আনাড়ি মহিলার উচ্ছৃঙ্খলতা (ধারাবাহিক উপন্যাস, পঞ্চদশ পর্ব) : দিলীপ রায় (+৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

0
386

পরেরদিন সকালে বাবা-মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো ইতাস ।
বাবা-মাকে ফিরে পেয়ে ইতাস ও ইমলি যেমন উৎফুল্ল, তেমনি দাদু-ঠাকুমাকে পেয়ে আসান আনন্দে আহ্লাদিত ।
অন্যদিকে হারানো ছেলে-বৌমাকে ফিরে পেয়ে ইতাসের মা-বাবা খুশীতে ভরপুর । নাতনী আসানকে কাছে পেয়ে দুজন বুড়ো-বুড়ির আনন্দ আর ধরে না । নাতনীকে পেয়ে তাঁরা এতটাই উচ্ছ্‌সিত যে তাঁদের মন থেকে দেশ ভাগের গ্লানি উধাও । অন্তরে শুধুই শান্তি । আপনজনদের কাছে পেয়ে ইতাসের বাবা মায়ের মনে অফুরন্ত আনন্দের উদ্ভাস । কুসুমগ্রামের বাড়ি জমজমাট । অভিশপ্ত দেশ ভাগের জন্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পুরো পরিবার এখন একত্রিত । নীচ তলায় আইসক্রিম ফ্যাক্টরির একটানা আওয়াজ, আর উপর তলায় সকলে মিলে হাসি ঠাট্টার মশকরার আওয়াজ ! ইমলি ও ইতাসের মধ্যে বাঁচার নতুন উদ্যম ।
বাজার থেকে বাবার পছন্দের কই মাছ কিনে আনলো ইতাস । বড় সাইজের দেশী কই মাছ দেখে ইতাসের বাবার চোখ ছানাবড়া ! তাঁর দেশের কথা মনে পড়ে গেল । বৃষ্টির আওয়াজ পেলেই তিনি সন্ধ্যাবেলায় বাড়ির কাছের জলাশয়ে কই মাছ ধরার জাল পেতে আসতেন । ভোর বেলায় সেই জাল তুললে কমপক্ষে গোটা দশেক কই পেতেন । তেল কই ছাড়া, লাউ পাতা দিয়ে পাতুরি । সে কী অপূর্ব স্বাদ ! সেই মাছের টেস্ট আজও ভুলবার নয় । তাই ইতাসের কিনে আনা কই মাছ দেখে তাঁর চোখ জ্বল জ্বল করে উঠলো । নিজের অজান্তে ইমলিকে বলেই ফেললেন, “জানো বৌমা, কতদিন কই মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাই না । আজ বারংবার দেশের কথা মনে পড়ছে । দেশ ভঙ্গকারী চক্রান্তকারিরা কয়েক পুরুষের শান্তির পীঠস্থানে আমাদের বাঁচতে দিলো না ।“ বলেই তিনি কেঁদে ফেললেন । চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো ।
হঠাৎ সৈকত উপস্থিত । সরাসরি বাইকে তার আগমন । আচমকা আসার একটাই কারণ, আসান রামপুরহাট থেকে বাড়ি ফিরেছে অথচ পৌঁছানোর খবর তাকে দেয়নি । খবর না পেয়ে সৈকতের আবির্ভাব । কিন্তু বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আসানকে ডাকতে যাবে, এমন সময় ইতাসের মুখোমুখি । সৈকতেকে নতুন লোক ভেবে ইতাসের প্রশ্ন, “আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না । কাকে খুঁজছেন ?”
আসানকে খুঁজছি । বাড়িতে থাকলে তাকে একবার ডেকে দেবেন প্লিজ ?
“আসানকে কেন ? আসানকে আপনি কীভাবে চেনেন ?” ইতাস সৈকতকে উকিলের জেরা শুরু করে দিলো ।
ঠিক সেই সময় হন্তদন্ত হয়ে ইমলি ব্যাঙ্কের উদ্দেশে বের হচ্ছে । সৈকতকে দেখে ইমলি উল্টে ইতাসকে প্রশ্ন করলো, “তুমি কার সঙ্গে কথা বলছো ?”
সৈকত নিজেই উত্তর দিলো, “আন্টি, আমি সৈকত ।“
“আরে সৈকত !” খুশীতে ইমলির চোখ-মুখ ভরপুর ।
ইতাস ইমলির কাছে জানতে চাইলো, “তুমি সৈকতকে চেনো নাকি ?”
“নামের সাথে পরিচিত । আমাদের বাড়িতে সৈকত আজ প্রথম । যার জন্য তাকে প্রথম দেখলাম ।“ তারপর ইতাসের দিকে তাকিয়ে বললো, “তুমি সৈকতকে নিয়ে ভিতরে যাও ।“ তারপর পুনরায় সৈকতের দিকে তাকিয়ে ইমলি বললো, “তুমি দুপুরে খেয়ে যাবে । না খাইয়ে তোমাকে ছাড়ছি না ।“
তা হয় না আন্টি । আর একটু গেলেই আমাদের মালডাঙা । আমি বরং বাড়িতে গিয়ে দুপুরের খাবার খাবো ।
তারপর ইতাস সৈকতকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো । ইতাস আন্দাজ করতে পারছে, সৈকত তাদের বাড়ির একজন গুরুত্বপূর্ণ অতিথি ।
ইতাসের বাবা সৈকতকে দেখে খুশীতে আত্মহারা । তাই তিনি বললেন, “দাদুভাই, আমার ছেলের বাড়িতে তোমাকে দেখার সৌভাগ্য হবে কল্পনার অতীত ।“ তারপর আবার বললেন, “তুমি বসো । আমি আসানকে ডাকছি ।“
ইতাস আবার তাজ্জব ! তার বাবা পর্যন্ত সৈকতকে চেনেন । অথচ সে একমাত্র মানুষ যে কিনা সৈকতকে চেনে না । এখন ইতাসের কাছে পরিষ্কার, সৈকত আসানের খুব কাছের মানুষ । তাই সৈকতকে যথাযোগ্য মর্যাদায় আপ্যায়ন শুরু করলো ।
সৈকতকে দেখার পর ইতাসের একটা ব্যাপারে খুব খটকা ! অনেকটা দীপালির মতো দেখতে । কথার মধ্যে দীপালির কথার অনেক মিল । তাই বারংবার ইতাসের মনে প্রশ্ন জাগছে, তবে কী সৈকত দীপালির ছেলে ? আবার নিজের মনকে নিজেই সান্ত্বনা দিয়ে বলে এটা তার মনের ভুল । দীপালির ছেলে এখানে কেন আসবে ? তার ছেলে দার্জিলিং থাকে । সেখানে তার পড়াশুনা, বেড়ে ওঠা । সুতরাং দীপালির ছেলে কী করতে বর্ধমান আসবে ? ইতাসের এতসব ভাবনার মধ্যে আসান এসে জুটলো । কোথা থেকে দৌড়ঝাঁপ করে সে ভীষণ পরিশ্রান্ত । পরে জানতে পারলো, সৈকতের জলখাবারের জন্য মিষ্টির দোকানে ছুটেছিল ।
“বাবা, ইনি সৈকত । আমাদের মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ।“ আসান আলাপ করিয়ে দিলো ।
সৈকতের দিকে তাকিয়ে ইতাস বললো, “তুমি বসো সৈকত । আমি বরং ভিতর থেকে হাত মুখ ধুয়ে আসছি ।“
আসান এবার সৈকতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “আপনি বর্ধমান থেকে কখন বের হয়েছেন ?”
সকালেই বের হয়েছি । রাস্তায় বন্ধুর সঙ্গে দেখা হওয়ায় কিছুক্ষণ গল্প করলাম । তারপর তোমাদের বাড়ি আসা ।
বাড়ি চিনতে অসুবিধা হয়নি তো ?
আইসক্রিম বাড়ি সকলের চেনা । তাই বাড়ি চিনতে কোনো অসুবিধা হয়নি । কিন্তু তুমি দাদু ঠাকুমাকে নিয়ে বাড়ি ঢোকার পর আমাকে অন্তত একটা খবর দিতে পারতে ? আমি খুব চিন্তায় ছিলাম ।
সরি ! আমার ভুল হয়ে গেছে । বাড়ি ফিরে নানান কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি । খবর দেওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম । এটাও ঠিক, খবরটা দিলে আপনি আমাদের বাড়িতে পায়ের ধুলো দিতে আসতেন কিনা সন্দেহ ?
দয়া করে “আপনি” সম্মোধন বন্ধ করুন । এখন থেকে শুধু “তুমি” ।
যথা আজ্ঞা স্যার ।
উঁহু, স্যার নয় । নাম ধরে ডাকবে, শুধু সৈকত । তোমার মুখে সৈকত নামটা শুনতে বড্ড ভাল লাগে ।
ঢঙে বাচি না !
তোমার মুখ ভেঙচিটাও অভূতপূর্ব । সোহাগিনির মতো ।
ইতিমধ্যে ইতাস পুনরায় তাদের মাঝখানে এসে উপস্থিত । আসানের উদ্দেশে ইতাস বললো, “বাবাজী এসেছে । তাকে চা বা কফি কিছুই খাওয়াসনি । তাকে কিছু খেতে দিবি তো ?”
হ্যাঁ বাবা । আমি কফি বানিয়ে আনছি । কিন্তু বাবা ?
আবার কিন্তু কেন ?
সৈকত ব্ল্যাক কফি ভালবাসে । তোমার জন্য দুধ দিয়ে কফি বানাবো কী ?
আজ সবাই মিলে ব্ল্যাক কফি খাই । এটা সৈকতের সম্মানে হোক ।
মাথা নেড়ে আসান বললো, “ঠিক আছে বাবা ।“
সৈকতের দিকে তাকিয়ে ইতাস নানান প্রসঙ্গে কথাবার্তা শুরু করলো । হঠাৎ সৈকত ইতাসকে জিজ্ঞাসা করলো, “আচ্ছা কাকু, আপনি আইসক্রিম তৈরীর রসায়ন কীভাবে শিখলেন ?”
কিছুটা আগে থেকে জানা ছিল, বাকীটা অভিজ্ঞতায় ।
আইসক্রিম তৈরীর উপাদানের মিশ্রণ জানাটার উপর নির্ভর করে আইসক্রিমের কোয়ালিটি । কোয়ালিটি ভাল হলে মার্কেটে বিক্রিবাট্টা ভাল হতে বাধ্য ।
তোমার আইসক্রিম সম্বন্ধে কোনো ধারণা বা অভিজ্ঞতা আছে কী ? যার জন্য তোমার জানার কৌতুহল !
ছোটবেলায় আইসক্রিম খেয়ে দেখেছি মালডাঙার আইসক্রিম অতোটা ভাল ছিল না । প্রয়োজনীয় কোয়ালিটির বড্ড অভাব ছিল । তখন নানান জনে নানান কথা বলতেন । সেখান থেকেই শোনা, আইসক্রিম তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের সঠিক মিশ্রণ জানা দরকার । নতুবা আইসক্রিমের গুণমানের অভাব ঘটে ।
“ছোটবেলায় তোমার পড়াশুনা কোথায় ?” অন্য প্রসঙ্গে চলে এল ইতাস ।
ইতিমধ্যে কফি নিয়ে হাজির আসান ।
কফিতে চুমুক দিয়ে সৈকত বললো, “ছোটবেলার কাহিনী লম্বা ।“ আসান বড় বড় চোখ করে সৈকতের দিকে তাকিয়ে । তার কথা শোনার জন্য আসান উদগ্রীব ।
তারপর সৈকত কিছুটা ম্লান মুখে বললো, “একেবারে ছোটবেলায় বাবা মারা যান । তারপর মায়ের হাত ধরে বেড়ে ওঠা । গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের পড়াশুনা অসমাপ্ত রেখে চলে যাই দার্জিলিং । সেখানে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে হায়ার সেকেন্ডারি পর্যন্ত পড়াশুনা । তারপর ডাক্তারী পড়ার সুযোগ । সেটা নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজে । সেখান থেকে ডাক্তারী পাশ । তারপর এম.ডি. করি কটক (উড়িষ্যা) থেকে । পাশ করার পর প্রো-ডকে ভর্তি হওয়ার সাথে সাথে বর্ধমানে এই চাকরি । এখন চাকরিসূত্রে বর্ধমানে থাকি ।
তবে মালডাঙ্গায় কে থাকেন ?
মালডাঙ্গার বাড়িতে মা থাকেন । বাড়ির নীচ তলায় দোকান । মা ব্যবসা ও জমি জায়গা একাই সামলান ।
ইতাস এতক্ষণে নিশ্চিত হল, সৈকত দীপালির একমাত্র ছেলে । দীপালি প্রথমদিকে আলাপ হওয়ার সময় বলেছিল, তার ছেলে দার্জিলিং কনভেন্ট স্কুলে পড়ে । সুতরাং দীপালি তার ছেলের ব্যাপারে যেসব কথা বলেছিল, সেগুলি হুবহু মিলে যাচ্ছে । তবুও ইতাস বুঝতে দিলো না, সে সৈকতের মাকে চেনে । জানাজানি হলে ইমলি ইতাসকে নিয়ে অহেতুক উলট-পালট ভাবতে পারে, এইজন্য ইতাস আবার অন্য প্রসঙ্গে আলোচনা শুরু করলো । “তুমি কী তোমার মাকে কোয়ার্টারে নিয়ে যেতে চাইছো ?”
সেরকম ইচ্ছা নেই । তা ছাড়া মা বর্ধমানে গিয়ে থাকতে রাজি হবেন না । তিনি বাড়ি ছেড়ে কোথাও থাকতে চান না । বরং মায়ের ইচ্ছা, আমি মালডাঙ্গায় গিয়ে নিয়মিত চেম্বার করি ।
চেম্বারের ব্যাপারে তুমি কী সিদ্ধান্ত নিলে ?
গাঁয়ে চেম্বার খোলার ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি । এই সব সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া যাবে ।
ইতিমধ্যে আসান তার বাবাকে বললো, “দুপুরের খাবার রেডি । তুমি এবং সৈকত স্নান সেরে খাবার খেয়ে নাও ।“
ইতাসও সৈকতকে বললো, “চলো এবার স্নান সেরে খাবার খাওয়া যাক ।“
খাওয়া দাওয়ার পর সৈকত ও আসান বাইকে ঘুরতে বেরিয়ে গেল । উদ্দেশ্যহীনভাবে তাদের ঘোরাঘুরি । কিন্তু সৈকত আসানকে প্রস্তাব দিলো তাদের বাড়ি মালডাঙা যাওয়ার জন্য ।
আসান রাজি নয় । আসানের মতে, সৈকতদের বাড়ি যাওয়ার সময় নাকি এখনও হয়নি । তাই সৈকতের প্রস্তাবে আসান গররাজি !
অগত্যা দুজনে মালডাঙা ছাড়িয়ে সোজা ভাগীরথী গঙ্গার পারে । মালডাঙা ছাড়ানোর পর আসান রাস্তার দুদিকের দৃশ্য দেখে অভিভূত । চারিদিকে মূলত ধান চাষের জমি । রাস্তার দুধারে বিভিন্ন ধরনের গাছ । রাস্তার পাশে একটা বড় জলাশয়ও আসানের চোখে পড়লো । জলাশয়গুলি কচুরিপানায় ছেয়ে গেছে । কাটা জাতীয় বাবলা গাছের প্রাচুর্য উল্লেখ করার মতো । দাঁইহাটের চৌরাস্তা পার হয়ে দাঁইহাট বাজার । আসানের কাছে এমনকি সৈকতের কাছে জায়গাটা নতুন । দাঁইহাটের ঘর বাড়ি দেখে তারা সহজেই অনুমান করতে পারছে, জায়গাটা খুব পুরানো । দাঁইহাট বাজার পার হয়ে গঙ্গার ঘাট যাওয়ার রাস্তা । তারা জানতে পারলো, আগে ভাগীরথী গঙ্গা দাঁইহাট বাজার পর্যন্ত প্রসারিত ছিল । সেই সময় গঙ্গাবক্ষে বড় বড় পাল তোলা বজরা দেখা যেত । কাঠের তৈরী কামরা ও ছাদযুক্ত নৌকা ব্যবসার কাজে লাগতো । বড় বড় বজরা সেই সময় দাঁইহাটের ভাগীরথী গঙ্গার পারে ভিড়তো । সেই সময় দাঁইহাট বাণিজ্যের নিরিখে গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল । কথিত আছে, বারোটা হাটের সমন্বয়ে নাকি দাঁইহাট । কয়েকটা হাটের নিদর্শন যেমন পানুহাট, একাইহাট, পাতাইহাট, ইত্যাদি এখনও বর্তমান ।
বিশাল বড় গঙ্গা । মাঝখানে আবার চরা । ওপারে নদীয়া জেলার মাটিয়ারী গ্রাম । সেখান থেকে দেবগ্রাম (নদীয়া) যাওয়া সহজ । খেয়া নৌকার পাশাপাশি ছোট ছোট ডিঙি নৌকা গঙ্গার উপর দিয়ে এপার ও ওপার করছে । তাড়াতাড়ি গঙ্গা পার হওয়ার জন্য ছোট ডিঙি নৌকার ব্যবহার খুব জনপ্রিয় । ডিঙ্গি নৌকা দেখতে পেয়ে আসান খুব খুশী । সৈকতের কাছে আসানের আবদার ডিঙি নৌকায় ঘোরাঘুরি করার । অগত্যা সৈকত রাজি হল । সৈকতের গঙ্গা বা নদীর জলে ভীষণ ভয় । সে সাঁতার জানে না । তাই প্রথমে মৃদু আপত্তি ছিল । কিন্তু আসানের জেদাজেদিতে গঙ্গায় ডিঙিতে ঘোরাঘুরিতে রাজি হল ।
সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়েছে । তাই সৈকত ডিঙিতে বেশীক্ষণ ঘুরে বেড়ানোর পক্ষপাতী নয় । তার সাফ কথা, এক ঘন্টার বেশী নৌকায় ঘোরা যাবে না । এক ঘন্টার চুক্তিতে নবারুনের ডিঙি নৌকা ভাড়া হল । সৈকতের জীবনে এই প্রথম ডিঙি নৌকায় ওঠা । সে ছোটবেলা থেকে পাহাড়ি অঞ্চলে মানুষ । ডাক্তারী পড়া চলাকালীন ডিঙি নৌকায় ওঠার সৌভাগ্য হয়নি । নদী, পুকুরে কোনোদিন স্নান করেনি । ফলে ডিঙি নৌকায় ওঠা তার প্রথম অভিজ্ঞতা ।
নবারুন সৈকতের বাইক পিয়ালিদের বাড়িতে রেখে খেয়া ঘাটে ডিঙি ভেড়ালো । গঙ্গার পারের দোকানদার থেকে পার হওয়ার যাত্রীরা পর্যন্ত তাদের ডিঙিতে ওঠার কায়দা কানুন দেখছিলেন । সকলের কৌতূহলি দৃষ্টি তারা কীভাবে নৌকায় উঠছে । অগত্যা আসান নৌকায় উঠে মাঝখানে বসে পড়লো । এবার সৈকতের ডিঙিতে ওঠার পালা । পরনে টাইট প্যান্ট শার্ট । পায়ে রেবকের জুতো । নবারুন নৌকার দড়ি ধরে এমনভাবে টেনে রেখেছে যাতে নৌকা দূরে সরে যেতে না পারে । সৈকত প্রথমে বা-পা এগিয়ে দিলো, কিন্তু ডান-পা নৌকায় তোলা মাত্রই ডিঙি নৌকা দুলতে লাগলো । নৌকা দোলার সাথে ব্যালন্স রাখতে না পেরে সৈকত তার পেছন দিকে উল্টে পড়ে গেল । গঙ্গার পারে যথেষ্ট কাদা । কাদায় পড়ে গিয়ে পা পিছলে সোজা গঙ্গার জলে হাবুডুবু । তারপর …?
 ( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here