ষষ্ঠ পর্ব
সেই কখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল,সেই সময় মনে একটা অন্যভাবনা ছিল,কিন্তু এখানে এসে টুনাদিকে দেখে সবকিছু যেন আবার নতুন করে ভাবতে হচ্ছে সুরুচিকে।এরই মাঝে অবশ্য বাথ্রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসেছে,টগর এসে গরম পকোড়া আর কফি দিয়ে গেছে।বারান্দায় বসে তাই খেতে খেতে নিজের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো ভেবে নিচ্ছিল,আসলে যতক্ষন না ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসে কিছুই চিশ্চিতভাবে ঠিক করা মুস্কিল।টুনাদির সঙ্গে কথা বলাও জরুরী।এই কটেজটা এমন জায়গায় ,যেখান থেকে অন্য কটেজগুলো বেশ ভালোভাবেই লক্ষ্য করা যায়।সব কটেজেই লোকজন আছে,এরা সবাই অমিত মিত্রের অতিথি হয়ে এখানে হাজির হয়েছিলেন ,আচমকা এই দুর্ঘটনায় ফেঁসে গেছেন।পুলিশ এইমুহুর্তে কাউকেই এখান থেকে চলে যাবার অনুমতি দেয়নি।সম্ভবত সেই নিয়েই সামনের কটেজের কয়েকজন একজোট হয়ে আলোচনা করছে,না এখান থেকে তা শুনতে পাওয়া অবশ্য অসম্ভব। কিন্তু দুম করে উঠে ওখানে যাওয়াটাও তো সমীচীন নয়।
সুরুচির একটু অস্থির লাগলো নিজেকে।এইসময় অবশ্য মাথা ঠান্ডা রাখাটা খুব জরুরী।একজন বেস হাতপা নেড়ে নেড়ে কিছু বোঝাচ্ছিল।ঠিক সেই সময়েই সুরুচি দেখলো বিনয়বাবু ওদেরদিকেই আসছেন আর সুরুচির আন্দাজ মতোই সবাই বিনয়বাবুকে ঘিরে ধরলো।
সুরুচি আস্তে আস্তে করে এগিয়ে চলল জটলার দিকে।
“এইতো, আপনি এসে গেছেন দেখছি।”ওকে দেখতে পেয়ে বিনয়বাবু যেন হাতে চাঁদ পেলেন।কী মুশকিল বলুন তো,থানা থেকে ওনাদের রিসর্ট ছাড়তে নিষেধ করেছে,তারজন্য আমি তো দায়ী নয়?”
“না না, আপনাকে কেউ দায়ী করছে না,কিন্তু আপনি তো আমাদের একটু হেল্প করতেই পারেন।এখানের ওসির নম্বরটা আমাদের দিন।আমরা কথা বলছি।”
লাল টি-শার্ট, মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি, এক ভদ্রলোক বললেন, ওনাদের মধ্যে থেকে।
বিনয়বাবু একটু দ্বিধাগ্রস্ত চোখে সুরুচির দিকে তাকালেন।
“বেশ তো, বিনয়বাবু, ওনারা যখন চাইছেন কথা বলতে দিন না নম্বর। যা ডিসিশান নেওয়ার তা তো পুলিশই নেবে।”
সুরুচি জানে ওনাদের একটু সাহায্য না করলে, ওনাদের সঙ্গে কথা বলা যাবে না।আর কথা না বললে ও কোন কিনারাতেই পৌঁছাতে পারবে না।
ওর দিকে তাকিয়ে এক সেই লাল টি-শার্ট ভদ্রলোক বললেন,” এই তো,ম্যাডাম ঠিক বলেছেন।কী ঝামেলা বলুন তো। ”
বিনয়বাবু নম্বর দেওয়ার ফাঁকে, সুরুচি একঝলক সবার দিকে দেখে নিলো।এরা সম্ভবত অমিত মিত্রের বন্ধুবান্ধব।কিন্তু সবার আগে একবার টগরের সঙ্গে কথা বলতে হবে,কেন যেন মনে হচ্ছে বারবার টগর মেয়েটা কিছু জানে কিন্তু বলছে না।সবার আগে ওর মুখ খোলানোটা দরকার।ততক্ষণে বরং এরাও ফোনাফুনি সেরে নিক।আস্তে আস্তে ভীড় থেকে সরে এলো সুরুচি।এগিয়ে চলল নিজের কটেজের দিকে।ওখানেই আশেপাশে কোথাও আছে টগর।
সপ্তম পর্ব
“যা বলছো ,ভেবে বলছো তো?”
“হ্যাঁ গো দিদিমনি,আমি লেখাপড়া তেমন জানিনা,কিন্তু এসবে আমার কোন ভুল নেই।সেদিন সত্যি ঐ যিনি মারা গেলো গো,তার খুব ঝগড়া হচ্ছিল,এক দিদিমনির সঙ্গে।”
“হুম,আর তুমি বলছো,যার সঙ্গে ঝগড়া হচ্ছিল,তিনি ঐ দাদাবাবুর বৌ নয়।”
“মোটেই নয়,দুজনের গলা যে এক্কেবারে আলাদা।”
“বুঝলাম।তা দাদাবাবুর বৌ তখন কোথায় ছিলেন?”
”
ঐ বাগানে সন্ধেবেলা যেখানে ,পার্টি হবার কথা ছিল,সেখানে ঘুরে সব দেখছিলেন।”
“আর তুমি কী দাদাবাবুদের ওখানে ছিলে?”
“না গো,আমি পাশের ঘরটায় ছিলুম,ওখানে কাল লোক আসার কথা ছিল,তাই সব গুছিয়ে রাখছিলুম।”
“আসার কথা ছিল?”সুরুচি বলে,”আসেনি?”
“না গো,”সাহেব বলল,”ভাড়া ক্যানসেল হয়েছে।”
হুম,মাথা নীচু করে কিছুক্ষন ভাবে সুরুচি,এটা একটা নতুন পয়েন্ট,অহনাদিদের ঘরের পাশেই একজনের বুকিং ছিল,যারা শেষ মুহুর্তে ক্যানসেল করেছে।এটা কী নেহাতই কাকতালীয় ? না দুটো ঘটনার মধ্যে কোন সূত্র আছে? তারজন্য দেখা দরকার কার বা কাদের বুকিং ছিল সেদিন ? ডিটেলস নিশ্চিত পাওয়া যাবে বিনয়বাবুর কাছে।
“আচ্ছা ,টগর ,সেদিন দিদিমনি যখন বাগানে ঘুরছিলেন ,তখন ওনার সঙ্গে কে ছিল?”
“আমাদের নতুন ম্যানেজারবাবু ছিল তো।”
“নতুন ম্যানেজার?”
“হ্যাঁ গো,এখন যিনি আছেন তিনি তো আর বেশিদিন থাকবেননি,তাড়াতাড়িই চলে যাবেন,তাই একজন নতুন ম্যানেজারবাবু এসেছেন,আগেরজন থাকতে থাকতেই কাজ বুঝে নিচ্ছেন।”
বিনয়বাবু ওকে এসব ব্যাপারে কিছুই বলেননি।সুরুচি মনে মনে ভাবে।
আচ্ছা,সেই নতুন ম্যানেজার বাবু এখন কোথায়? আসা থেকে এরকম কাউকে তো চোখে পড়লো না।
“ঠিক আছে ,টগর তুমি এখন যাও,আবার কিছু দরকার হলে তোমায় ডাকবো।আর শোনো তোমাদের নতুন ম্যানেজারবাবুকে কোথায় পাওয়া যাবে বলতে পারবে ?”
“তিনি তো চলে গেছে গো ।”
“চলে গেছে ? কোথায়? কবে ?”
“তা সেদিন, দিদিমনির সঙ্গে বাগানে ঘুরে সব ঠিক করলে,তারপরই ধুম জ্বর এলো, তাই নিজের বাড়ী চলে গেলো,যাবার সময় আমার কর্তাকে অবশ্য সব বুঝিয়ে দিয়ে গেসলো,ঐ তো তারপর সব সামলালে।”
সুরুচি কিছুক্ষণ চুপ করে টগরের দিকে তাকিয়ে বলল,”বুঝলাম।
ঠিকাছে তুমি এখন এসো।”
টগর বেরিয়ে যায়।জানলার বাইরে তখন সূর্য একটু একটু করে পাটে নামছে, লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে বাগানের কোনে কোনে।কয়েকটা পাখি আপনমনে ডেকে চলেছে।সুরুচি আস্তে করে বসে পড়ে জানলার সামনে চেয়ারে,চোখ বন্ধ করে মনে মনে পয়েন্টগুলো সাজিয়ে নিতে শুরু করে,আর তখনই ওর ফোনটা বেজে ওঠে,ওর মন বলে অমিতবাবুর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এসে গেছে,ও চোখ বন্ধ করেই ফোনটা ধরে বলে ওঠে –
“হ্যালো…”
ক্রমশ…