বাংলাদেশের ” লক ডাউনে” বৈশাখী বরণ “।

0
5269

বাংলাদেশের প্রতিবার এবং এবারের ” কোভিড- 19″এর আক্রমনের “পহেলা বৈশাখ ( ১লা বৈশাখ)” নিয়ে কিছু কথাঃ
বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই সুখে- শান্তিতে এবং সম্মানের সাথে নিজ নিজ ধর্ম পালনের সাথে সাথে সামাজিক পারস্পারিক মধুর সম্পর্ক বজায় রেখে বসবাস করছে।

এবার আসি আমাদের ঐতিহ্যবাহী প্রাণের ঐতিহ্য বর্ষ বরণের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে কিছু কথা।

জাতিগত ভাবে আমরা বাঙ্গালি!তাই আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় আমরা সবাই বাঙ্গালি!
আর বাঙ্গালির সব চেয়ে বড় উৎসব হলো – পহেলা বৈশাখ।

এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বাংলার ঘরে ঘরে নতুন আগমনী আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।প্রতি বছর
অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ” মাননীয় প্রধান মন্ত্রির” শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে।এর পরে শুরু হয় সর্ব প্রথমে ” রমনার বট মূলে” ছায়ানটের শিল্পীদের মঙ্গল কামনার সঙ্গীতেরর সুরে সুরে।
এর পড়ে ” চারুকলা ” থেকে বিশাল আয়োজনের মঙ্গল কামনার বিভিন্ন প্রতিক এবং মুখোশের ” মঙ্গল শোভাযাত্রা” বের হয়ে ঢাকা শহর প্রদিক্ষন করে।যদিও জেলা শহর গুলিতেও ছোট করে হলেও একই ভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বাঙ্গালির ঐতিহ্য বিষয় নিয়ে নানা আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে বৈশাখী বর্ষ বরণ উৎসব পালন করা হয়ে থাকে।
অনুষ্ঠানের বিশাল জন অরণ্যে “ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের” অর্থাৎ (প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত) হাজার হাজার ছাত্র – ছাত্রীরা মধুর ক্যান্টিনে ৭১ এর শহীদ ” মধু ” র মূর্তিতে মালা পড়িয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে।এর পরে সারাদিন রাতভর টি,এসসির ” স্বাধীনতার রাজু ভাষ্কর্যের” চার পাশে নানা ধরনের আনন্দের অনুষ্ঠানে বিশ্ব বিদ্যালয় প্রাঙ্গন মুখরিত থাকে।এদিনে সর্ব সাধারণের পদচারণায় ব্যস্ত থাকে বাংলার বুক।

এবার আসি সাজ- সজ্জা বিষয় নিয়ে।

বৈশাখের প্রথম দিনে ধনী- গরীব সবাই নতুন পোষাক পড়ে সাধ্যমত।অনেক গরীব এবং বিভিন্ন এতিমখানা ও ছিন্নমূল মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দে।বৈশাখী বরনে বেশীর ভাগ মেয়ে,শিশু এবং বউয়েরা লাল- সাদা শাড়ি বা পছন্দের পোশাকের সাথে মিলিয়ে মাথায় গাজরা,বেলী ফুলের মালা খোঁপায় বাঁধে। আনেক ফুলের টায়রা পড়ে এবং হাতে কাঁচের রেশমি চুড়ি পরে।ছেলারা পাজামা পাঞ্জাবী অথবা ধুতি পাঞ্জাবি পড়ে।তবে এখন পছন্দের পরিবর্তনের কারণে অনেকই বুটিক হাউজের নানান রংগের ফ্যাসনের পোশাক পড়ে থাকে।

এবার আসি খাবারে ডালা সাজিয়ে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কিছু কথা নিয়ে।

১) এইদিনে সবাই সবার বড়িতে বেড়াতে যায় মিষ্টি , ফল বা উপহার সামগ্রী নিয়ে।কেউ কারো বাড়ি থেকে মিষ্টি বা অন্যান্য খাবার না খেয়ে ফিরতে পারে না।এখন বৈশাখী দিনকে ঘিরে চলে অনেক নিমন্ত্রনেরর অনুষ্ঠান।অনেকে আবার কয়েক পরিবার একসাথে মিলিত হয়ে রান্না, খাওয়া করে নিজেদের মত করে আনন্দ উৎযাপন করে থাকে।

২) সারাদেশ ব্যাপী বাউল গান,ব্রান্ডের গান, খুশির নাচ,গানের অনুষ্ঠানে মানুষ মাতোয়ারা থাকে।

৩) এই দিনে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা সাকালে “গনেশ পূজা

৪) করে অনুষ্ঠানের সূচনা করে থাকেন।এর পরে রীতি অনুযায়ী “হালখাতা” করে থাকেন।

৫) চারিদিকে বৈশাখী মেলা বসে।মেলাতে,খই,বাতাসা,মিষ্টি আর মাটির পুতুল,বাঁশি ও হরেক রকম খেলনা বিক্রি হয়ে থাকে।এমন কি বেদে সম্প্রদায়ের মানুষেরা সাপ খেলা দেখাতে ব্যস্ত থাকে।

এবার আসি মেলা বিষয়ক মূল অর্থনৈতিক বিষয় বিবরণ নিয়ে।

বৈশাখী বরণ করে নেওয়ার অনুষ্ঠানের কেনা -বেচাতে সর্বোচ্চ বেচা- বিক্রি হয়ে থাকে।যা ” ঈদ বা পূজাতেও ” হয় না।এতে করে দেশের অর্থনীতির চাকা সারা বছরের জন্য সচল থাকে।

এবারে আসি ” লক ডাউনের ” বৈশাখী বরণের অনানুষ্ঠানিকতা নিয়ে কিছু কথাঃ

-এবারে করনা” আক্রমনে মৃত্যুর মিছিলে সারা পৃথিবীর থেমে গেছে।লক ডাউনের খাঁচায় বন্দি পৃথিবীর মানুষ। বাংলাদেশেও আজ পর্যনত আক্রান্ত হয়েছে কয়েক হাজার আর এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৭ জন।এতো শোকের মাতমে আন্নদের অনুষ্ঠান মানুষ কখোনই করতে পারে না। তাই আমরা এবারের অান্দের সমস্ত অনানুষ্ঠানিকতা বর্জন করেছি।বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান মুন্ত্রি ” শেখ হাসিনা “তাঁর বৈশাখী ভাষনে তেমনি বলেছেন।আমারা মাননীয় প্রধান মন্ত্রি “শেখ হাসিনার” অাদেশকে মান্য করে ঘরে বসে শুভ কামনা করেছি।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব আমরা মানব জাতি।তাই এবারই প্রথম আমরা বাংলাদেশীরা মানবিকতার পরিচয়ে “বর্ষ- বরণ ” অনুষ্ঠান করছি না।

সব শেষে আমি ” সুরভি জাহাঙ্গীর “ সবাইকে ধন্যবাদ এবং সাবধানতা আর নিরাপদে থাকবার অনুরোধ জানিয়ে শেষ করছি।ভালো থাকবেন অবিরত।