্দেশ মতো নিয়মিত ঔষধ চলছে । ইতিমধ্যে ডাক্তার বাবু কিছু রক্ত পরীক্ষা, ই-সি-জি, টি-এম-টি, ইত্যাদি করতে দিয়েছেন । সেগুলির রিপোর্ট পেলে ডাক্তার বাবু আরও পরিস্কারভাবে রোগটার সাতকাহন বুঝতে পারবেন । তবে তাঁর কাশি সারছে না । বুকে কফ্‌ জমে । রোগের লক্ষণগুলি দেখে ডাক্তার বাবু প্যাথোলজিক্যাল টেস্টগুলি সত্বর দেখতে চাইছেন । বেশ কিছুদিন খেমটির পড়াশুনার জন্য ঢাকের বায়না নেওয়া বন্ধ ছিলো । ফলে শিবু বায়েন অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রয়েছে । কিন্তু অন্য কাজকর্ম তার শিকেয় উঠেছে । নিজের অসুখে শিবু বায়েন চূড়ান্ত নাজেহাল ! তার রোগের নিরাময়ের জন্য বাড়ির সকলে উতলা ।
শিবু বায়েন খেমটি ও কুহককে একসঙ্গে দেখতে পেয়ে ঘর থেকে হাতল ছাড়া কাঠের চেয়ার বের করে কুহকের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, “বসো কুহক ।“
“আমার বসা নিয়ে আপনি অযথা নড়াচড়া করবেন না । আপনার শরীর প্রচন্ড দুর্বল । এই সময় আপনাকে খুব সাবধানে থাকতে হবে ।“ কুহক শিবু বায়েনের দিকে তাকিয়ে তার শারীরিক সুস্থতার প্রেক্ষাপটে কথাগুলি বললো ।
“এইটুকু করাতে আমার কষ্ট নেই বরং আনন্দের । শরীরটায় নড়াচড়া পড়লে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে ।“ শিবু বায়েন উত্তর দিয়ে অনেকটা হাল্কা ।
তারপর খেমটির দিকে তাকিয়ে বললেন, “বাছাধন বাড়িতে এসেছে । একটু আদা দিয়ে চা বানিয়ে খাওয়া ।“
“তুমি কী চা খাবে বাবা ?” বাবার চা খাওয়ার ইচ্ছা বুঝতে পেরে খেমটি বাবাকে জিজ্ঞাসা করলো ।
শিবু বায়েনের সপ্রতিভ উত্তর, “অবশ্যই চা খাবো মা । তবে আমার চায়ে চিনি খুব কম ।“
খেমটির মা কুহককে দেখতে পেয়ে ছুটে এসে অভিযোগের সুরে বললো, “তুমি অনেকদিন পরে আমাদের বাড়ি এলে বাবা ।“ একটু থেমে পুনরায় কুহকের দিকে তাকিয়ে খেমটির মা বললো, “মেয়েটা তো আরও পড়তে চায় ! এই ব্যাপারে তোমার কী মত ?”
“উচ্চ শিক্ষা অর্জন নিঃসন্দেহে ভাল ব্যাপার । বলা চলে খেমটির পড়াশুনার আকাঙ্ক্ষা খুবই প্রশংসনীয় । পড়তে চাইছে, পড়ুক্‌ । পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া ভাল লক্ষণ । আমি নিজেও চাই, খেমটি পড়াশুনায় আরও উন্নতি করুক । ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে যে কোনো চাকরিতে যোগ দিক্‌ ।“ কুহক তার মতামত জানালো ।
শিবু বায়েন এবার কুহককে বললো, “তুমি তো জানো, আমাদের আর্থিক সঙ্গতি ! কিভাবে পড়াশুনার খরচ বহন করবো এটাই আমাদের দুশ্চিন্তা । “
কুহক আস্বস্ত করে শিবু বায়েনকে বললো, “খেমটি বুদ্ধিমতী মেয়ে । আর তাছাড়া সে ভীষণ পরিশ্রমী । তার কর্মঠ শরীর । সুতরাং সে নিজের পড়াশুনার খরচ নিজেই জোগাড় করতে ষোলোআনা সমর্থ । খরচা নিয়ে অযথা উতলা হবেন না । আমি তো রইলাম খেমটির পাশে । আমি চাই, গাঁয়ের গরীব ঘরে জন্ম নিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজে একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তৈরী করুক ।“
“তুমি আমাদের মেয়ের পাশে রয়েছো, এটাই আমাদের ভরসা ।“ খেমটির মা কথাগুলি বলে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো ।
খেমটির মায়ের কথাগুলি শুনে কুহক চুপচাপ । বুঝতে পারছে, খেমটির উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সে পাশে রয়েছে বলেই খেমটিদের বাড়িতে সকলে নিশ্চিন্ত ।
“চুপচাপ কেন কুহক ?’ শিবু বায়েন কুহকের দিকে তাকিয়ে বললো ।
চুপচাপ কোথায় ? সমানে আমি আপনাদের সঙ্গে বকবক করছি । কাকীমার কথাগুলি শুনছিলাম আর ভাবছিলাম ।
“কী ভাবছিলে বাবা ?” শিবু বায়েন জিজ্ঞাসা করলো ।
কাকীমার কথা বলার বাচনভঙ্গির সঙ্গে আমার মায়ের ভীষণ মিল । দুজনেরই কথাবার্তা মার্জিত । বাস্তব চিন্তাভাবনায় জীবনযাপন । দুজনেই অত্যন্ত সন্তান স্নেহপরায়ন ।
ততক্ষণে চা ও নোনতা বিস্কুট হাজির ।
তাদের সামনে চায়ের ট্রে নামিয়ে রাখার সাথে সাথেই কুহক খেমটির দিকে তাকিয়ে বললো, “আমাকে এক গ্লাস জল দেবে প্লীজ ? বড্ড তেষ্টা পেয়েছে ।“
“এক মিনিট ।“ বলেই খেমটি খাওয়ার জল আনতে ঘরের ভিতর ছুটলো ।
চা পর্ব শেষ । কুহক বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরী । ঠিক সেই সময় খেমটির বাবা কুহককে বললো, “তোমাদের একসঙ্গে মেলামেশা দেখে গাঁয়ের পাঁচজনে পাঁচ কথা শোনাচ্ছে । তাঁদের মতে, আমরা মিথ্যে ব্রাম্মণ বাড়ির ছেলের জন্য হা-পিত্যেশ করছি । কুহক যতোই খেমটিকে ভালবাসুক, দুজনের বিয়ে কোনোদিন সম্ভব না । বামুন আর বায়েনের মিল অসম্ভব !”
খেমটি বাবাকে ধমক দেয়, “এসব কথা তুমি কুহককে শোনাচ্ছো কেন ?”
“আমাকে ধমকাচ্ছিস্‌ কেন ? গাঁয়ের মানুষের চতুর্দিকে ফিসফিসানি । তাঁরা যেটা বলে বেড়াচ্ছে, সেটাই কুহককে বলছি । এতে তুই আহাম্মকের মতো রাগছিস কেন ?” তারপর আবার কুহকের দিকে তাকিয়ে খেমটির বাবা পুনরায় বললো, “বাবা, আমরা তোমার উপর অগাধ আশা ভরসা রাখছি । তোমার উপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা । সুতরাং আমাদের ভরসার মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখো ।“
কুহক শিবু বায়েনের কথায় মাথা নেড়ে “হ্যাঁ” সম্মতি জানিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য রাস্তায় উঠে….লক্ষ্য করলো, তার বাবা খেমটিদের বাড়ির দিকে ধেয়ে আসছেন । মুখটা গম্ভীর । কুহক আরও লক্ষ্য করলো, তার বাবা সাধারণত যে গতিতে রাস্তা দিয়ে সচরাচর হাঁটেন তার চেয়ে বরং বেশী গতিতে তাঁর হাঁটার গতি । চোখে মুখে রাগের ছাপ স্পষ্ট । হাঁটবার সময় তিনি রাস্তার এপাশ ওপাশে তাকাচ্ছেন না । তাঁর দৃষ্টি সোজা ! ব্যাপারটা কুহকের মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না, এমন অসময়ে বাবার হঠাৎ আগমনের হেতু কী ? তাই রাস্তা দিয়ে ঐভাবে হন্তদন্ত হয়ে বাবাকে হাঁটতে দেখে অবাক ! বাবার হাঁটার গতি ও গম্ভীর মুখ দেখে কুহক বিচলিত । ভ্যাবাচ্যাকার ন্যায় কুহক বাবার হাঁটার দিকে তাকিয়ে । সে বরং কিংকর্তব্যবিমুঢ় । তবুও “বাবার ভাবগতিক সন্দেহজনক” কুহকের সেটা স্পষ্ট । সে ভালভাবে বাবাকে জানে । নিশ্চয়ই কোনো মন্দ মতলব নিয়ে তাঁর বায়েন পাড়া আগমন এবং সেটা সম্ভবত খেমটিকে কেন্দ্র করেই । তবে কী শিবু বায়েনকে শাসাতে তাঁর এদিকে ধাওয়া ।
এর পূর্বে কুহককে শিবদাস মোড়ল শুনিয়েছেন, “তুই যদি মেয়েটার সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ না করিস্‌ তবে শিবু বায়েনকেই আমি শায়েস্তা করে ছাড়বো । তার এত সাহস বামুনের ছেলের দিকে তার মেয়েকে লেলিয়ে দেওয়া !”
কুহকের মনে বাবার ঐ কথাগুলি ঘুরপাক খাচ্ছে । তবে কী বাবা সত্যি সত্যিই শিবু বায়েনকে শায়েস্তা করতে চান ! সেই কারণে কুহক রাস্তা থেকে সে এক পা নড়ছে না, এমনকি এক পা পিছোচ্ছেও না । খেমটির বাবার প্রতি সেরকম অভাবনীয় কিছু ঘটনা কুহকের বাবা ঘটালে, কুহকের দায়িত্ব সেটা সামলানো । শিবু বায়েনের সম্ভ্রম রক্ষা করা । জাতিতে তারা যতো নীচুই হোক, শিবু বায়েনের মেয়ে খেমটিকে সে হৃদয় দিয়ে ভালবাসে । খেমটিকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছে । সুতরাং তার অন্তরের সংঘটিত স্বপ্ন ঘর বাঁধার প্রারম্ভেই বিনষ্ট হতে দেওয়ার পক্ষপাতী কুহক অন্তত নয় । কুহক তার মনকে শক্ত করলো । তার সামনে ভয়ংকর পরীক্ষা ! একদিকে জন্মদাতা বাবা, আর অন্যদিকে তার ভালবাসার আপনজনের মান সম্ভ্রম রক্ষা করা ।
শিবদাস মোড়ল এমনভাবে জোরে হাঁটছেন মনে হচ্ছে রাস্তার আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাউকেই এমনকি কুহকেও দেখতে পাচ্ছেন না । নিমেষের মধ্যেই কুহককে ছাড়িয়ে সোজা শিবু বায়েনের বাড়ির দোরগোড়ায় ।
“শিবু ঢাকি বাড়িতে আছো ?” শিবদাস মোড়ল খেমটিদের বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে ডাকছেন ।
“বাবা বাড়িতেই রয়েছেন ।“ খেমটি ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে মোড়লকে বললো । তারপর কুহকের বাবার দিকে তাকিয়ে খেমটি বিনীতভাবে বললো, “কাকাবাবু, আপনি ভিতরে এসে চেয়ারটায় বসুন ।“
“আমি বসতে আসিনি । শিগগির বাবাকে ডাকো ।“ শিবদাস মোড়লের কর্কশ আওয়াজ !
“এক মিনিট ! আমি বাবাকে ডেকে দিচ্ছি ।“
ভিতর থেকে শিবু বায়েন অসুস্থ শরীরে বের হয়ে মোড়লের সামনে হাজির হোলো । তারপর কাচুমাচু হয়ে হাত জোড় করে বললো, “মোড়ল মশাই, ভিতরে আসুন । আমাদের পরম সৌভাগ্য, আপনার মতো মহান মানুষের পায়ের ধুলো আমাদের গরীবের বাড়ি পড়েছে ।“
চোখ গরম করে তেজি গলায় শিবদাস মোড়ল চিল্লিয়ে বললেন, “তুমি নিজেকে কী ভাবো ? খবর পাঠিয়েছিলাম, অথচ তুমি দেখা করার প্রয়োজন মনে করলে না ? শিবদাস মোড়লের ডাক দেওয়াকে বরং তুমি জেনেশুনে ইচ্ছাকৃতভাবে তুচ্ছ হিসাবে উড়িয়ে দিচ্ছো ! তোমার আস্পর্ধা দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি ! তোমার ন্যক্কারজনক ব্যবহারে আমি হতাশ !”
“ছি ছি । এসব আপনি কী বলছেন মোড়ল মশায় । আমার শরীর ভাল না । পুরোপুরি শয্যাশায়ী । এতদিন হাঁটাচলা বন্ধ ছিলো । গতকাল থেকে আমার শরীরটা তুলনামূলকভাবে একটু ভাল । আমার চিন্তাভাবনার মধ্যেই ছিলো, আগামীকাল নতুবা আগামী পরশু আপনার সাথে দেখা করতাম । আপনি গাঁয়ের মোড়ল, তাই আপনার দেওয়া ডাক উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই ।“ শিবু বায়েন আত্মপক্ষ সমর্থন করে কথাগুলি বললো ।
“আমার সঙ্গে দেখা করলে আমাকে এভাবে ছুটে আসতে হোতো না ।“
আবার নতজানু হয়ে শিবু বায়েন শিবদাস মোড়ল কে বললো, “এবার আপনি এখানে আসার হেতু জানালে আমি অবগত হতে পারতাম ।“
“তোমার মেয়েকে অন্যত্র বিয়ের ব্যবস্থা করো । আজকের পর থেকে তোমার ছোট মেয়ে আমার ছেলের সাথে মিশলে আমি গ্রামে বিচার সভা ডাকবো । সেদিন কিন্তু তোমার স্বপক্ষে বলার কাউকে পাবে না । ফলে পরিস্থিতি এমন হোতে পারে, তোমাদের গাঁয়ে টিকে থাকা ভীষণ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে ! এবার ভেবে দেখো, তুমি কী করবে ?” শিবু বায়েনকে একরকম হুমকি দিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়িয়েছেন শিবদাস মোড়ল, ঠিক সেই সময় খেমটি কুহকের বাবাকে ডাকলেন, “কাকাবাবু শুনুন ।“
“আমাকে অযথা বিরক্ত কেন ?” রাগান্বিত মুখে খেমটির দিকে তাকিয়ে শিবদাস মোড়ল বললেন ।
“বলছি, আপনি নিজেকে ডাক্তার দেখান । তাহলে আপনার হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আসবে । খামোখা আপনি উত্তেজিত হচ্ছেন । আমি যেমন কুহককে ভালবাসি, তেমনি কুহক আমাকে পাগলের মতো ভালবাসে । সুতরাং আমাদের সম্পর্ক নিয়ে আপনাকে মাথা না ঘামালেই মঙ্গল ।“
“আমার ছেলের ভাল-মন্দের ব্যাপারে আমি মাথা না ঘামালে কে মাথা ঘামাবে শুনি ? আর তুমি দেখছি, বড়দের উপর দিয়ে বেশরমের মতো কথা বলতে শিখেছো । এটা কী ধরণের শিক্ষা ?” সরাসরি আক্রমন করে শিবদাস মোড়ল খেমটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন ।
আমরা দুজনেই প্রাপ্ত বয়স্ক । সুতরাং নিজেদের জীবনের ভাল-মন্দ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে নিজেরাই পরিপক্ক । তাই আমার পরামর্শ, আমাদের ব্যাপারে অযথা টেনশন নিয়ে রক্তচাপ বাড়াবেন না ।
গাঁয়ে আমি বিচার সভা ডাকছি, সেখানেই সাব্যস্ত হবে আমার ছেলেকে উস্কানির কী জ্বালা !
শিবদাস মোড়ল কখনই ভাবতে পারেন নি, তাঁর মুখের উপর শিবু বায়েনের ছোট মেয়েটা ঝামা ঘষে দেবে । রাগে গজরাতে গজরাতে মুখে একবার উচ্চারণ করলেন, “হুম !” তারপর তাঁর চটজলদি স্থান ত্যাগ ।
এতক্ষণ সমস্ত ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলো কুহক নিজে ।
শিবু বায়েন খেমটির মাথায় হাত দিয়ে ছলছল চোখে মেয়েকে বললো, “মা, তুমি যে বড় হয়েছো আজ সেটা আমি হাড়ে হাড়ে টের পেলাম ।“
“তোমরা সমস্ত হজম করে যাও, তার জন্যেই শিবু মোড়লের মতো মানুষেরা তোমাদের মাথার উপর ছড়ি ঘোরায় । ব্লাকমেল করে । বিনা করণে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তোমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে । তাই তোমাদের এবার ফোঁস করার সময় এসেছে । চুপ থাকলেই বরং পদে পদে বিপদ । একটু গভীরে ভাববে বাবা, বায়েন সম্প্রদায়ের হলেও আমরা সমাজের আর দশটা মানুষের মতো মানুষ । সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকার আমাদেরও রয়েছে ।“ এতগুলি কথা একসঙ্গে বলার পর খেমটির শরীরে কেমন যেনো অস্থিরতার হাসফাঁস ।
অন্যদিকে পথে কুহককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খেমটির মা ডাকলেন, “ঘরে এসো বাবা ।“ (  চলবে )

sobkhabaradmin

Website:

Related Story
Featured উত্তর বাংলা দেশ বিবিধ মালদা রাজ্য লাইফস্টাইল
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মালদায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজ এবং খুনখারাবি ঠেকাতে জেলা পুলিশে আরও একটি নতুন পোস্টের অনুমোদন দিল রাজ্য সরকার।
sobkhabaradmin May 23, 2025
Featured উত্তর বাংলা দেশ বিবিধ মুর্শিদাবাদ রাজ্য লাইফস্টাইল
আবারো সামশেরগঞ্জ বিধায়কের মানবিক মুখ, বেতবোনা গ্রামের অতিগ্রস্ত মানুষের পাশে বিধায়ক আমিরুল ইসলাম।
sobkhabaradmin May 23, 2025
Featured দক্ষিণ বাংলা দেশ পূর্ব মেদিনীপুর বিবিধ রাজ্য লাইফস্টাইল
পাঁশকুড়ার শিশু মৃত্যুর ঘটনায় যথেষ্ট উত্তপ্ত পাঁশকুড়া।ঘটনার মুহূর্তের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে, ফুটেজের প্রেক্ষিতে অভিযোগ অস্বীকার সিভিকের পরিবারের, সিভিকের কঠিন শাস্তির দাবি নাবালকের পরিবারের,ঘটনায় এখনো গ্রেফতার ৬ জন।
sobkhabaradmin May 23, 2025
Featured উত্তর বাংলা কৃষি খবর কোচবিহার পোল্ট্রি ফার্মিং বিবিধ রাজ্য
দুর্গ‌ন্ধে অতিষ্ঠ গ্রামবাসীরা বয়লারের খামার বন্ধের দাবিতে সোচ্চার।
sobkhabaradmin May 23, 2025
Featured দক্ষিণ বাংলা দেশ ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা বিনোদন বিবিধ রাজ্য হাওড়া
ফলহারিণী কালী পূজা ঘিরে শিকার প্রতিরোধে সক্রিয় ‌” ফিউচার ফর নেচার ফাউন্ডেশন “। ‌
sobkhabaradmin May 23, 2025
Featured দক্ষিণ বাংলা দেশ পূর্ব মেদিনীপুর বিবিধ রাজ্য
মা আমি চুরি করিনি, হৃদয়বিদারক সুইসাইড নোট!! চুরির অপবাদেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যা ক্লাস সেভেনের পড়ুয়ার!!
sobkhabaradmin May 23, 2025
Featured উত্তর বাংলা দক্ষিণ দিনাজপুর দেশ বিবিধ রাজ্য
বংশীহারী ব্লকের গাঙ্গুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের নছুয়া পাড়া এলাকায় গতকাল রাতে বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক যুবককের ।
sobkhabaradmin May 23, 2025
Featured আলিপুরদুয়ার উত্তর বাংলা দেশ বিবিধ রাজ্য লাইফস্টাইল
আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডে আগামী ২৯ মে সভা করবেন প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি, তার আগেই ব্যস্ততা তুঙ্গে।
sobkhabaradmin May 23, 2025
Featured উত্তর বাংলা দেশ বিবিধ মুর্শিদাবাদ রাজ্য
লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস কর্মী খুনের মামলায় ৬ জন দোষী সাব্যস্ত, আদালতে যাবজ্জীবন সাজা।
sobkhabaradmin May 23, 2025
Featured দক্ষিণ বাংলা দেশ পূর্ব মেদিনীপুর বিবিধ রাজ্য
পাঁশকুড়ায় চুরির অববাদে শিশু মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার, অভিযুক্ত সিভিকের বাড়ি ভাঙচুর,বিক্ষোভ হটাতে লাঠিচার্জ পুলিশের,উতপ্ত এলাকা।
sobkhabaradmin May 23, 2025

Leave a Reply
Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

YOU MAY HAVE MISSED
Featured উত্তর বাংলা দেশ বিবিধ মালদা রাজ্য লাইফস্টাইল
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মালদায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজ এবং খুনখারাবি ঠেকাতে জেলা পুলিশে আরও একটি নতুন পোস্টের অনুমোদন দিল রাজ্য সরকার।
sobkhabaradmin May 23, 2025
Featured উত্তর বাংলা দেশ বিবিধ মুর্শিদাবাদ রাজ্য লাইফস্টাইল
আবারো সামশেরগঞ্জ বিধায়কের মানবিক মুখ, বেতবোনা গ্রামের অতিগ্রস্ত মানুষের পাশে বিধায়ক আমিরুল ইসলাম।
sobkhabaradmin May 23, 2025
Featured দক্ষিণ বাংলা দেশ পূর্ব মেদিনীপুর বিবিধ রাজ্য লাইফস্টাইল
পাঁশকুড়ার শিশু মৃত্যুর ঘটনায় যথেষ্ট উত্তপ্ত পাঁশকুড়া।ঘটনার মুহূর্তের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে, ফুটেজের প্রেক্ষিতে অভিযোগ অস্বীকার সিভিকের পরিবারের, সিভিকের কঠিন শাস্তির দাবি নাবালকের পরিবারের,ঘটনায় এখনো গ্রেফতার ৬ জন।
sobkhabaradmin May 23, 2025
Featured উত্তর বাংলা কৃষি খবর কোচবিহার পোল্ট্রি ফার্মিং বিবিধ রাজ্য
দুর্গ‌ন্ধে অতিষ্ঠ গ্রামবাসীরা বয়লারের খামার বন্ধের দাবিতে সোচ্চার।
sobkhabaradmin May 23, 2025

Copyright © 2025 | Powered by WordPress | Newsio by ThemeArile