তেল-নুন-হলুদ মাখানো অক্ষরের নদী,নৌকা ও পারাপার : শুভঙ্কর দাস।

0
411

“স্বর্গের সিঁড়িকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে
একটি আঁচল মাটিতে পেতেছে,রোদের সংসার…

নিশ্চিত শোক সেখানে উল বোনে,দুঃখ নিতে আসে রোজ অশ্রুর মাপ,সুখ পোষা বিড়ালের মতো পড়ে থাকে ধুলোজমা কোণে…
তবুও ছায়ায় ছায়ায় এক মনুহীনা মানবী মনে মনে

রক্তমাংসের বুকে জাগিয়ে তোলে, চমৎকার!”

সেই চমৎকার হল কবিতা।
জন্মযাত্রার পথ কোনো মানুষ নিজে থেকে সৃজন করতে পারে না,পছন্দ করতে পারে না,সহসা দ্বার উন্মোচিত হলে দেখে নিতে তৃণের মুখ।পিঁপড়ের সখ্যত।মাটির আলিঙ্গন।
সে পথিক মাত্র। এই সুপ্রাচীন চক্রলীলায় সে সামান্য, অতি সামান্য একটি চাকার অংশবিশেষ। যেহেতু জন্মদণ্ড তার নিজের হাতে নেই, তাই রক্তমাংসের পিতা-মাতা ছাড়াও তাকে শিখতে হয় সংসার।এখানে একজন মাত্র কবিতা লেখে।তা হল মায়া।শুরু সেই শিশুর সহস্র আয়না হওয়ার পরিক্রমা। সে দেখল,তার যা যা নিজের ক্ষেত্রে অভিনব মনে হয়েছিল, তা আসলে এই পোড়া সংসারে হাস্যকর ও হাহাকারসম অনুকরণ মাত্র। সে যাই করে,তার অনেক অনেক কাল আগে সেই তপোবনের যুগ থেকে মায়া মুচকি হেসে করে যাচ্ছে এবং যাবেও…
তাহলে এই গতানুগতিক ও দৈনন্দিন ঘষামাজার জীবনে তার হাতে কী রইল?
একটি মাত্র উত্তর, চমৎকার।
কী এই চমৎকার? তা কী করে সম্ভব? মায়া যেমন মুচকি হেসে নীরবে ও নিঃশব্দে কাজ করে যাচ্ছে, অপরিহার্য অপরিবর্তনীয় নিয়ামক হিসেবে। এবার সেই মানুষ-জন্মের অনুভূতি পালা,অর্থাৎ কবিত্বের কাল শুরু।সেও মায়ার দিকে মুচকি হেসে ফিরিয়ে দিল চমৎকার। মায়া জীবন-যাঁতাকলে যাকে দুঃখ বলে চালিয়েছিল, কবি তাকেই রৌদ্রের বারান্দা করে দিল।যাকে বলেছিল বিষাদ, তাকে করে তুলল,সহ্য-বসন্তের সুগন্ধি ফুল।যাকে করেছিল অসুখ,তাকেই করে তুলল নিরাময় নদীর ঢেউ, যাকে করেছিল মৃত্যু, তাকেই বানিয়ে তুলল স্মৃতিশস্য নবান্ন।
একে কি চমৎকার বলা যাবে না!
আসলে প্রতিটি মানুষ কবিতা লিখছে,কেউ কটাক্ষে,কেউ অশ্রুতে,কেউ অধিকারে,কেউ চিৎকারে, আবার কেউ গুহার নীরবতায়।যা লেখা হচ্ছে, তাতো সমগ্রতার স্বরূপতা।একার কালি-কলম-মন একক অনুভূতিদেশ থেকে কখনো আকাশের,কখনো পাহাড়ের আবার কখনো সামান্য মুথা-ঘাসের হয়ে সমবেত সংগীত হয়ে প্রকাশিত হচ্ছে।
সে গুহা হোক, তপোবন হোক অথবা সাধনার সবচেয়ে উঁচু স্তর হোক, আগুন থেকে আসা বা আগুনে সমাহিত হোক,সবকিছু শেষে একটাই কথা সূচনা এবং সমাপ্তি, তা হল সংসার।
সেই তেল-নুন-হলুদের সংসারগাথা নির্মাণ করেছেন নিমফুলের নূপুর নির্মাণকারী কবি শুভ্রাশ্রী মাইতি।
তাঁর ‘মগ্ন জলের মুহূর্তেরা’ নামক অনুভূতিমাটির ঘরকন্না দিয়ে।তিনি ধাত্রীবিদ্যার মূলসুরকে কবিতার ভূমিকালিপি করেছেন—

“দৃশ্য তো আলোছায়ার বন্দি
পানকৌড়ি ডুব টুপ টুপ
মগ্ন জলের মুহূর্তেরা কথা বলে ওঠে”

আসলে মাতৃগর্ভ তো ঈশ্বর চেতনার সবচেয়ে বড় লীলভূমি।তার মতো মগ্নজলের পৃথিবী আর কি হতে পারে? সেই জন্মবীজের পথ ধরে আবেশ ও আনন্দের কবিতা লেখা শুরু, মুহূর্তের পদাবলি শুরু,তার শেষ কোথায়,কেউ কি জানে? মাঝেমধ্যে এমন জীবনের যাত্রা সূচিত হয়,আবির্ভাব হয়,যার সামনে স্বয়ং সময় মাথা নত করে দাঁড়ায় এবং আগুনও ছাইয়ের সঙ্গে সন্ধি করে নিয়ে সমীহ করে চলে।এ জীবন তো মহামানবের… কিন্তু এই যে দৈনন্দিন দহন ও বহনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জোনাক-জীবন, তার কথা কে তুলে ধরবে সময়ের পৃষ্ঠায়? এখান থেকেই কবি শুভ্রাশ্রীর মনন খনন শুরু,তিনি অতি সচেতনভাবে অতি সরলতায় সেই আটপৌরে অল্প-আয়ুর পিদিমপৃথিবীর গান নিজস্ব সাধ্য ও সাধনে লিপিবদ্ধ করেছেন,তাই তাঁর কবিতার পাতা ওলটালে মনে হয়,আরে এতো ঘরে ফেরার অপেক্ষা, এতো ঘরকে আকাশ করার প্রচেষ্টা এবং সংসারের মূল সুবর্ণ সুতো সম্পর্ক, তাকে লালন-পালন করার ঐকান্তিক আত্মনিবেদন—

” রোদজলে ভেজা মাটির মানুষেরা ভিড় করে আসে চারপাশে
পাতার আত্মীয়তায় বাড়িয়ে দেয় হাত,আশ্বাসের…

আমার ঝোলাটা ভরতে থাকে,ভরতেই থাকে আশ্চর্য নিরাময় রোদ্দুরে…

এই সময়ের দুঃসহ ও দুর্দমনীয় অসুখ-অন্ধকারে নিরাময় রোদ্দুর তো একমাত্র প্রার্থনা। তারপর যে ‘ঝোলা’ র কথা বলা হয়েছে, তা আসলে সেই ঠাকুমার ঝুলির মতো,যা রঙচটা ছেঁড়া মাদুরে শিশু -ভারতকে দৈন্য নয়, রূপকথার সত্যিকারের সৈন্য করে তোলে।

কবিতার সংজ্ঞা বলতে গিয়ে এই সময় মহাজাগতিক কবি সুধীর দত্ত বলেছেন, “কবিতা এক অন্তরাবৃত্ত রহস্যময় খননপ্রক্রিয়া।অনুভবের ও অভিজ্ঞতার। নিজের সঙ্গে সংঘর্ষ ও সহবস্থান, জগতের সঙ্গে তার সম্পর্কের দ্বান্দ্বিকতার নির্মাণ। ”
এইখানে নিজের সঙ্গে নিজের সংঘর্ষ ও সহাবস্থান শুরু হয় সংসার থেকেই..
মানবসভ্যতার ইতিহাসে যে যেখানেই বৃহৎ ও মহৎ নির্মাণ হয়েছেন,তাই সংসার থেকেই সূচিত হয়েছে, নির্মিত হয়েছে। তাই সংঘর্ষ ও সহবস্থান একান্ত প্রয়োজন। এছাড়া সার্থক মানুষ হওয়া কঠিন।
আচ্ছা,সংঘর্ষের স্বরূপ আমরা কীভাবে দেখব কবিতার মাটিতে—

“প্রতিটি ঝড়ের শেষে…

এই তো ডানাভাঙা ঝড়ের পাখিটির গায়ে
সহজ সকাল শান্ত হাতে লাগিয়ে দিচ্ছে সোনালি রোদ্দুরের মাখন প্রলেপ…
চাষীঘামে ভেজা বাতাস গভীর স্নেহে বুলিয়ে দিচ্ছে নিরাময়-শীতল ধাত্রীহাত…”

কিন্তু সংঘর্ষ তো শেষ কথা নেয়,সংসারে,নির্মাণে।মহাত্মা বলেছিলেন,চোখের বদলে যদি চোখ নেওয়া শুরু করে জীবন,তাহলে পুরো পৃথিবীটাই একদিন অন্ধ হয়ে যাবে।এই হল সারসত্য মানবসভ্যতার… একই শ্বাসে,একই মাটিতে,একই নদীর জলে শুশ্রূষা মেখে এই পার্থিব আয়ু নিয়ে যেতে উপহার হিসেবে আগামী বীজপত্রের কাছে।
দুর্ভেদ্য জঙ্গলে পরিবৃত হিংস্র জন্তুর মধ্যে অন্যতম নেকড়ে।নেকড়ের তীক্ষ্ণ নখের থেকেও সূচালো ও ধারালো হল সামাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন।পশ্চিম দুনিয়া সরল, সহজ আফ্রিকার ওপর বর্বরোচিত উল্লাসে ঝাঁপিয়ে পড়ে তছনছ করে দিয়েছিল গোটা মানবিক সত্যিকে,নষ্ট করেছিল তার প্রাকৃতিক পবিত্রতা। গর্বে ও অহংকারে আফ্রিকার জঙ্গলের চেয়েও অন্ধকার ডেকে এনেছিল শাসক ইংরেজ।তারপরও বিশ্বহৃদয় কবি রবীন্দ্রনাথ একথাই বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন,
“এসো যুগান্তের কবি
আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাতে
দাঁড়াও মানহারা মানবীর দ্বারে
বলো,ক্ষমা করো”
সেই ক্ষমাই হল সহবস্থান। যা একটি দেশ গঠনে,সমাজ গঠনে সবচেয়ে বড় ব্যাপার সংসার নির্মাণে শেষ কথা।হাতের পাঁচটি আঙুলের মতো আমাদের সম্পর্কের রসায়ন।প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের নানা রকম রহস্যময় ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রভাব নিয়ে সতর্ক ও সাহসী হতে হয়।না হলে সংসার তলিয়ে যাবে আস্তাকুঁড়ের অন্ধকারে।সংসারই এমন জিনিস,যেখান থেকে সমাজ,বিশ্ব এবং বিবেক সৃষ্ট হয়।তাই সংসারের সহবস্থান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাই দেখতে পাই এভাবে—

“খুচরো দহনব্যথার সলতে পাকিয়ে জ্বেলে দিই, সন্ধ্যার
অমনি শঙ্খ-ঘন্টা বেজে ওঠে কোথাও আশ্চর্য সমপর্ণে
আরতি-আরাধনা শুরু হবে এখন জীবনের,আবার…”

চরণগুচ্ছের শেষে একটি মাত্র শব্দের যে ব্যবহার,’আবার’ এতেই সার্থক জীবনবোধ প্রতিভাত।কবির শব্দ ব্যবহারের চমৎকারিত্ব প্রস্ফুটিত। অবশ্যই এতেই শেষ নয়,এরকম অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যায়,
‘নরম বরাভয়’,’নিরাময় হাসি’,’ইলশেফোঁটা বৃষ্টি ‘,’মেঘের তোরঙ্গ’,’আত্মীয় বাতাস’,’পাতাঘন জারুলের ঠোঁট’,’মেঘনরম মন্ত্র’,’ নরম কলাপাতা রোদ’,’বসন্ত বিশ্বাস’ প্রভৃতি সালংকারায় ভরে আছে কবিতার পর কবিতা।

কিন্তু সে সংঘর্ষ হোক বা সহবস্থান, এ সবই একটি বোধের চক্ষুতে সঞ্চারিত, তা হল অনুভব।
আর অভিজ্ঞতা পরশে পরশে খাঁটি সোনা হয়ে ওঠে।আর এখানেই কবি শুভ্রাশ্রী মাইতির কলম কখনো বারান্দার উড়ে আসা পাখির পালক,কখনো কার্নিশে ডেকে যাওয়া দুটি শালিক,কখনো ছাদের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা কনে-দেখা আলো অথবা রান্নাঘরে র আলু-পেঁয়াজের কাটাকুটি হয়ে সার্থকভাবে প্রকাশিত। তিনি যেন সেই চির পুরাতন সম্পর্কের রামধনু রসায়নকে তুলে ধরেছেন এই যান্ত্রিক ও যাতনাময় জীবনের পলিমুখে।জীবনানন্দীয় গভীর অসুখের সঞ্জীবনী সুধা হিসেবে তাঁর চেষ্টা যথেষ্ট আন্তরিক ও আলোকিত।
তাহলে সম্পর্কের রসায়ন দিয়ে কবি শুভ্রাশ্রী মাইতির কবিতার মগ্নতা, জলীয় ঘ্রাণ এবং সর্বোপরি মুহূর্তে মাধুরিকণা সন্ধান করলে দেখা যায়,

মাতা

” মা দখিনা হাওয়ায় ভর করে কানের পাতায়
উচ্চারণ করতেন পৃথিবী-মন্ত্র,পুরাতনী —
“ভালোবাসো,ভালোবাসো আর শুধু ভালোবাসো”

“মা,মহাকালের নৈবেদ্য থালায় একে একে সাজিয়ে রাখতেন”

” মায়ের গায়ে একটা নিজস্ব গন্ধ থাকে”

” আলোপদ্ম হয়ে ফুটে আছে মা শালুকপুকুরে”

প্রায় প্রতিটি কবিতার অভ্যন্তরে কবি শুভ্রাশ্রীর মাকে অনুসন্ধানের এক নিবিড় মগ্নতা লক্ষ্যণীয়।এ যেন নিজের উৎসে গিয়ে নিজের পরিচয়লিপি নির্মাণ।

পিতামহ

” বিল্বপত্র স্পর্শ করলে সূর্য নেমে আসে জিভের আসনে
একথা ঠাকুদার কাছেই শোনা সেই কোন্ রোদের নোলক পরা নরম কাশফুল সকালে”

পিতামহী

” ঠাকুমা রাতআকাশের স্নেহহাতের আদুরে দোলে ভরে দিতেন ছোট ছোট এলাচ কুচি,নক্ষত্রের ”

প্রপিতামহ

” চড়কপুজোর মাঠে আর ছায়াময় উঠোনের
প্রপিতামহ জামগাছের চিরহরিৎ পাতাগুলো”

দিদি

” দিদিকে দেখলে এক আশ্চর্য সোনালি সকাল/শালুকপুকুরের ভেজা পাড় ছুঁয়ে ঘিরে ধরে আমায়”

পিতা

” বাবা সুর করে পড়তেন আলোর ব্রতকথা, জন্মের”

স্বামী

” ব্যস্ত স্বামী বসন্তদিনের সোনালি খবর আনবেন বলে দুগ্গা দুগ্গা হাওয়ার পিঠে চেপে বেরিয়ে গেলেন”

শাশুড়ী

” আমার শাশুড়ী শান্ত আকাশ হয়ে সব দেখলেন চুপচাপ ”

ননদ

” আমার ননদ চাঁপার গন্ধ মেখে লাজুক পায়ে”

সন্তান

” আমার আদুরে মেয়েটা ফুল আর চঞ্চল ছেলেটা পাখি”

ভাইবোন

” রোগা রোগা ভাইবোনগুলোর ক্ষিদের পাতে নামবে স্নেহস্বাদের পরম তৃপ্তি ”

এতো একেবারে ঘরের ভেতর তস্য ঘরের মহিমা এইভাবে প্রকাশিত, যা অনুভব ছাড়া উৎসারিত করা সম্ভব নয়। কিন্তু কবি শুভ্রাশ্রী যিনি সুবর্ণ সুতোর সম্পর্কে নিমফুল দিয়ে অনুভবের নূপুর বানাতেন পারেন, তিনি সেই সহজিয়া ও একতারা সম্পর্ককে সুবিস্তীর্ণ করে তুলেছেন পরম মায়া ও মননশীলতায়—

এক।

“পুকুরপাড়ে অভিমানী কলমি আর হিলঞ্চের বিছানো আঁচল”

দুই

পাখির ভাষাই আমার মাতৃভাষা ”

তিন

মাটিসোহাগি আলপনায় ভরে উঠত আমার পা”

চার

নুয়ে পড়া বাঁশবাগানের ছায়াঘন আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে ”

পাঁচ

মিঞা কি মলহার ধরেছেন রশিদ খান বৃষ্টিতারে…”

ছয়

ভাঁড়ারের জমানো মেঘগুলো অফুরন্ত কান্নার চোখ এঁকে চলে দিনরাত”

সাত

“নরম শিশিরে মুখ ধোওয়া কচি শশারা কুটিকুটি হেসে গড়িয়ে পড়ছে..”

অর্থাৎ জীবনানন্দের যেরকম বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে অর্ধনারীশ্বর হয়ে তিনি চিরদিন বেঁচে থাকতে চেয়েছেন,তেমনি কবি শুভ্রাশ্রী সেই চিরন্তনী সুরের ধুয়া ধরে সন্ধান করেছে মরমি মুহূর্তগুলোকে, যা আসলে নতুন পৃথিবীর জন্ম দেয়।

শেষ পর্যন্ত কবি শুভ্রাশ্রী মাইতি যেন সমগ্র মানবসত্তার অন্তরে বসে জেগে উঠেছেন এইভাবে—

“ছোট ছোট মানুষ, ছোট ছোট দুঃখব্যথার জীবন
তেল-নুন-হলুদের চেনা-অচেনা ছাপছোপ
দানা বাঁধতেন থাকে আবেগ, অক্ষরমালা
শব্দ আর বাক্যের আশ্চর্য বিশালতায়”

এই সবের মধ্যে পুরাতনী সুর শুধু নয়, সনাতনী কবিমহাজনের পদানুসরণ লক্ষ্য করা যায়।কবি শুভ্রাশ্রী কবিতা পড়তে পড়তে পূর্বসূরির একটা প্রচ্ছন্ন ছায়া ও মায়া ফুটে ওঠে,এই বোধ থেকে সজ্ঞানে ও সাহসে সরে এলে তিনি হয়ে উঠবেন এই সময়ের কবিতার একটি নতুন সংসারক্ষেত্র। যা মানুষ সেই গুহাজীবন থেকে সন্ধান করে আসছে…

প্রচ্ছদশিল্পী জয়তী পাল ধর পৃথিবীকে ধাত্রীদেবীর মতো এঁকেছেন।নীলরঙের ব্যবহার সৃষ্টির নতুনত্বকে প্রতীকায়ত করে।এবং ধাত্রীনারীর চোখের মধ্যে চক্র,শঙ্খ,মৎস এবং লক্ষ্মীপদচিহ্নময় আভাময়তা অপূর্বতা দান করেছেন।যেন সেই জলীয় জন্ম থেকে কীভাবে মানবসভ্যতার এগিয়ে চলেছে,তাই সুন্দরভাবে চিত্রিত।মগ্নতা, জল ও মুহূর্তের দৃশ্যপট উন্মোচিত করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ প্রাপক।
লিপি প্রকাশনা এই বইটিতে যে পরিমাণ যত্ন ও সুন্দরতা দান করেছে,তার জন্য কুর্নিশ পাওয়া দরকার।
শেষে একটি কথাই বলব,এক মহান কবি ও দার্শনিক বলেছিলেন,” ঘৃণা এক মহামূল্য সুরা,তাতে নিহিত আমদের রক্ত,স্বাস্থ্য, নিদ্রা ও আমাদের প্রেমের দুই-তৃতীয়াংশ”
এই বাক্যে ‘ঘৃণা’র স্থানে ‘বিশ্বাস’ বসিয়ে দিন।তারপর কবি শুভ্রাশ্রী মাইতির কাব্য পড়া শুরু করুন,আপনা-আপনি অনুভব করতে পারবেন,আলো ও আকাশের সংসার ও উড়ান…

————————–//——————–
মগ্ন জলের মুহূর্তেরা
শুভ্রাশ্রী মাইতি
প্রচ্ছদ। জয়তী পাল ধর
প্রকাশক।লিপি
মূল্য। আশি টাকা।