মাউথ অর্গান শিল্পী চয়ন চক্রবর্তীর একান্ত সাক্ষাৎকার।

0
2562

তিনি চয়ন চক্রবর্তী। দূরদর্শন এবং তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের সঙ্গীত ও নাটক বিভাগের শিল্পী । পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষা দলের গর্বিত এই সন্তানের জন্ম হয় এক শৈল্পিক পরিমণ্ডল বেষ্টিত পরিবারে । বাবা সুজিত চক্রবর্তী । মা ছায়া দেবী । মা ও বাবা দুজনেই সঙ্গীত চর্চার সঙ্গে যুক্ত । অসম্ভব পরিশ্রমী, লাজুক, মিতভাষী ও বহু প্রতিভার অধিকারি এ হেন গুনি ব্যক্তিটি জনপ্রিয় একজন মাউথ অর্গানিষ্ট হিসাবে। কিন্তু তাঁর বিশেষত্ব হল তিনি মুখ দিয়ে নয় , নাক দিয়ে মাউথ অর্গান বাজান। ইতি মধ্যেই তিনি টানা ১২ ঘণ্টা নাক দিয়ে বাজিয়ে ‘লিমকা বুক অফ রেকর্ডস বুকে’ নিজের নাম তুলে নিয়েছেন। পরবর্তী লক্ষ্য নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে ‘গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’ এ নাম তোলা। আর সেই লক্ষ্য পূরণে শিল্পীর নিভৃতে চলছে কোঠর অনুশীলন ও সাধনা । আর, এই অসামান্য প্রতিভার মুখোমুখি “সবখবর” এর প্রতিনিধি আমি সুমন কুমার ভূঞ্যা……

প্রশ্নঃ হঠাৎ নাক দিয়ে বাজানোর চিন্তা ভাবনা কেন?
উত্তরঃ অনেক ছোট থেকেই শেখা শুরু করেছি মাউথ অর্গান। আমার গুরুজির নাম শৈবাল সেন। বেশ কয়েক বছর শেখার পর একদিন সকালে রেওয়াজ করার সময় হঠাৎ মাথায় একটা অদ্ভত খেয়াল চাপল। ভাবলাম- মাউথ অর্গান শ্বাস প্রশ্বাসের সাহায্যে বাজানো হয়, আর আমরা তো নাক দিয়েও তা নিয়ে থাকি। তাহলে নাক দিয়ে কেন মাউথ অর্গান বাজানো যাবেনা। সেই দিন থেকেই শুরু করে দিলাম নাক দিয়ে বাজানোর চেষ্টা প্রথম-প্রথম অসফল হলেও টানা প্রচেষ্টার ফলে ধীরে ধীরে তা আয়ত্তে আসে।
প্রশ্নঃ টানা কতক্ষণ বাজাতে পারেন, কত গান আয়ত্তে ?
উত্তরঃ লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে একটানা ১২ ঘণ্টা বাজানোর রেকর্ড করেছি। এর থেকেও বেশি সময় বাজিয়ে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড–এ নাম তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ।

প্রশ্নঃ লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে কত সালে নাম তুলেছেন ?
উত্তরঃ ২০০৮ সালের ৩ আগস্ট।
প্রশ্নঃ সরকারিভাবে কোনো সংবর্ধনা বা শুভেচ্ছা পেয়েছেন ?
উত্তরঃ বেসরকারিভাবে অনেক সংবর্ধনা ও শুভেচ্ছা পেলেও এখনও সরকারিভাবে তেমন কোনো সংবর্ধনা বা শুভেচ্ছা পাইনি । তবে কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য সংস্কৃতি দফতরের ‘সঙ্গীত ও নাট্য’ বিভাগের একজন শিল্পী আমি ।

প্রশ্নঃ ‘গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’-এ জায়গা পাওয়া ভবিষ্যৎ ভাবনা কি রয়েছে ?
উত্তরঃ ইচ্ছে তো রয়েছে এবং তার জন্য প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছি , এরপর সবই ভগবানের হাতে ।

প্রশ্নঃ আপনি তো ভীষণ ব্যস্ত ও প্ররিশ্রমী মানুষ । এত ব্যস্ততার মধ্যেও রেওয়াজে সময় দেন কি ভাবে?
উত্তরঃ আগে প্রতিদিন নিয়ম করে ঘন্টার পর ঘন্টা রেওয়াজ করলেও এখন আর সময়ের অভাবে সেভাবে রেওয়াজ করা হয়ে ওঠে না, তবে ছাত্রছাত্রীদের তালিম দেওয়ার সময়ই অনেকটা রেওয়াজ হয়ে যায় ।

প্রশ্নঃ কতটা অনুশীলন আর সাধনার দরকার একজন ভালো মাউথ অগারনিস্ট হয়ে উঠতে ?
উত্তরঃ তেমন কোনও নির্দিষ্ট সময়ে বলা যাবেনা। এখন ছেলে মেয়েদের হাতে সময় খুব কম। পড়াশুনার চাপ তো আছেই, তার সাথে অনেক কিছু নিয়ে তারা ব্যস্ত থাকে, তাই বলব- যেটুকু সময়ই রেওয়াজ করুক পুরোপুরি মনোযোগ দিয়ে এবং সঠিক পদ্ধতিতে রেওয়াজ করলেই ভালো শিল্পী হয়ে ওঠা যাবে।
প্রশ্নঃ অনেকের একটা ধারণা রয়েছে যে মাউথ অর্গান বাজালে শ্বাস কষ্ট আসতে পারে। এই ধারণা কি ঠিক?
উত্তরঃ আমার মতে এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা । আমি সেই ছোট থেকেই মাউথ অর্গান বাজাচ্ছি । এখনও পর্যন্ত তো কোনো সমস্যা হয়নি এবং অনেক শিল্পী রয়েছেন যারা প্রায় ৫০ বছরেরও বেশী সময় ধরে মাউথ অর্গান বাজাচ্ছেন এবং এখনও দিব্যি সুস্থ আছেন। তাই আমার মনে হয় এটা গুজব ছাড়া কিছুই নয়। আর তাছাড়া আমি কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি, উনারা প্রত্যেকেই বলেছেন যে মাউথ অর্গান বাজানোয় স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর নয়। বরং এটা বাজানোর মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসের ভালো ব্যায়াম হয়।

প্রশ্নঃ অনেক ছাত্র-ছাত্রী উঠে আসছে আপনার হাত ধরে। কি মনে করেন ভবিষ্যতে কেউ আপনার মতন নাক দিয়ে বাজাতে পারবে ?
উত্তরঃ চেষ্টা করলে নিশ্চয় পারবে ।

প্রশ্নঃ পরিবারে একজন ছোট্ট সদস্যা এসেছে। কি নাম তার?
উত্তরঃ হুমম , ঠিকই বলেছ, বছর দেড়েক হল আমার একটি মেয়ে হয়েছে। ওর নাম ঐশীকী চক্রবর্তী ।

প্রশ্নঃ ভবিষ্যতে আমরা কি ঐশীকীকে বাবার মতন মাউথ অর্গান বাজাতে দেখব?
উত্তরঃ সেটা ওর ওপর ছেড়ে দিলাম। শেখার ইচ্ছা থাকলে নিশ্চয় শেখাব।

প্রশ্নঃ- খুব সম্প্রতি আপনি দাদাগিরির মঞ্চ কাঁপিয়ে এসেছেন। দাদার নিজেই আপনার নাক দিয়ে বাজানো শুনতে চেয়েছেন। সেই অনুভূতিটা যদি একটু আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেন।
উত্তরঃ- দাদাগিরিতে অংশগ্রহনের অভিজ্ঞতা খুবই স্পেশাল আমার জীবনে।সৌরভ গাঙ্গুলীর মতো একজন ব্যাক্তিত্ব, যিনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের একজন সফল অধিনায়ক এবং প্রতিটি বাঙালীর নয়নের মনি, ওনার সাথে বেশ কয়েকঘন্টা কাটানোর মুহুর্তগুলি এখনও স্বপ্নের মতো মনে হয়।

প্রশ্নঃ- দাদা (সৌরভ গাঙ্গুলী) আর কি বললেন?
উত্তরঃ- দাদাগিরির শুটিং সেটে সৌরভ গাঙ্গুলীর সাথে কথা বলার বিশেষ সুযোগ থাকে না।তবুও শুটিংএর একদম শেষ মুহুর্তে চ্যাম্পিয়ান হওয়ার পর কিছুক্ষণ উনার সাথে কথা বলার সুযোগ ঘটে যায়। তখন উনি আমার সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করেন। যেমন- আমার বাড়ী কোথায়?আমি কি করি? ইত্যাদি।আমি উনাকে মহিষাদলে আসার আমন্ত্রণ জানাই।
প্রশ্নঃ- আপনার শিল্প জীবনে কোন কোন শিল্পির সান্নিধ্যে এসেছেন?

উত্তরঃ- বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের সূত্রে অনেক সেলিব্রিটি শিল্পিদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ ঘটেছে।তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন–শ্রীকান্ত আচার্য, শিলাজিত, ভূমির সুরজিত ও সৌমিত্র এবং ক্যাকটাসের সিধু ইত্যাদিরা।

প্রশ্নঃ- আপনার সঙ্গীত জীবনের বিশেষ কোন একটি স্মরনীয় মুহুর্ত যদি তুলে ধরেন, যেটা স্মরন করে আজও আবেগ বিহ্বল হয়ে পড়েন?
উত্তরঃ- অনেক স্মরণীয় মুহুর্ত আছে যেগুলি মনে পড়লে আবেগ তাড়িত হয়ে পড়ি, তার মধ্যে একটি হলো বছর পনেরো আগে, কলকাতায় একটি মাউথ বাজানো প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহন করি। আমার পারফর্মেন্সের পরই কলকাতারএকজন খুব নামকরা মাউথ অরগ্যান শিল্পী আমার সাথে এসে আলাপ করেন। এবং আমার বাজানোর খুব প্রসংশা করেন। যা আমাকে খুব অনুপ্রেরনা জুগিয়েছিল।
প্রশ্নঃ- মাউথ অর্গান নিয়ে ভবিষ্যতে সুদূর প্রসারী কোন ভাবনা কি রয়েছে? (গিনিস্ বুকে নাম তোলার ব্যাপারে)
উত্তরঃ- এবছরের আগষ্টে একটানা ১২ ঘন্টা নাক দিয়ে মাউথ অরগ্যান বাজিয়ে লিমকা বুকে নাম তোলার দশ বছর পূর্ণ হবে। ভবিষ্যতে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তোলার লক্ষ্য রয়েছে।কিন্তু সেটা বেশ খরচ সাপেক্ষ। তাই কোনো স্পনসর না মেলায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না।

যদি একটা গান নাক দিয়ে বাজ্য়ে আমাদের সকল দর্শক দের জন্য উপহার দেন, আমরা সবাই নিজেদের অত্যন্ত ভাগ্যবা মনে করব।
এবার কতকগুলো প্রশ্ন করব যে গুলোর এক কথায় উত্তর দিতে হবে।
প্রিয় গায়ক- কিশোর কুমার
প্রিয় গায়িকা-লতা মঙ্গেশকর
প্রিয় অভিনেতা-অমিতাভ বচ্চন
প্রিয় অভিনেত্রী-মাধুরী দিক্ষিত
প্রিয় ক্রিকেটার- শচীন তেন্ডুলকার
প্রিয় ফুটবলার- মেসি
প্রিয় খাবার- অনেক রয়েছে,যে কোনো একটা বলা মুশকিল।
প্রিয় বেড়ানোর জায়গা:- সমুদ্র
ফুচকা, না আইসক্রিম – ফুচকা

ভুতের রাজা তিন বর দিতে চাইলে কি কি চাইবেন? – তিনটে নয়, একটাই বর চাইব, আর সেটা হল – আমার সব ইচ্ছা পূরন করে দিতে হবে।
অসংখ্য ধন্যাবাদ জানাই আপনাকে আপনার অমূল্য সময় আমাদের দেওয়ার জন্য। ভুতের রাজা কি বর দেবে জানি না, তবে ঈশ্বরের কাছে পার্থনা করি আমরা যেন খুব তাড়াতাড়ি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে আপনার নাম দেখতে পাই।  “সব খবর” ওয়েব পোর্টালের এর তরফ থেকে আপনাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here