একবার এক বিচিত্র ব্যাপার ঘটলো। প্রভুপাদ যাচ্ছেন নিয়মসেবা মাসে ঢাকায়। পথে ষ্টীমারে নদী পার হতে হত। কিন্তু, ষ্টীমার ছাড়তে একটু দেরী আছে। সন্ধ্যাবেলা তখন। প্রভুপাদ স্থির করলেন , যেটুকু সময় আছে ,সেসময় তিনি সন্ধ্যা আহ্নিকটুকু সেরে নেবেন। ঘাটের কোনেই গঙ্গাপাড়ে একটু নিরিবিলিতে তিনি বসলেন আহ্নিক সারতে। এদিকে ষ্টীমার যাত্রীবোঝাই হয়ে গেল, ছাড়ার সময়ও হয়ে এল প্রায়। প্রভুপাদের সঙ্গী ,ভক্ত দ্বিজেন পন্ডিত মহাশয় তাড়াতাড়ি জানাতে এলেন ষ্টীমার ছাড়ার কথা। এসে দেখলেন , প্রভুপাদের তখনও আহ্নিক শেষ হয়নি। অগত্যা তিনি স্বগোক্তির মত উচ্চকন্ঠে এমন করে বললেন যাতে প্রভুপাদ শুনতে পান , “যাত্রীবোঝাই হয়ে গিয়েছে ষ্টীমার । ছাড়তে চললো। সময় হয়ে গিয়েছে।আর দেরী হলে এই ফেরী বাদ পড়বে । বিপদে পড়বো। ”
কিন্তু, প্রভুপাদের ব্যবহারে কোন ব্যস্ততা চোখে পড়লো না তাঁর। তিনি যেন নির্বিকার চিত্তে যেমন আহ্নিক করছিলেন , তেমনই করে চললেন। দ্বিজেন পন্ডিত চলে গেলেন ষ্টীমারের কাছে। তাঁর চোখের সামনে ষ্টীমারের পাটাতন উঠে গেল। সাইরেন বেজে উঠলো। ষ্টীমারের ইঞ্জিন চালু হয়ে গেল। ষ্টীমার চলা শুরু করে দেবে এবার। কিন্তু, কী আশ্চর্য! ষ্টীমারের চালক যতই চেষ্টা করেন না কেন, ষ্টীমার এক চুলও এগোয় না। সেখানেই দাঁড়িয়ে। এদিকে ইঞ্জিন চলেই চলেছে! এ আবার কী নতুন বিপদ! যাত্রীরা উদ্বিগ্ন। উসখুস করছে তারা। দ্বিজেন পন্ডিতও কান্ডখানা বোঝার চেষ্টা করছেন , কী হল! এমন আবার হয় নাকি! ইঞ্জিন চলছে অথচ, ষ্টীমার গতিহীন। তথৈবচ অবস্থা ।
কিছুক্ষণ পর প্রভুপাদ এলেন। তিনি বললেন, “কী হল ? ষ্টীমার চলছে না বুঝি ! চলবে চলবে , আমি আসিনি বলে দাঁড়িয়ে ছিল । এবার এসে গেছি , দেখবে কেমন চলতে থাকবে। সিঁড়ি নামাতে বলো , গো, ষ্টীমারের!” উঠিয়ে নেওয়া সিঁড়ি আবার নামানো হল। প্রভুপাদ পা রাখলেন ষ্টীমারে । আর তিনি যেই না উঠেছেন , অমনি ষ্টীমার চলতে শুরু করে দিয়েছে।
সকলে ভীষণ অবাক হয়ে গেল এমন অদ্ভুত ঘটনায়। যাত্রীদের অনুধাবন করতে এতটুকুও কষ্ট হল না যে , ইনি একজন সিদ্ধ মহাত্মা । না হলে , এমন অলৌকিক ঘটনা ঘটবে কেন! তাঁকে ছেড়ে যেতে যন্ত্রও নারাজ! ষ্টীমারের চালক পর্যন্ত এসে প্রভুপাদকে প্রণাম জানালেন আর বললেন, “বাবা , আপনি সাক্ষাৎ জীন্দাপীর আছেন।”
ভক্ত-কৃপাপ্রার্থিনী
রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক।
Leave a Reply