ইতি, স্বরলিপি : সৌগত রাণা কবিয়াল।

0
625

স্বরলিপির ব্যাখ্যা চেয়ে রাজদূত পত্র পাঠিয়েছেন..
কালো নিশপিশ করা প্রিয়জনেরা তখনও শুকনো কাঠের খোঁজে…
বাতাসের অপমৃত্যুর উপর তীক্ষ্ণ শকুনের চোখ যেন….!

বৃষ্টিটা এলেই ওর মনে বায়না জমে..
একদিন ভোরে সেই বায়নাগুলো সব এক করে এসে দরজা আগলে দাঁড়ায়..
উদ্রেক চোখের উপর চারুলতা চোখ রেখে বলে,
” আমার কদম কোথায়..?
এই বছরে গুনে গুনে আটাশ দিন হলো মাটি ভিজেছে..
আকাশের মন খারাপের মাস পূরনের আগেই আমার হিসেব চাই..
নইলে নইলে…
আমি কিন্তু একলা হবো..
এই বলে গেলুম তোমায়”…..!

মন জোছনায় একটি নতুন পরী এসেছে..
ছোট ছোট হাতে জামার বোতাম টেনে টেনে গল্প শুনতে চায়…
মুহু, তার যেনতেন গল্প হলে চলবে না..
চাই রাজকুমারীর জিয়নকাঠির গল্প..
কি করে বৈয়ামের ভেতর রাক্ষসের প্রাণ ভরা থাকে…?
বড় বড় চোখ করে পরীটা তার ডানা ঝাপটায়…
তারও যে একটা জিয়নকাঠি রাজকুমার চাই…
ইচ্ছে হলেই সাত আকাশের পথ…..
যেখানে বাঁধা থাকে ঐরাবতের রথ…!

সন্ধ্যা হয়ে এলো বুঝি…
পথের দু’ধারে মানুষের পায়ে ধুলো উড়ে ঘাসফড়িং এর পাখা ঢেকে যায়…
ফেরার পথে বেলি ফুলের মালা হাতে চেনা লোকটা..
আজ ইচ্ছে করেই দুটো বেশী দিয়ে দিলো হাসতে হাসতে..
গিন্নি তোমার স্বামী সোহাগি বটে…
কিন্তু পাঁচ মালা তার খোঁপায় আটে..”?
লোকটাকে কি করে বোঝাই..
পুরুষের জীবনে সব চরিত্রের নারীরই যে তার কাছে বেলি ফুলের মালা পাবে বলে আশায় জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে….!

আজ অতিরিক্ত দুটো মালা তবে কি করি…???
পথের মোর ঘুরলেই একটা ছোট শ্মশান ঘাট..
সেই ঘাটে রোজ সন্ধ্যায় গঙ্গার গায়ে গা এলিয়ে গঙ্গা পুজো করে একজন..
বয়স তা প্রায় দেরশো বছর…
সাদা হাতের কড়ে আঙ্গুলটা খসেছে সময়ের টানে…
কোন এক ইংরেজের মেমসাহেব ছিলেন..
রোজ বিকেলে নৌকো করে সাহেবের সাথে নদী মন্থন করতেন..
আর চারপাশের মানুষেরা হা করে গঙ্গা ময়ুরীর মুখ দেখতো…
শুনেছি একদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ সেই নৌকো টেনে নেয় গঙ্গা মাটি…
তারপর থেকে সাহেব কোম্পানির কাজ ছেড়ে সেই মন্দিরের ঘাটেই বসে থাকতেন দিন রাত..
নিজের হাতে নিজের মানুষের মুখ বানিয়ে ঘাটের সাথে জুড়ে দিলেন..
দুর থেকে দেখলে মনে হবে..
পুজোর কোন মায়ের মুখ..
পুরোটা বিসর্জনের আগের লোকে ফেলে গেছে তাকে…

মালা দুটো তবে আজ তারই থাক…!!

ভোর হয়েছে অনেকক্ষণ…
পাড়ার লোকে ঘুম তখনো গলার আদর..
হরি বোল.. বলো হরি
হরি বোল.. বলো হরি…
একদল লোক ভোরের আজানের সাথে পাল্লা দিয়ে সুর তুলে শ্মশান ছুটছে….
পেছনে পাঁচটি বেলি ফুলের তীব্র গন্ধ…..

টলমলে জলের গায়ে জোয়ার এসেছে..
ওপারে সূর্যের তাজমহল আলো..

সেই তাজমহল আলোয়
মানুষ আর কাঠ ধোঁয়ার মাঝেও কি সুন্দর দেখাচ্ছে মেমসাহেবের গলায় সাদা মালা দুটো….!

“পৃথিবী”
বড় প্রাচীণ এক খেলাঘর..
এই খেলাঘরে ব্রজেশ্বরও বাঁচে..
আবার মহাকাল ও…
এই অমর মহাবিশ্বের সুন্দরতম এক মন্দির….!
বড় সুন্দর..বড় সুন্দর…!