চির যুদ্ধংদেহী মনোভাবায়ো নমস্তুতে : কমলিকা দত্ত।

প্রত্যেক রাত জানে–
রাজা ও রানীর যুদ্ধ সুনিশ্চিত —
যেখানে অধিকারবোধ সতত প্রজ্জ্বলিত
সেখানে বিনা কলহেতে দিনানিপাতের নামচা!
অকল্পনীয়ই বটে!!
অতএব হোক্ কুরুক্ষেত্রে– সাদর আমন্ত্রণ,
প্রযত্নে দুই যুদ্ধংদেহী হৃদয় —
এবং আমরণ চলা “তুমিই ভুলের” লড়াই…
রাত যত বাড়ে, পিছু হটে যত হাতি ঘোড়া, পদাতিক,
হয় রাজা রানী মুখোমুখি —
চাউনির তীর, দৃঢ় কটাক্ষ, ভ্রূকুটির পরিখায়
শুরু মারমুখী বিনিময়,
ক্রমশ উর্ধ্বমুখী– পরাক্রমের পারদ এবং শ্বাসপ্রশ্বাস
প্রয়োজন অতিরিক্ত — জম-জমাট রণাঙ্গন —
কখনও পেলব ধনুক ছিলায় সুতীক্ষ্ণ শর যোজনা,
কখনও প্রশস্ত ললাট ঘিরে দিগ্বিজয়ের বাসনা–
এখন কোনোক্রমে যদি কপোতীর চোখে অভিমান ঝরে পড়ে,
কোনোভাবেই তা প্রণয় সমরে প্রত্যাশিত তো নয়…
রাজা যতই হোক্ না বীর — প্রতাপশালীর সব হুঙ্কার নিমেষে তরলীভূত —
ঢাল, তলোয়ার সব ফেলে রাজা নত মস্তকে বলে,
অপরাধ,ত্রুটি মানুষ মাত্রে হয়…
রাজ্য হারাক, রানী হারালেই প্রতাপশালীর ভয়…
ব্যস -মহাযুদ্ধ আপাত স্থগিত রাখাই থাক্;
বলিষ্ঠ বাহুর ঘেরাটোপে হয় ধরাশায়ী মহারানী,
তো কখনও-
বাদামী ওষ্ঠ দংশিত হয়ে যুদ্ধবিজয়ী মহারাজ।
পরাজিত রাজা রাজকীয় উল্লাসে
প্রশান্ত মনে অনাবিল হাসে হাসে
গর্বিত চির বিজয়ীনি অখণ্ড রাজ্যপাটের রানী
রাজ্যজোড়া অশান্তি নিভে যায় —
সন্ধি চুক্তি নিমেষে স্বাক্ষরিত
পরাজিত এক সত্যিকারের রাজা
হেরেও জেতার সুখাস্বাদন করে…

বলি, কেনই বা এত যুদ্ধ করার উদ্রগ্র স্পৃহা জাগে?
কেনই বা,এত উচ্ছ্বসিত নিশ্চিত পরাভবে?
ছাড়তে নারাজ সূচাগ্র পরিসরও — আবার সব হারা হতে দ্বিধা মাত্রও নাই।
এত সুতীক্ষ্ণ শর নিক্ষেপে বিদ্ধ করা বা কেন?কেনই বা এত কামান দাগানো আয়োজন?
যখন ধানুকিও এরা নিজেই আর যুদ্ধও সেই অান্তঃরাজ্য জুড়ে?
তবু অহরহ রণদুন্দুভি বাজানো?–উত্তর বড় সহজ
ওখানে অনুভব আজও জীবিত এবং সতেজ–
কোনো অভিমানই নির্লিপ্ততা এখনো মাখেনি গায়ে
প্রতিবেশী দুই হৃদয়কে ওরা বাঁচিয়ে রাখতে চায়
যুদ্ধ ছাড়া কি রাজ্য জয়ের প্রশস্তি লেখা যায়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *