বইপাড়ার অন্ধকারে আলোর দিশারী এক অগ্নিকন্যা : নির্মাল্য বিশ্বাস।

কলকাতা :- দীর্ঘমেয়াদী লকডাউনের ফলে কলেজস্ট্রিট বইপাড়ার জনজীবনে যখন আঁধার ঘনিয়ে এসেছে তখন সেই অন্ধকারেই আলোর দিশা দেখাচ্ছেন এক অগ্নিকন্যা। ইনি আর কেউ নন ঐতিহ্যশালী মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্সের কর্ণধার ইন্দ্রাণী রায় মিত্র। লকডাউনের মধ্যে বইপাড়ার অভুক্ত মানুষদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছে মিত্র ও ঘোষ প্ৰকাশনা সংস্থা। ইন্দ্রানী দেবীর এই উদ্যোগ সোশ্যাল মিডিয়ায় সবার নজরে আনেন সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ। অজিতেশবাবুর সক্রিয় প্ৰচেষ্টায় বইপ্রেমী বহু মানুষ মিত্র ও ঘোষের এই উদ্যোগে সহায়তা করেছেন। এরই পাশাপাশি গড়পারের অগ্রদূত ক্লাব আর মহাত্মা গান্ধী রোডের রয়্যাল ক্লাব এই উদ্যোগে সামিল হয়েছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বইপাড়ায় তৈরি হয়েছে যৌথ রান্নাঘর বা কমিউনিটি কিচেন, যা বইপাড়ার অভুক্ত মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। প্রতিদিন প্রায় চারশো থেকে সাড়ে চারশো মানুষ দু’বেলা ক্ষুধার অন্ন পাচ্ছেন। শুধুমাত্র বাঁধাইকর্মী, ছাপাখানার কর্মী, ছোট দোকানের কর্মচারী, কিংবা মালবহনকারী দিনমজুররাই নন, এই ব্যবস্থায় উপকৃত হয়েছেন স্থানীয় ভিক্ষুক থেকে শুরু করে কর্মরত পুলিশকর্মীরাও। অভুক্ত মানুষকে খাওয়ানোর এই পরিকল্পনা নিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী দেবীর বাবা বইপাড়ার বটবৃক্ষ সবিতেন্দ্রনাথ রায় ওরফে ভানু বাবু। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করছেন ইন্দ্রাণী দেবী। শুধুমাত্র কর্মসূচি গ্রহণই নয়, নিজে দাঁড়িয়ে থেকে উনি সব কাজ তদারকী করে চলেছেন। এইভাবে করোনার প্ৰকোপে কর্মহীন মানুষের বিপর্যয় যখন অনেকটাই সামলে দেওয়া গেল তখনই আবার আমফানের প্রভাবে জনজীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল। আমাদের সবার প্রিয় বইপাড়া এই বিপর্যয় সামলাতে পারল না। বহু প্রকাশনার বই, লিটিল ম্যাগাজিন জলমগ্ন হয়ে নষ্ট হয়ে গেল। বহু বইয়ের স্টল ভেঙে গেল। ফেসবুকে পোস্ট করা জলে ভিজে নষ্ট হয়ে যাওয়া বইয়ের ছবি দেখে আমাদের চোখও জলে ভিজে গেল। এই অবস্থায় ইন্দ্রাণীদেবী আমফানের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সকল প্রকাশক এবং লিটিল ম্যাগাজিনকে ক্ষতিপূরণ দিতে প্রতিশ্রুতিবব্ধ হয়েছেন। তিনি ইতিমধ্যেই একটি তহবিল গঠন করেছেন এবং জনগণের কাছে সেই তহবিলে অর্থ সাহায্যের আবেদন রেখেছেন। অভাবনীয়ভাবে বহু মানুষ সাড়া দিচ্ছেন এই আবেদনে। প্রাথমিকভাবে স্থির হয়েছে আপাতত একশটি ছোট প্রকাশক এবং লিটিল ম্যাগাজিনের সম্পাদকের হাতে দশ হাজার টাকা করে তুলে দেওয়া হবে।সেই ফান্ডের প্রাপ্ত টাকা ইতিমধ্যেই পঞ্চাশটি সংস্থার কর্ণধারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বাকিদেরও দেওয়ার কাজ চলছে। মিত্র ও ঘোষের বই বিক্রির একটা অংশ লিটিল ম্যাগাজিনের সম্পাদকের হাতে তুলে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে; যা অবশ্যই এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ইন্দ্রাণীদেবীর কথায় ‘বই বিক্রি মানে তো শুধু ব্যবসা নয়, যদি তা জনকল্যাণে না আসে।’ বইপাড়ার হৃত গৌরব আবার ফিরিয়ে দেবার মহৎ প্রচেষ্টায় বহু প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার, লিটিল ম্যাগাজিনের সম্পাদক, লেখক এবং বইপ্রেমী মানুষ সংঘবদ্ধ হয়েছেন, যা আলোর সন্ধান দিচ্ছে সাহিত্য সমাজকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *