রক্তপাত নয়, চাই আরো বেশি রক্তদান জীবনে জীবন যোগ – রক্তদানে পূর্ণ হোক : লিটন রাকিব।

আজকের পৃথিবীতে সর্বত্রই বেজে বলেছে যুদ্ধের দামামা, রয়েছে সন্ত্রাসবাদীদের অতর্কিত হানা। প্রতিনিয়ত নিভে যাচ্ছে হাজারো প্রাণ, লক্ষ -কোটি মানুষ হয়ে চলেছে বিকলাঙ্গ। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু ও দুর্ঘটনাগ্রস্ত প্রাণ সামান্য রক্তের বিনিময়ে অঝরে ঝরে যাচ্ছে। দুনিয়াজুড়ে কতই-না রক্তপাত হচ্ছে। নরঘাতী সেই রক্তপাতের বদলে যদি রক্ত দানের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়া যেত তাহলে বেঁচে যেত বহু মুমূর্ষ প্রাণ!

তবে দুর্ভাগ্যজনক বাস্তব এটাই যে আজও প্রয়োজনের তুলনায় রক্ত অপ্রতুল। এই রক্ত কোনোভাবেই উৎপাদন করা যায় না,তা কেবলমাত্র মানুষের শরীর থেকেই পাওয়া যায়। এক মানুষের রক্তে বাঁচে আর এক মানুষের প্রাণ এজন্যই রক্তদান একটি মহৎকর্ম রুপে সারাবিশ্বে নন্দিত।করনা আবহে রক্তদান অসম্ভব রকম ভাবে হ্রাস পেয়েছে অথচ বেঁচে থাকার জন্য রক্তের কোন বিকল্প নেই। মানুষের শরীরের কোষগুলিতে প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করা রক্তের প্রধান কাজ। শরীরের বজ্র পদার্থ নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। শ্বসন কার্যে প্রশ্বাসের সময় অক্সিজেন দেহের ভিতরে ঢোকে। তাতে রক্ত শুদ্ধ হয় এবং দূষিত রক্ত নিঃশ্বাসের মাধ্যমে নির্গত হয়। শুধুমাত্র শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার নয়, বেঁচে থাকার জন্য রক্ত অপরিহার্য।

রক্তদান সম্পর্কে অনেকের ভ্রান্ত ধারণা, রক্ত দিলে শরীর খারাপ হয়ে যায়। অবিলম্বে এই ধারনার অবসান দরকার। কোন সুস্থ মানুষের শরীর থেকে ২৫০সিসি রক্ত বের করে নেয়ার পর তা পূরণ হতে ৭দিনেরও কম সময় লাগে। প্রতিনিয়ত আমাদের শরীরে নতুন নতুন রক্ত তৈরি হচ্ছে। তাই রক্তদান সম্পর্কে অমূলক ভীতি দূর করে রক্তদানে সচেতনতা বাড়াতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের।
বিভিন্ন কারণে শরীরে রক্তের ঘাটতি দেখা দিতে পারে দুর্ঘটনাজনিত কারণ কিংবা কোন অসুস্থ ব্যক্তির শরীরে রক্ত- উৎপাদন প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটলে বাইরে থেকে রক্ত সেই শরীরে প্রবেশ করানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা।

কোন মানুষের কখন যে অতিরিক্ত রক্তের প্রয়োজন দেখা দেবে তা আগে থেকে বলা যায় না। তাই রক্ত গ্রহণ এবং রক্ত সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। মানুষের রক্ত ছাড়া অন্য কোন প্রাণীর রক্তে মানব জীবনের প্রয়োজন মেটে না। আবার যেকোনো মানুষের রক্ত যেকোনো মানুষের দেহে প্রবেশ করানো যায় না এক্ষেত্রে রক্তের গ্রুপ এ, বি, এবি, ও ( পজিটিভ ও নেগেটিভ) এই গ্রুপ অনুযায়ী নির্ধারিত হয় কোন গ্রুপের রক্ত কোন শরীরে প্রবেশ করানো যাবে সে কারণে রক্ত গ্রহণ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সর্তকতা অবলম্বন আবশ্যক।

সৃষ্টির সেরা মানুষ – শুধু বুদ্ধির জন্য নয়, উদার আকাশের মতো তার হৃদয়ের উষ্ণ স্পর্শ ও পারস্পারিক সহযোগিতার জন্য। আত্মসুখকে পায়ের ভৃত্য করে আত্মত্যাগে মানব জীবনকে সার্থক করে তোলা অন্যের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যেই আছে অপরিসীম শান্তি, অনাবিল আনন্দ ও তৃপ্তি। সে কারণেই হয়তো কবি বলেছেন -“হৃদয়ে কৃপন হয়ে ধনী হতে চায়/সুখ তার দেয় নাকো তাই দুঃখ পায়”
আসলেই এক হৃদয়ের সাথে অন্যহৃদয়ের যোগস্থাপনেই মানবজীবনের সার্থকতা। আত্মকেন্দ্রিকতাকে তুচ্ছ করে মানুষ বৃহত্তর জগতে নিজেকে মেলে ধরতে চায় বলেই সে মহৎ।

একজন মানুষের রক্তে শুধুমাত্র একজনের জীবন বাঁচতে পারে তা নয়; আলাদা আলাদা চারজনের জীবনও বাঁচাতে পারে। এক মানুষের সঙ্গে অন্য মানুষের হৃদয়ের যে সংযোগ তা রক্তদানের মাধ্যমেই পূর্ণতা পাক। ‘জীবনে জীবন যোগ- রক্তদানে পূর্ণ হোক’ এই বানীকে পাথেয় করে আসুন আমরা সকলেই এই মহানব্রতে অংশ নিই, আর অশুভের কালো মেঘ সরিয়ে যা কিছু সুন্দর আর শুভ তাকেই ফিরিয়ে আনি।
রক্তদান একটি মানবিক দায়বদ্ধতা, সামাজিক অঙ্গীকার। আপনার প্রতি ফোটা রক্ত মানবতার জন্য সবচেয়ে বড় এবং সেরা উপহার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *