মাতৃভাষার ছায়াপথ : মৃণাল কান্তি পণ্ডিত।

0
381

মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়ে হয়েছি যে বড় হয়েছি সম্পন্ন,
মায়ের অপার স্নেহ মায়ের ভাষায় গেঁথেছি তাই কতশত স্বপ্ন।
বাংলা তাই বাঙালির মাতৃভাষা রোজকার মান,
এই ভাষাতেই বিশ্বকবির জগৎজোড়া সম্মান।
এই ভাষাতেই পাহাড় নদী অবেলায় নির্ঝর চঞ্চল,
জলপ্রপাতের লহড়ীয়া কথাকলি উত্তল উচ্ছল।
বনবীথিকার রুদ্রবীণায় কলকল্লোল বিজন স্মৃতির ভোর,
গ্রাম বাংলার মেঠো পথে লালন ফকির বাউল গানের সুর।
মাঠে মাঠে সবুজ ফসল পাহাড়িয়ায় মধু-অলির গুঞ্জন,
গল্প-গানে ছুঁয়ে থাকা জীবনানন্দ নজরুল কূজন।
এই ভাষাতেই শিশির ঘাসে প্রেমিকা করে পায়চারি,
ইচ্ছেরা করে প্রভাত ফেরী বাতাসে বহে লহরি।
বন্ধ দরজায় যখন তখন মেঘ-পিওন করে ডাকাডাকি,
নিজের ভাষায় কথা বলার নেইকো কোন তাঁবেদারি।
বাঙালি আর বাংলাভাষা তাইতো মহাকালের বরাভয়,
আছড়ে পড়া অজানা ঢেউয়ের সন্তাপ সমাশ্রয়।
মাতৃভাষার ছায়াপথে জ্বেলে প্রদোষ জ্ঞাপন আলো,
একুশ তাই জেগে ছিল সরিয়ে দিতে পথের যত কালো।
মুছে যাবে লাঞ্ছিত শোক সব ব্যথা গর্জে উঠা সংগ্রামে,
রাত-পাহাড়ার পাখিগুলো হলো তাই জাগ্রত নিভৃতে আপন ধামে।
নিঝুম রাতের স্বপ্নে মোড়া যৌবনের নিভু নিভু সন্দীপ,
জ্বললো তাই মশাল হয়ে ভাষা আন্দোলনের প্রদীপ।
রফিক বরকত জব্বার শফিউর সালাম– আরো শত শত শহীদের রক্তে,
ঢাকার রাজপথ হলো রঞ্জিত পাক-হায়েনাদের নির্বিচার গুলিতে।
অবশেষে ৫২’এর ২১-শে ফেব্রুয়ারি পেলো ভাষার স্বাধীনতা,
অর্জিত হলো ভাষার স্বীকৃতি বাঙালি পেলো মাতৃভাষায় কথা বলার মান্যতা।
রইলো পড়ে কিছু আড়মোড়া হৃদয়ের নীরব কথা,
মায়ের আগুন জ্বালা শোক; সন্তান হারানোর ব্যথা।
আকাশ বাতাসের দীপ্ত নয়নে অবেণী-বদ্ধ পোঁচ,
শহীদ মিনারে প্রহরীর বেশে মা আজও নেয় তাই আত্মজার খোঁজ।
প্রবাহিনী সময় সম্প্রীতি ভালোবাসা হাসি উল্লাস জীবনের জয়গান,
সবার কন্ঠে একই সুর ‘বাংলা আমার মাতৃভাষা বাংলা আমার প্রাণ’।
ভাষার দাবিতে জীবন যাদের হলো বলিদান,
জাতির গৌরব তাঁহারাই; ভাষার অরূপ রতন সম্মান।
একুশ নয়কো তাই আর– বাবার বোবা কান্না ভাইয়ের স্বপ্ন,
বধূর সিঁদুর বোনের আকুতি কোলহারা মায়ের মনের বিবসন।
বাঙালির আবেগে একুশে ফেব্রুয়ারী উঠবে সেজে আবার,
ফুলে ফুলে হবে ধন্য; বাঙালির অহংকার গর্বের শহীদ মিনার।