প্রভুপাদ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, এক আশ্চর্য মহাজীবন কথা (পর্ব-২) : রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক।

0
1047

………….প্রভুপাদ বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী তখনকার মতো শিরোমণি মহাশয়কে তিলক প্রসঙ্গে নিয়ে আর আলোচনা চালাতে দিলেন না। ‘ভেবে দেখবো’ বলে ইতি টানলেন সেই বিতর্কের। কিন্তু তাঁকে আর ভেবে দেখতে হয়নি। কারণ শ্রী অদ্বৈত আচার্য্য নিজেই তাঁর সামনে প্রকট হয়ে কেমন ভাবে তিলক আঁকতে হবে তা দেখিয়ে দেন। সেই মতই তিলক করতে থাকলেন প্রভুপাদ । প্রভুপাদের এই ঠিকঠাক তিলক ধারণ দেখে বৃন্দাবনের বৈষ্ণবরা আশ্বস্ত হলেন এই ভেবে যে, যাক এক নতুন উপসম্প্রদায় তৈরি হওয়া থেকে রক্ষা পেল গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়।

এবার আসি মালা প্রসঙ্গে। বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামীপাদ পদ্মবীজ, তুলসী ও রুদ্রাক্ষ—এই তিন প্রকার মালা ধারণ করতেন। ব্রজের বৈষ্ণবরা এই নিয়ে প্রশ্ন করলেন যে, বৈষ্ণব হয়ে শৈবদের মত রুদ্রাক্ষ ধারণ করা কি ঠিক ! প্রভুপাদ তখন ‘ভক্তিরসামৃতসিন্ধু’ ও ‘হরিভক্তিবিলাস’-এর মত গ্রন্থ যা বৈষ্ণবদের ভজনীয় আচরণবিধি শিক্ষা দেয়—-এমন মহাগ্রন্থদ্বয় থেকে শ্লোক চয়ন করে প্রমাণ দেখালেন যে বৈষ্ণব হয়ে রুদ্রাক্ষের মালা গ্রহণ না করাই বরং শাস্ত্রবিরুদ্ধ আচরণ ।

“যে কন্ঠলগ্নতুলসীনলিনাক্ষমালাঃ।
যে বা ললাটফলকে লসদুপুর্দ্ধন্ড্রাঃ।।
যে বাহুমূলে পরিচিহ্নিতশঙ্খচক্রাঃ।
তে বৈষ্ণবা ভুবনমাশু পবিত্রয়ন্তি।।”

(হরিভক্তিবিলাস ৪র্থ বিলাস ১২৩,শ্লোক তথা ভক্তিরসামৃত সিন্ধুকৃত
নারদসংহিতাবচন)

“পদ্মক্ষৈশ্চাপি রুদ্রাক্ষৈবিদ্রুমৈর্মনিমোক্তিকৈঃ।
তত্রবীজময়ীমালা সা শস্তা জপকর্ম্মণি।।”

(হরিভক্তিবিলাস ১৭বিলাস , ৩১,শ্লোক)

না এখানেই শেষ নয় । এবার বিতর্ক শুরু হলো বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর পরিধেয় বস্ত্র নিয়ে। তিনি গৈরিক বস্ত্র পরিধান করতেন। বৈষ্ণবরা বললেন, গৈরিক বস্ত্র শাস্ত্রবিরুদ্ধ পরিধান। প্রভুপাদ যুক্তি দিলেন—- কখনোই নয়। তা যদি হত, তবে মহাপ্রভু পরিধান করতেন না! তিনি শাস্ত্রপ্রমাণ দিয়ে দেখালেন যে , দন্ড, কমন্ডুল ও গৈরিকবস্ত্র শাস্ত্রে বৈষ্ণবলিঙ্গ নামে কথিত হয়েছে। আর তাই বৈষ্ণব মাত্রেই বরং এই বৈষ্ণবলিঙ্গ সকল গ্রহণ করা বিধেয়। অতএব, শাস্ত্রের প্রমাণ এ প্রসঙ্গে বাক্যব্যয় বন্ধ করলো।

এ তো গেল বৈষ্ণবধর্ম অঙ্গীকার করার পর বিতর্কের কথা। এর আগে তো বিতর্কের আরও বড় এক অধ্যায় বর্তমান। শান্তিপুরের গোস্বামীবাড়ির সন্তান হয়ে তিনি যে ব্যতীক্রমী পথে হেঁটে ছিলেন তা সর্বসাধারণের কাছে ছিল এক বিচিত্র ব্যাপার । প্রকৃতঃই অভাবনীয় তা।

এবার আসবো সে প্রসঙ্গে।

——–ক্রমশঃ
-্—-ভক্তকৃপাপ্রার্থিনী
——রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক