আনাড়ি মহিলার উচ্ছৃঙ্খলতা(ধারাবাহিক উপন্যাস; প্রথম পর্ব) : দিলীপ রায় (+৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

0
536

ঈশ্বরদী স্টেশন অর্থাৎ ঈশ্বরদী জংশনের সন্নিকট ইমলিদের বাড়ি । ঈশ্বরদী রেল স্টেশন ব্রিটিশ আমলের । ওপার বাংলায় এই স্টেশন অর্থাৎ জংশনটি প্রাচীন ও বৃহত্তম । পাবনা জেলার মধ্যে অন্যতম রেলওয়ে জংশন । সেই স্টেশনের কাছাকাছি সরসুটা গ্রামে ইমলিদের বাড়ি । চারিদিকে মুসলমানদের গ্রাম । মাঝখানে ইমলিদের একটাই হিন্দু গ্রাম । কিন্তু এখানে পাশাপাশি গ্রামের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির মেলবন্ধন, অটুট । ইমলিদের কয়েক পুরুষের জন্মভিটে । ইমলির বাবা পেশায় শিক্ষক । এলাকায় গণ্যমান্য সজ্জন ব্যক্তি । তার দুই দাদা । একজন পার্বত্য চট্টগ্রামে জেলাস্তরের নামী সরকারি অফিসার, আর অন্য ছোট দাদা ঢাকায় শিক্ষা দপ্তরে ডাইরেক্টর । মন্ত্রীর পরেই তার পদমর্যাদা । দুই দাদাই বিবাহিত । দুই দাদাই তাদের পরিবার নিয়ে কর্মস্থলে বসবাস করছেন । মাস্টার মশায়ের ছেলেরা সুশিক্ষিত ও সরকারি উচ্চ পদে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে ঈশ্বরদী এলাকায় সরসুটা গ্রামে ইমলিদের পরিবারের অনেক নামডাক । এলাকায় আশেপাশের গ্রামের মানুষের মধ্যে আলাপ-আলোচনা, “মাস্টার মশায় ছেলেমেয়েদের অন্তত ঠিকভাবে মানুষ করেছেন” । ভদ্র ও সভ্য পরিবার হিসাবে এলাকার মানুষের মধ্যে তাঁদের গৌরবোজ্জ্বল খ্যাতি ও প্রতিপত্তি । মাস্টার মশায়দের পূর্ব পুরুষও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন । গাঁয়ে শিক্ষা আনয়নে তাঁদের পরিবারের অনেক অবদান ও দান ধ্যান । এমনকি মাস্টার মশায়ের পিতামহের অর্থানুকুল্যে ও তাঁর অনলস প্রয়াসে দৌলতপুর হাই স্কুলের পত্তন । সেখানে মাস্টার মশায়ের বাবা ছিলেন প্রধান শিক্ষক । সেই স্কুলটির পঠন-পাঠন পদ্ধতি অত্যন্ত উন্নত মানের । তাই দেশে শিক্ষার বিকাশসাধনে ইমলিদের পরিবারের নামডাক শিক্ষা জগতে বহুচর্চিত ।
অন্যদিকে ইমলি নিজে প্রচন্ড চঞ্চল । কিছুটা জেদি । ডাগর ডোগর চেহারা । ডাগর আঁখি । অসাধারণ সুন্দর একটি মিষ্টি মেয়ে । গাঁয়ের মেয়েদের সাথে ঘোরাঘুরি । বন্ধুদের সাথে সময়ে অসময়ে আড্ডা । খেলাধুলা নিয়ে ছোটাছুটি । কিন্তু পড়াশুনায় ইমলি আগাগোড়াই আন্তরিক ও দায়িত্বপূর্ণ । আবার বাবা ও দাদাদের কাছে ইমলি বড্ড আদরের । তার বড়দার চোখের মণি । তিনি বোন বলতে অজ্ঞান । দাদাদের আস্কারার জন্য ইমলি নাকি এরকম ডানপিটে । তার মায়ের শাসনের বাইরে । মা কিছু বললেই ইমলির বাবা ইমলির রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়ান । ইমলির সীমাহীন দুরন্তপনার কারণে তার মা নাজেহাল । কিছুতেই মেয়েকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না । অথচ মেয়ের বিয়ের বয়স হচ্ছে । “মেয়ে কাছে থাকবে” এই কথা ভেবে ইমলির বাবা তাকে আইন বিষয়ে পড়িয়েছেন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পড়াশুনা । সে সম্প্রতি আইনে স্নাতক । ইমলির বাবার ইচ্ছা, মেয়ে কোর্টে ওকালতি করুক । অন্যদিকে তার মায়ের ইচ্ছা, মেয়ের বিয়ে দেওয়া । ইমলির বিয়ের ব্যাপারে দুজনের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কচলাকচলির মধ্যে মাদারীপুর থেকে ইতাসের মা-বাবা ইতাসের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে সরাসরি ইমলিদের বাড়ি হাজির ।
মাদারীপুরের মাদ্‌বরের চর পোস্ট অফিসের অধীনের রাজার চর থেকে ইতাসের মা-বাবা এসেছেন । ইমলির ছোড়দার অফিসের সহকর্মী ইতাস । ইতাস সেখানে খুব সম্প্রতি কাজে যোগ দিয়েছে । দেখতে শুনতে ভাল । ব্যবহার মার্জিত । বাড়ির একমাত্র সন্তান । ভাল পরিবার । খোঁজ নিয়ে ইমলির ছোড়দা জেনেছে, তাদের পরিবার এলাকায় সজ্জন ও সম্ভ্রান্ত পরিবার। যার জন্য ইমলির ছোড়দার ইতাসকে পছন্দ । তাদের একমাত্র বোন সুপাত্রস্থ হোক্‌ ছোড়দা সেটাই মনেপ্রাণে চায় । যার জন্য ছোড়দার পরামর্শমতো ইতাসের মা-বাবার আগমন । তাঁরা ইমলিকে দেখে ইমলির সামনেই বললেন, “আমরা এইরকম একটি মা-লক্ষ্মী খুঁজছিলাম” ।
তারপর পরের সপ্তাহে ইমলির ছোড়দা সরাসরি ইতাসকে নিয়ে সরসুটা নিজের বাড়িতে হাজির । সুদর্শন চেহারা । হাল্কা বয়স । হাসিখুশিতে ভরপুর । ইতাসকে এক ঝলক দেখেই ইমলি তার স্বপ্নের পুরুষকে ইতাসের মধ্যে খুঁজে পেলো । ছোড়দার বন্ধু বলে কথা, খাওয়া-দাওয়ার এলাহি আয়োজন । ইতাস ও ইমলি দুজনে নির্জনে বসে অনেক গল্প । দুজনের মধ্যে অনেক কথার খুনসুটি । দুজনে হাত ধরাধরি করে ঘোরাঘুরি । দুজনের মধ্যে ভাব-ভালবাসার টান টান উত্তেজনা । জুটি দুটো ভীষণ মানাসই, বললেন ইমলির মা । ইমলির বাবার আপশোশ, ইতাস বাবার একমাত্র সন্তান । ইতাসের আরও ভাই-বোন থাকলে খুব ভাল হোতো । যাই হোক ইমলির মা-বাবা ইতাসকে জামাই হিসাবে পাওয়ার জন্য তাঁদের ছোট ছেলেকে মত দিলেন । দুই পরিবারের মতামত ও পরামর্শমতো বিয়ের দিন ধার্য হোলো শ্রাবণ মাসে । ভরা বর্ষার মধ্যে বিয়ে । ইতাসের বাবা-মায়ের বক্তব্য, “যেহেতু মেয়ে আমাদের পছন্দ, সুতরাং আমরা চাই শীঘ্র বিয়ে” ।
ভরা বর্ষায় পদ্মা বোঝাই জল । মাদারীপুরের রাজার চরে তখন চাষবাসের ভরা মরশুম । রাজার চরে ধান চাষের রমরমা । সেখানের মানুষ প্রতিষ্ঠিত চাষি । বর্ষাকালে ধান চাষ রাজার চরে জনপ্রিয় । তাই গ্রামের মানুষ চাষ আবাদ নিয়ে ব্যস্ত । গ্রামের মানুষ চাষবাস নিয়ে ভীষণ খুশী । চাষের মরশুম ছাড়া গ্রামে বিভিন্ন ধরনের গান বাজনার জলসার আসর বসে । প্রত্যেক পাড়াপ্রতিবেশীর মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ ও সুমিষ্ট সম্পর্ক । গাঁয়ের বেশীর ভাগ মানুষের একান্নবর্তী পরিবার । ঐ গ্রামে চাষের মরসুমে মহা ধুমধামে ইমলি ও ইতাসের বিয়ে সম্পন্ন হোলো । দুটো পরিবার খুব খুশী । ইমলি ইতাসকে পেয়ে আনন্দে বিহ্বল, অন্যদিকে ইতাস ইমলিকে পেয়ে ধন্য । ইতাস ইমলিকে সর্বক্ষণ চোখে চোখে রাখে । দুজনের মধ্যে অবর্ণনীয় ভাব ভালবাসা । আনন্দোচ্ছ্বাসে তাদের দাম্পত্য জীবন । তারপর অনেক কসরত করে ইতাস ফরিদপুর জেলা সদরে পোস্টিং পেলো । অন্যদিকে ইমলি ফরিদপুর জেলা আদালতে ওকালতি শুরু করলো । তাদের দাম্পত্য জীবন ও কর্ম জীবন এত সুন্দর নিখুঁতভাবে চলতে লাগলো যেটা পাড়া প্রতিবেশীর কাছে ঈর্ষনীয় ।
ইতাসের বাবা-মা তাঁদের একমাত্র ছেলের বৌ ইমলিকে পেয়ে ভীষণ খুশী । তাঁরা ইমলিকে নিজের মেয়ের মতো ভালবাসেন । তাঁদের একটিমাত্র সন্তান । মেয়ে ছিলো না বলে যে দুঃখ-আপশোশ তাঁদের অন্তরে বিরাজ করছিলো,ইমলিকে পেয়ে তার অবসান ।
তারপর …… ।
এখনও এক বছর হয়নি ইতাস ইমলিকে বিয়ে করেছে । তার মধ্যেই চারিদিকে অশান্তির বাতাবরণ । ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ । দেশ ভাগের নিরিখে ওপার বাংলায় হিন্দু খেদাও অভিযান । সর্বত্র পালাও, পালাও রব । বংশ পরম্পরায় অর্জিত সম্পদ ফেলে বাঁচার তাগিদে মানুষ দিশেহারা । অন্তরে বেদনার হাহাকার । স্ত্রী-পুত্র কন্যা নিয়ে সবাই আতঙ্কিত । দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হচ্ছে । পিতৃপুরুষদের হাতে তৈরী সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলার শান্তির দেশ । সেই দেশে এখন তাঁরা অপাঙ্‌তেয় । কোথায় যাবে, কিভাবে বাঁচবে পুরোটাই অনিশ্চয়তা ।
সেদিন ছুটির দিন । ইতাস ও ইমলি রাজার চরে গ্রামের বাড়িতে । তার বাবা-মা গোপালগঞ্জ শহরে গেছেন মামা বাড়িতে । ইতাসের বড় মামার শারীরিক অবস্থা ভীষণ খারাপ । ক্রমশ অবনতির পথে । তাঁর বয়সও হয়েছে । নব্বইয়ের কাছাকাছি । বড় মামাকে দেখতে ইতাসের মা-বাবার গোপালগঞ্জে যাওয়া । তাঁরা বাড়িতে বলেই গেছেন, সেখানে দুদিন থাকবেন । যার জন্য ইতাস দুদিন ছুটি নিয়ে বাড়িতে রয়েছে । ফরিদপুরের কোয়ার্টারে তালা ঝোলানো । ইমলির মনে কতো উন্মাদনা, দুদিন দুজন একসঙ্গে ফাঁকা বাড়িতে স্রেফ আড্ডা দিয়ে আনন্দে আহ্লাদে দিন কাটাবে । অনেকদিন বাদে গাঁয়ের বাড়িতে তারা দুজনে । গাঁয়ের বাড়িতে ঘোরাঘুরিতে ইমলির খুব আনন্দ ! গাঁয়ের মানুষ তাদের খুব ভালবাসেন । যার জন্য ইমলির গাঁয়ে এসে আয়েস করে ঘুরে বেরিয়ে খুব মজা । কিভাবে তার সময় কেটে যায় নিজেও সে টের পায় না । তাই ছুটিতে গাঁয়ের বাড়িতে এসে ইমলি যারপরনাই খুশীতে আহ্লাদিত ।
নিমেষের মধ্যে দমকা হাওয়ার ন্যায় খবরটা শুনে ইতাস দৃশ্যতই মনমরা । ইমলির চাঁদ বদনী মুখমন্ডলে কালোমেঘের ন্যায় উদ্বিগ্নতার ছাপ । ডানপিটে সদা চঞ্চল মেয়ে এখন ভয়ে, ভীতিতে ও আশঙ্কায় মূহ্যমান । মুহূর্তের মধ্যে তাদের ভিতরের আনন্দঘন উন্মাদনা নিমেষের মধ্যে উধাও । উদ্বিগ্নতার কালো মেঘ তাদেরকে অনিশ্চয়তায় ভরা জীবনের মধ্যে ফেলে দিলো । ইতাস বাবার কাছে খবর পাঠালো । কিন্তু খবরটা পরের দিন ছাড়া ইতাসের বাবা আজ পাবেন না । বাবা-মা বাড়িতে না ফিরলে ইতাস কিছুতেই বাড়ি ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না । ছোটবেলা থেকেই ইতাস বাবা-মা’র উপর নির্ভরশীল । তাই বাবা মায়ের ফেরার অবস্থার প্রেক্ষাপট অনুধাবন করে ইতাস ও ইমলি পরের দিন বাপ-ঠাকুর্দা সহ কয়েক পুরুষের ভিটেমাটি ছাড়ার পরিকল্পনা নিলো । বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে তারা অজানার দেশে পাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রইলো । বয়স্ক বাবা-মাকে ফেলে ইতাসের এক পা নড়বার ইচ্ছা নেই । তাতে তাদের কপালে যা হবার তাই হবে । গ্রামের গাছ- পালা, পশু-পাখি, নদী-নালা, খাল-বিল, সব কিছু তাদের জীবনের অঙ্গ । মানুষজন, আত্বীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, গাঁয়ের ন্যাংটা বয়সের বন্ধু-বান্ধব, স্কুল-কলেজ, ভাল-মন্দ মিশিয়ে তাদের জীবনের ভিত । সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা দেশের মাটিতে তাদের শিকর । সেই শিকর এখন নড়বড়ে । শিকর তুলে ছিন্নমূল হয়ে তাদের ছুটতে হবে অজানা অচেনা দেশের উদ্দেশ্যে ।
ইমলির চোখে জল । তার কান্না থামছে না । বিবাহিত জীবনের সূচনা পর্বে তাদের জীবনে অশনি সঙ্কেতের কালো মেঘ । চতুর্দিকে হৈচৈ, হৈ-হট্টগোল । কান্নার সোরগোল । যার দিকেই তাকানো যাক, সকলের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ । তাদের ভয়ার্ত চাহনী । ইমলি ও ইতাসের মনের মধ্যে তোলপাড় কোথায় যাবো, কী খাবো, কিভাবে বাঁচবো ? অনেক অজানা প্রশ্নের সম্মুখে তাঁরা সম্মুখীন । বাচ্চা শিশুরা উদাসভাবে তাদের মা-বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে । হঠাৎ তাদের মা-বাবা কাঁদছে কেন ? ঐসব নিস্পাপ শিশুদের মনে প্রশ্ন, মা-বাবা চিন্তায় চিন্তায় এত ভারাক্রান্ত কেন ? চোখের সামনে তাঁদের শস্যে ফুল দেখার মতো অবস্থা । কূল-কিনারাহীন নদীর অগাধ জলে পড়ার মতো অবস্থা ।
ইতাসকে আকঁড়িয়ে ধরে ইমলির অনবরত কান্না । খাওয়ায় মন নেই । চোখ থেকে ঘুম উধাও । রান্নায় মন বসছে না । তবুও ইমলি রাত্রিতে খাওয়ার জন্য রান্না করলো । মসুরির ডাল সেদ্ধ, বেগুন ভাজা ও রসুন-কালো জিড়ে ভেজে রসুনের সাথে কাঁচা লঙ্কা-কালো জিড়ে বাটা । দুজনে সেই খাবার খেয়ে ডরানো চোখে অনেক রাত্রিতে বিছানায় শুতে গেলো । পরের দিন বাবা-মা বাড়ি ফেরার পর তারাও অজানা উদ্দেশ্যে ছুটবে ।
গ্রামের অর্দ্ধেকের বেশী মানুষ তাঁদের ঘর বাড়ি, জমি-জায়গা ফেলে পালিয়ে গেছেন । কোথায় তাঁরা গেছেন সেটাও ইতাসের কাছে অজানা । ইমলি ঘরের জানালায় উঁকি দিয়ে পাশের দুটো প্রতিবেশীদের ফাঁকা বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখছে, তাদের অতি পরিচিত চেনা মানুষ সেই বাড়ি দখল নেওয়ার জন্য কোমরে গামছা বেঁধে উঠেপড়ে লেগেছেন । নিমেষের মধ্যে তারা বাড়িটা লোহার তার দিয়ে ঘিরে ফেলে দখল নিয়ে তাদের কী উল্লাস্‌ ! “হ্যাঁ, তারা হিন্দুদের তাড়াতে পেরেছে” সেই আনন্দোচ্ছ্বাসের উল্লাস্‌ ।
গভীর রাত । ঘরের দেওয়াল ঘড়িতে তখন দুটো বাজতে দশ । ইমলি ও ইতাসের চোখে কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন । ইমলির ডান হাতটা তখনও ইতাসের বুকের উপরে রাখা । হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ । দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে অতর্কিতে লাফিয়ে উঠলো ইতাস । ইমলিও ভয়ে জড়সড় । ভয়ার্ত গলায় তার চিৎকার, “কে, কে ?”
“শিগ্‌গির দরজা খোল । নতুবা বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেবো” । বাইরে থেকে বহু দিনের পরিচিত আপনজনের গলার হুঙ্কার ! অতি পরিচিত গলার স্বর ।
ভয়ে সিটিয়ে গেছে ইমলি । আচমকা ভয়ে ইতাসের শরীরে থরহরি কম্প ! করুণ চোখে বারংবার ইমলির দিকে তাকাচ্ছে ইতাস্‌ । ডরানো চোখের চাহনী । ইতাসের মনের গহন গাঙে তখন সব হারানোর ভয়ের সর্বনাশা আতঙ্ক । শক্ত সমর্থ প্রাণচঞ্চল ইমলি ভয়ে তখন ভীত সন্ত্রস্থ । দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে অসহায়ের মধ্যে নিমজ্জিত । আবার বাইরে থেকে আওয়াজ ! এবার বিশ্রি ভাষায় গালি দিয়ে তাদের হুঙ্কার, “দরজা শিগ্‌গির খোল্‌ । নতুবা দরজা ভেঙ্গে তোদের গাছের সাথে বেঁধে পুড়িয়ে মারবো” ।
আর চুপ থাকা ঠিক হবে না ভেবে ইতাস দরজা খুলে দিলো । সঙ্গে সঙ্গে গোটা দশেক লোক তাদের বেড রুমে ঢুকে তুলকালাম । ইতাসকে বেড রুমে পেয়ে বিনা কারণে তার পিঠে দুই ঘুষি । সব কটা আগন্তুকের মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা । তবে ইতাস সহজেই অনুধাবন করতে পারলো, তার কাছে চার-পাঁচ জন আগন্তুকের গলার স্বর খুব চেনা । নাম ধরে ডাকতে তার সাহসে কুলাচ্ছে না । প্রত্যেকের হাতে লাঠি, বল্লম, ইত্যাদি । ইমলিকে ও ইতাসকে ঘর থেকে বের করে বাড়ির উঠোনে ফেলে লাঠি দিয়ে তাদের কয়েক ঘা মারলো । ইমলি মহিলা, অথচ তাকে আঘাত করতে আন্তুকদের কোনোরকম লজ্জা শরমে বাধলো না । এতটাই তাদের জঘন্য আচরণ । তারপর তাদের কী আস্ফালন ! বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ । নির্লজ্জভাবে নোংরা ভাষায় তাদের গালিগালাজ । “ইতাস ও ইমলি কেন দেশ ছাড়েনি” ? তার জন্য গাত্রদাহ ! তাদের লম্ফঝম্ফ । নির্দেশ দিলো তক্ষুণি দেশ ছেড়ে পালাতে । নতুবা তাদের কেটে পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দেবে । ইতাসকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে রাস্তা দেখিয়ে দুর্বৃত্তরা বললো, “শিগ্‌গির বৌকে নিয়ে পালা । বেশীক্ষণ থাকলে গলা কেটে পদ্মায় ভাসিয়ে দিয়ে আমাদের শান্তি” ।
সেই অন্ধকার রাত্রিতে তারা দুটি প্রাণী অসহায়ের মতো ছুটছে । মনে তাদের দেশ হারানোর বিষম জ্বালা ! চারিদিকে তখন দিগ্‌বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে চলেছে অসংখ্য আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ । ইতাসের আর ফিরে তাকাবার অবসর নেই । বাবা-মায়ের মুখ দুটি মনে পড়লেই তার চোখ জলে ভরে উঠে । পদ্মা পার হয়েও রেল স্টেশনে যাওয়ার কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই । অসহায়ের মতো তারা ছুটছে । রাস্তায় সকাল বেলায় হঠাৎ তাদের প্রিয় দুলা-ভাইয়ের সঙ্গে দেখা । ছোট বেলায় দুলা-ভাইয়ের কাঁধে চেপে গাঁয়ে ঘোরাঘুরি । বড় হয়ে দুলা-ভাইয়ের সাথে ঝড় বৃষ্টির সন্ধ্যায় বিভিন্ন মানুষের আম বাগানে ঢুকে আম চুরি । খেপলা জালে দুলা-ভাইয়ের সাথে বিলে গিয়ে মাছ ধরা । আরও কতোশতো স্মৃতি । সেই দুলা-ভাই তাদের অসহায় ও আতঙ্কগ্রস্তভাবে ছোটা দেখেও জেনেশুনে মুখটা ঘুরিয়ে নিলো । তাঁর নিজস্ব গন্তব্যে যাওয়ার গতি বাড়িয়ে দিলো । দুলা-ভাইয়ের এড়িয়ে যাওয়ার স্থিতি দেখে ইতাসের মনে হোলো গোটা দেশ এখন তাদের বিপক্ষে । এখন তারা “নো ম্যান্স ল্যান্ডের” মানুষ । কী অসহনীয় অনুভূতি । চোখের জল ফেলেও এর সুরাহার কূল-কিনারা পাওয়া দুস্কর ।
তারপর অনেক ছোটাছুটির পর অবশেষে তারা রেল লাইন খুঁজে পেলো । ইতাস কস্মিনকালেও সেই রেল লাইন চত্বরে কোনোদিন কোনো প্রয়োজনে আসেনি । অচেনা জায়গা । যদিও লোক মুখে জায়গাটার নাম শুনে বুঝতে পারলো, তারা দর্শনা স্টেশনের কাছাকাছি । যদিও রেল লাইন বরাবর অনেক মানুষ হাঁটছে তাঁদের ঈপ্সিত স্থানে পৌঁছানোর জন্য । কিন্তু সব শরণার্থীদের যে কোনো বর্ডার দিয়ে পার হতে হবে । নতুবা অন্তত ভারত রাষ্ট্রে পৌঁছানো সম্ভব না । লোক মুখে ইতাস আরও জানতে পারলো, এপারে দর্শনা স্টেশন এবং ওপারে ভারতের গেদে স্টেশন । অর্থাৎ গেদে বর্ডার । সে আরও জানতে পারলো, গেদে বর্ডারে প্রচন্ড ধর-পাকড় চলছে । এক শ্রেণীর মানুষ উপকারের নামে লুঠপাট চালাচ্ছে । অসহায় আতঙ্কগ্রস্থ শরণার্থীদের লোটা-কম্বল কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব করে ছেড়ে দিচ্ছে । এমনকি মহিলাদের উপরও নানান রকম অশালীন উৎপীড়ন চলছে । দর্শনার এলাকার এপারের বর্ডারের পুলিশের অমানবিক অত্যাচার খুব ভয়াবহ । যারা তাঁদের শেষ সম্বল লোটা-কম্বল নিয়ে সোচ্চার হতে যাচ্ছেন, তাঁদের উপরে পুলিশের লাঠির আঘাত অহরহ । এমনকি পুলিশের মুঠো হাতে মার, কিল, মুষ্ট্যাঘাত, থাপ্পড় অনবরত ।
ইতাসের মনে আতঙ্কিত প্রশ্ন, “অবশেষে তারা কী ভারতে প্রবেশ করতে পারবে” ? ইমলি ইতাসকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, “অন্যান্য শরণার্থীদের পেছন পেছন গেলে নিশ্চয়ই বর্ডার পার হওয়া সহজ হবে” । অবিরাম হাঁটাহাঁটি করার জন্য তারা এখন ভীষণ ক্ষুধার্ত । তাদের পা আর চলতে চাইছে না । শরীর আর হাঁটাহাঁটিতে পারছে না । বাড়ি থেকে দুর্বৃত্তরা তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য একটা গামছা পর্যন্ত আনতে পারেনি । পকেট শূন্য । কিভাবে কী করবে সেটা ভেবেই ইমলি আকুল । যতো বর্ডার এগিয়ে আসছে, ততোই তাদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে । ভারতে ঢুকে কোথায় যাবে, কী খাবে ? অজানা অচেনা দেশ । লোকের মুখে তারা শুধুমাত্র গল্প শুনেছে । “বিনা কারণে, বিনা দোষে নিজের দেশের আপন মানুষদের কাছ থেকে তাড়া খেয়ে বাঁচার তাগিদে ভারতে ঢুকে আশ্রয় নিতে হবে”, এটা তাদের মতো শিক্ষিত মানুষের কাছে অকল্পনীয় ! স্বপ্নের অতীত । নিজের মাতৃভূমি থেকে ছিন্নমূল হয়ে পালানো যে কতো মনোকষ্ট ও পীড়াদায়ক ইতাস ও ইমলি সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে । যে মাটিতে জন্মানো, যে দেশের মাটির গন্ধে বড় হওয়া, যে মাটিতে ছোটবেলা থেকে হা-ডু-ডু, কিৎ কিৎ, ফুটবল, ইত্যাদি খেলা, যে দেশের নদীতে নিয়মিত সাঁতার কাটা, মাছ ধরা, যেখানে বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব, আত্বীয়-স্বজন, বংশপরস্পরায়, সেই দেশ থেকে চিরতরে বিদায় নেওয়া কী জ্বালা ক্ষুধার্ত হৃদয়ে, ক্লান্ত শরীরে ইতাস ও ইমলি সেটা ষোলোআনা টের পাচ্ছে । মনে ভীষণ কষ্ট । জন্মের দেশ, চেনা দেশ, স্বপ্নের দেশ, এখন বিদেশ । চেনা মানুষ, নিমেষের মধ্যে তাঁরা অমানুষ, হিংস্র । দেশের চেনা আপন বান্ধব নির্দ্বিধায় তাদের তাড়াতে মরিয়া । একসঙ্গে বসে খাওয়া, স্কুলে যাওয়া, স্কুল ছুটি হলে ফেরার সময় গাছের ফল চুরি, সেইসব বন্ধু-বান্ধব নিমেষের মধ্যে পালটে গিয়ে তাদের অগ্নিমূর্তি ধারণ ! অভাবনীয়, অপ্রত্যাশিতভাবে তাদের মতো হিন্দুদের প্রতি মারমুখি আক্রমণ । এই জঘন্য ঘৃণা আক্রোশ শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে দেশটা ভাগ হওয়ার জন্যেই কী, না হিন্দুত্বের উপর বিদ্বেষ ? দেশটা ভাগ হওয়ার সাথে সাথে পরিচিতজনদের নোংরা আক্রমণের কারণে বাবা-মা তাঁদের সন্তান হারা । অন্যদিকে সন্তানেরা তাদের বাবা-মা হারা । দুচোখ বেয়ে অঝোরে জল নেমে আসছে ইতাসের । এই মুহূর্তে তাদের বাঁচতে গেলে দেশ ছাড়তেই হবে । নতুবা দেশের আপন হিংস্র মারমুখী শয়তানদের হাতে প্রাণহানির উজ্জ্বল আশঙ্কা ।
দর্শনা ঢোকার মুখ থেকেই চেকিং শুরু । ইতাসরা যখন দর্শনা স্টেশন ছেড়ে গেদে বর্ডারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । তখন রাত্রি ১২টা । দুপুর রাত্রি হলে কী হবে ? পুলিশ বাহিনীর চোখ শরণার্থীদের মাথার উপরের টিনের বাক্স বা পুটুলীর দিকে । জোর করে নির্লজ্জের মতো সেই পুটুলি ছিনতাই করে নিচ্ছে উর্দি-পরা পুলিশগুলি । কী ভয়ানক অত্যাচার ! হঠাৎ পেছন থেকে দলে পাচঁজন উর্দি-পরা পুলিশের মধ্যে একজন ইতাসের হাত চেপে কর্কশ ভাষায় বললেন, “দেশ থেকে সোনা-গয়না নিয়ে পালানো হচ্ছে বুঝি” ?
কাতরভাবে ইতাস উত্তর দিলো, “আমাদের কাছ থেকে সব কিছু কেড়ে নিয়ে কয়েক পুরুষের বংশ পরস্পরার ভিটে-মাটি থেকে উৎখাত করে তাড়িয়ে দিয়েছে । আমাদের কাছে সোনা-দানা কিচ্ছু নেই” ।
দলের অন্য পুলিশ আরও জোর দিয়ে বিশ্রি ভাষায় ইমলির দিকে তাকিয়ে বললেন, “ঐ মেয়েছেলেটাকে আড়ালে নিয়ে তার অন্তর্বাস পরীক্ষা করলেই সোনার হদিস মিলবে” । “তাদের কাছে সোনা বা টাকা কিছুই নেই” এই কথাটা ইতাস বারংবার বলা সত্বেও উর্দি-পরা পুলিশ কিছুতেই মানতে চাইছেন না । ইতাস বুঝতে পারছে চেকিংয়ের নামে তার স্ত্রীর প্রতি অশালীন ব্যবহার করার উদ্যোগ । পাঁচজন উর্দি-পরা পুলিশ স্বভাবিক অবস্থায় বিচরণ করছেন না । তাদের মুখে বিশ্রি গন্ধ । তাঁরা শরণার্থীদের উপর নির্যাতনের জন্য মরিয়া । শরণার্থীদের কাছ থেকে লুঠেপুটে নেওয়ার ঈপ্সা । তাদের মধ্যে অসৎ উদ্দেশ্য ষোলোআনা । ইমলির শাড়ি ধরে কর্তব্যরত একজন পুলিশ টানছে । বাধা দিতে গেলে ইতাসকে এক লাথি মেরে তাঁর অভব্য তড়পানির আওয়াজ, “আমাদের কাজে বাধা দিলে তোকে হাজতে পচে মরতে হবে । তোর সুন্দরী বৌকে লোকে ছিঁড়ে খাবে । চুপচাপ সরে দাঁড়া, নতুবা বাধা দিলেই বুঝবি পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার কী জ্বালা ! দেশ থেকে সোনা-গয়না নিয়ে বিদেশে পাচার” ! কথাগুলি বলেই সেই উর্দি-পরা পুলিশ ইতাসের সামনেই ইমলির শাড়ি খুলে অন্তর্বাস চেক করলে দেখলেন । সেইসময় ইমলি ভয়ার্ত চোখে-মুখে চোখ বুজে অসহায়ের মতো সটান দাঁড়িয়ে রইলো । পুলিশের পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়ে গেলে সে অন্য পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “না, কিছুই পেলাম না” । আর একটা পুলিশ চিৎকার করে সবাইকে বললেন, “মেয়েছেলেটাকে এবার ছেড়ে দে । আর একটা মেয়েছেলে কাঠের বাক্স মাথায় নিয়ে বর্ডার দিয়ে পালাচ্ছে তাকে ধরতে হবে । কাঠের বাক্সে নিশ্চয় সোনা-গয়না রয়েছে । তারপর পাঁচটা পুলিশ তৎক্ষণাত ইমলি ও ইতাসকে ছেড়ে দিয়ে ছুটলো আর একজনকে পাকড়াও করতে । ইমলির চোখে তখন জল । ইতাস ইমলিকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, “গিন্নি, আমাদের কপাল পুড়েছে । একটু সমঝে মানিয়ে চলতেই হবে” ।
আবার হঠাৎ কালো গামছায় মুখ ঢাকা কয়েকজন দুর্বৃত্ত এসে হাজির । তাদের মৃদু স্বরে জিজ্ঞাসা, “সোনা আছে ? বেশী দাম দিয়ে কিনবো” ?
“আপনারা কারা ? এভাবে লুঠ করতে এসেছেন কেন ? বেয়াদপের মতো দেশ থেকে আমাদের তাড়িয়ে দিয়ে আপনাদের আয়েস মেটেনি । আবার এসেছেন সোনাদানা লুঠ করতে ?” ইতাস একথা বলার সাথে সাথে একজন দুর্বৃত্ত ইমলির গলায় ধারালো অস্ত্র ধরে বললো, “যা আছে শিগ্‌গির দিয়ে দে, নতুবা তোর বৌকে নিয়ে আমরা ফুর্তি করবো” ?
ভয় পেয়ে গেলো ইতাস ! সে বুঝতে পারছে, তাদের বিপদ প্রতি পদে পদে । জীবন মরণ সমস্যা । একটু বেফাঁস কথা বললেই বা অসংযত হলেই দুর্বৃত্তদের হাতে মৃত্যু নির্ঘাত ! ইতাস আবার সুর নরম করে বললো, “আমাদের কাছে কিছুই নেই । শূন্য হাতে দেশ থেকে বিদায় । সব কিছু লুঠ করে নিয়ে আমাদের শিকড় উপড়ে নিঃস্ব করে জন্মভূমির দেশ থেকে আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে “ । তারপর দুর্বৃত্তের পা জড়িয়ে ধরে ইতাসের কী কান্না ! ইতাসের কান্না দেখে দুর্বৃত্তেরা অন্যত্র পালালো ।
দর্শনা বর্ডার ঠিক পার হওয়ার মুখে আবার উৎপাত ! সেখানে পুলিশি জুলুম অন্যরকম । অসহায় শরণার্থীদের উপর অকারণে লাঠিচার্জ । পুলিশি জুলুম দেখে সহজেই অনুমান করা যায়, “যতো দোষ শরণার্থীদের । সুতরাং শরণার্থীদের উপর জুলুমবাজী, লাঠিচার্জ, মারধর করলে সহজেই অনেক ধন সম্পত্তির তাঁরা মালিক হতে পারবেন । লুন্ঠিত সোনা-গহনা বস্তা বোঝাই করে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন” । ঐসব ন্যক্কারজনক দৃশ্য দেখে ইতাস খুব বিচলিত । ইমলির জন্য দুশ্চিন্তায় অন্য পন্থা ভাবতে শুরু করলো ইতাস । তাই ইমলি পুনরায় অন্যায়ভাবে পুলিশি জুলুমবাজীর সম্মুখীন হোক, সেটা ইতাস আর চায় না । পুলিশি অত্যাচারের ভয়ে কয়েকজন সহৃদয় শরণার্থীর পরামর্শমতো দূরের ফাঁকা খোলা জমির আইলের উপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করলো । দুই মাইল হাঁটার পর ইন্ডিয়ায় ঢোকার পথ খুঁজে পেলো ইতাস । ইতাস ও ইমলির মুখে তখন একঝিলিক বাঁচার হাসি । তারপর তারা একরকম ছুটে ইন্ডিয়ায় ঢুকলো । অবশেষে ভোরের সকালে ভারতের মাটিতে পা রাখলো ।
 ( চলবে )