প্রভুপাদ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী— এক আশ্চর্য্য মহাজীবন কথা (পর্ব-১০) : রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক।

0
418

তখন প্রভুপাদ শ্রীবিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী শ্রীবৃন্দাবন ধামে রয়েছেন। তিনি লোকমুখে জানতে পারলেন যে গিরিরাজ পরিক্রমার পথে বেশ কিছু প্রেতাত্মারা নাকি পরে। অনেকেই নাকি সেসব প্রেতের সম্মুখীন হয়েছেন অনেকবার। গিরিরাজ পরিক্রমার সময় সামনে বেশকিছু বৈষ্ণবদের পরিক্রমা করতে দেখেন তাঁরা। কিন্তু যখন কাছাকাছি আসেন তখন হঠাৎ সেই বৈষ্ণবরা অদৃশ্য হয়ে যায়। এভাবে বেশ কিছু রাস্তা সেই বৈষ্ণব-বেশধারী প্রেতাত্মারা পরিক্রমাকারীদের আগে আগে যেতে থাকে। প্রভুপাদ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী আশ্চর্য হলেন শুনে। সন্ধ্যায় যখন গৌরশিরোমণি মহাশয় তাঁর সঙ্গে ইষ্টগোষ্ঠী করতে এলেন, তখন প্রভুপাদ সেই প্রেতাত্মাদের প্রসঙ্গ তুললেন। শিরোমণি মহাশয় সব শুনে বললেন, “হ্যাঁ,প্রভু, আমিও তো এমন কথা অনেকের মুখেই শুনেছি। তবে এখনও আমার সঙ্গে তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি বা আমি আজ পর্যন্ত কোন প্রেতাত্মার দেখা পাইনি।”

পরদিন ব্রাহ্ম-মুহূর্তে প্রভুপাদ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী একা বের হলেন গিরিরাজ পরিক্রমায় । তখনও পরিক্রমার পথ ফাঁকা। অনেকটাই রাত তখন আর ঠান্ডাও খুব, তাই বোধহয় পরিক্রমাকারীদের বেড়োতে একটু বিলম্ব আছে। দীর্ঘ পথ পেরোনোর পর গোস্বামীপাদ একজায়গায় দেখলেন তাঁর চলার পথের কিছুদূর আগে বেশ কয়েকজন বৈষ্ণব পরিক্রমায় রয়েছেন। প্রথমে প্রভুপাদের মনে তেমন কিছু আসেনি। তিনি আপন মনে নামস্মরণ , লীলাস্মরণ করতে করতে চলেছেন। হঠাৎ তাঁর মনে হল, তাঁর সঙ্গে সামনের বৈষ্ণবদের দূরত্ব যেন কমছে না কিছুতেই। সেই প্রেতাত্মাদের গল্পের কথা তাঁর মনে পড়লো। তিনি তখন বেশ একটু জোরেই পদচারণা করতে থাকলেন যাতে সামনের বৈষ্ণবদের কাছাকাছি যেতে পারেন বা ধরে ফেলতে পারেন তাঁদের। সংকল্পমাত্র তা সিদ্ধ হল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিনি সেই বৈষ্ণবদের মধ্যে উপস্থিত হলেন । আর তখনই তিনি উপলব্ধি করতে পারলেন, তাঁর চারপাশে কেউ মানুষ নন। প্রেতাত্মাদের দেহ সব। বৈষ্ণববেশ ধারণ করে আছে প্রেতাত্মারা, আবার হরিনামও করছে। প্রভুপাদ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী তাদের দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন হঠাৎ। বৈষ্ণববেশী প্রেতাত্মারাও দাঁড়িয়ে গেল।

তখনও অন্ধকার। ভোরের আলো ফুটতে অনেক দেরী আছে। প্রভুপাদ বললেন দীপ্ত কন্ঠে, “কে তোমরা ? সত্য করে বলতো!”

বৈষ্ণববেশী প্রেতাত্মারা বললো—“প্রভুপাদ, আমরা প্রেতাত্মা। মানুষ নই।”

প্রভুপাদ—“তোমরা তো বৈষ্ণব ! নাম নিচ্ছো, মালা নিয়েছো! তাহলে প্রেত কী ভাবে হতে পারো!”

বৈষ্ণববেশী—-“আপনি ঠিকই ধরেছেন প্রভু। আমরা বৈষ্ণবই। কিন্তু, বৈষ্ণব হয়েও অপরাধ করেছি, দেবসম্পত্তি চুরি করেছি। আমরা তো বৃন্দাবনের বিভিন্ন কৃষ্ণমন্দিরের এক একজন সেবক ছিলাম। কিন্তু, সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে গোবিন্দদেবের সম্পত্তি অপহরণ করতাম। সেই অপরাধের জন্য প্রেতযোনি প্রাপ্ত হয়েছি।”

বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীপাদ বললেন, “ও! কিন্তু, এই প্রেতযোনি প্রাপ্ত হয়ে তোমরা কী কষ্ট পাও আদৌ কোন? তোমরা তো এখনও ভজন করছো দেখছি।”

অপর একজন বৈষ্ণব প্রেত বললো,”প্রভুপাদ, সে যে কী কষ্ট কী বলবো! দিবারাত্রি যেন সহস্র সহস্র বৃশ্চিক দংশন করে চলেছে সমস্ত শরীরে। অসহ্য যাতনা।”

প্রভুপাদ—“তোমরা তো হরিনাম করছো, মালা জপ করছো, এতেও কি তোমাদের কষ্টের লাঘব হচ্ছে না? পাপের স্খলন হচ্ছে না?”

একজন প্রেত বললো, “না, প্রভু! আমরা যে হরিনাম করছি তা আমাদের অভ্যাসবশতঃ সাধনা। আপনা আপনি করছি। হরিনাম না করে থাকতে পারি না আমরা। কিন্তু, এতে আমাদের যাতনার বা কষ্টের কোনো লাঘব হচ্ছে না।”

প্রভুপাদ—“তাহলে তোমাদেরা মুক্তি হবে কেমন করে? কোন উপায় নেই?”

……(ক্রমশঃ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here