কয়েকদিন ধরে দিন নেই, রাত নেই, ওর বাবা-মা মিলে সমানে ইংরাজীতে কথা বলা শিখিয়েই চলেছে টুকাইকে। এই সবে তিন বছর বয়স ওর। আর ভালো লাগে না, সকাল থেকে স্কুলে যাও। ওখানেও সেই তোতাপাখির বুলি আওরাও। এখন আবার বাড়িতেও এই এক নতুন পর্ব শুরু হয়েছে। বাবা-মার সঙ্গে কথা বলতেই আর ভালো লাগছে না ওর। কি এমন ক্ষতি হবে, অনুভব আঙ্কেলদের সাথে ও যদি বাংলাতেই কথা বলে?
অনুভব মিত্র, ওর বাবার সেই ছোট্টবেলার বন্ধু। একসাথেই স্কুল-কলেজের পড়া শেষ করেন। তারপর আমেরিকায় চলে যান। প্রতি বছরই একবার আসেন দেশে। কিন্তু কোনোবারই ওর বাবার সাথে দেখা হয় না। সোস্যাল মিডিয়ায় আর ফোনে যোগাযোগ আছে। তাই এবার দুই বন্ধু ঠিক করেছেন একটা দিন অন্তত একসাথে কাটাবেন ওনারা। এই মাসের পনেরো তারিখে ওদের বাড়ি আসবেন ওনারা সপরিবারে। উনি, ওনার স্ত্রী আর ওনাদের পাঁচ বছরের মেয়ে স্টেলা। টুকাই বারবার বলেছে বাবা-মাকে, ওদের সাথে বাংলাতেই বলবে। কিন্তু ওনারা তাতে বেজায় চটে যান। ও বাংলা বললে নাকি ওনাদের নাক কাটা যাবে। অগত্যা, টুকাই কোনোমতে পনেরো তারিখটা পেরোনোর অপেক্ষা করে।
পনেরো তারিখে সকাল থেকেই ওদের ঘরে কেমন উৎসবের মেজাজ। মা সেই ভোর থেকেই রান্নাঘরে ঢুকেছেন। কি সুন্দর সুন্দর সব খাবারের গন্ধ বের হচ্ছে! টুকাইকে আজ স্কুল যেতে হয় নি। বাবাও অফিস ছুটি নিয়েছেন। ওরা সবাই সকাল সকাল স্নান সেরে তৈরী হয়ে রইলো। সকাল দশটা নাগাদ অনুভব আঙ্কেলরা এলেন। টুকাই ওদের দেখেই একটু অপ্রস্তুত হয়ে, একটু দূরে দূরে থাকলো। ব্যাগ থেকে নানারকম উপহার বের করে টেবিলের উপর রেখে, একটা বড় চকোলেটের প্যাকেট স্টেলার হাতে দিয়ে অনুভব বললেন —-“এইটা ভাইকে দাও।”
ওর হাতে চকোলেটটা দিয়ে, মিষ্টি করে হেসে জিজ্ঞেস করলো—–“কি নাম তোমার ভাই!”
টুকাই যেন ধরে প্রাণ ফিরে পেলো। ও তখন ওর নাম বললো, হ্যাঁ বাংলাতেই…! তারপর বাবা-মার দিকে তাকালো।
ওর বাবা-মা দুজনেই লজ্জায় মাথা নীচু করলো।
***************
Leave a Reply