লড়াইয়ে রয়েছেন প্রদীপ সরকার, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুরের বিদায়ী বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা পুর প্রশাসক কিন্তু সে লড়াইয়ে জোশ নেই কারন সে লড়াই তার নিজের দলের সঙ্গেই তাঁকে লড়তে হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা,পশ্চিম মেদিনীপুর:- রবি শঙ্কর পান্ডে লড়াইয়ে নেই, লড়াইয়ে নেই মুনমুন চৌধুরী বা দেবাশিসও। লড়াইয়ে রয়েছেন প্রদীপ সরকার, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুরের বিদায়ী বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা পুর প্রশাসক কিন্তু সে লড়াইয়ে জোশ নেই কারন সে লড়াই তার নিজের দলের সঙ্গেই তাঁকে লড়তে হবে। লড়াই এখন মধ্য খড়গপুর ছাড়িয়ে প্রান্তিক খড়গপুরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে। লড়াই বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায় বনাম ২২বছরের অপারেজেয় প্রবীণ তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন চেয়ারম্যান জহরলাল পালের। যদিও লড়াই এখানেই শেষ নয়। এই ওয়ার্ড সিপিএমের জেতা তাই লড়াই সিপিএমের প্রার্থী রেড ভলান্টিয়ার তরুণ তুর্কি মিঠুন দে র সাথেও লড়তে হবে। আর পাশাপাশি লড়াই প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা প্রবীণ বামপন্থী নেতা মনোজ ধরের সঙ্গেও। মনোজ ধর লড়ছেন আমরা বামপন্থী র হয়ে। সব মিলিয়ে ৩৩নম্বর ওয়ার্ড এখন নেপোলিয়নের শেষ যুদ্ধ ময়দান ওয়াটারলুর মতই। আর সেই লড়াইয়ে নামার আগে প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূল প্রার্থী জহর লাল পালের পা ছুঁয়ে প্রণাম করলেন বিজেপি প্রার্থী বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়। বুধবার মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে এমনই দৃশ্যের স্বাক্ষী থাকলেন মনোনয়ন জমা দিতে আসা দু’দলের প্রার্থীর সঙ্গে আসা অগণিত কর্মী সমর্থক। বুধবার খড়গপুর মহকুমা শাসকের অফিসে জহর লাল পালের সঙ্গে হাজির ছিলেন প্রদীপ সরকার সহ অন্য বেশ কিছু তৃণমূল প্রার্থী ও অগণিত সমর্থক। সেই সময় খড়গপুর শহরের বিজেপি নেতা ও কর্মীদের নিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে হাজির হন অভিনেতা হিরণও। তখনই তিনি দেখতে পান প্রবীণ তৃণমূল নেতা জহর লাল পাল কে। এরপরই ‘জহর দা’ বলে তিনি সটান চলে যান তাঁর কাছে এবং ঝুঁকে তাঁর পা ছুঁয়ে নিয়ে আশীর্বাদ চেয়ে নেন আসন্ন লড়াইয়ের জন্য। ঘটনায় প্রথমে হতচকিত হয়ে যান জহর। তারপর পরিস্থিতি সামলে নিয়ে দু’হাতে তুলে ধরেন হিরণ কে। মৃদু হেসে হাত রাখেন মাথায়। লড়াইয়ে হার জিত যাই হোকনা কেন, মুহুর্ত খানি মোবাইল বন্দি করলেন দু’দলের সমর্থকরাই। রাজনীতিতে এধরনের সৌজন্য বিরল বৈকি। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড সম্মান বাজি রেখে লড়াইয়ের ওয়ার্ড। পুরসভা দখলের লড়াইয়ে এই ওয়ার্ডে বিধায়ক অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে বাজি রেখেছে বিজেপি। যদিও লড়াই বড় কঠিন। বিধায়ক হয়ে কাউন্সিলর পদে লড়াইয়ের সুবিধা একটা আছে অবশ্যই, হারলেও বিধায়ক পদটা থেকে যাবে। কিন্তু হারলে যেটা নষ্ট হয় সেটা হল, সম্মান এবং সম্ভ্রম। সেটাই বাজি রেখেছেন হিরণ। বাজি রেখেছেন দুই হেভিওয়েট বিপক্ষের প্রার্থী তৃনমূল ও আমরা বামপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে। এখানে তৃণমূলের হয়ে লড়াই করছেন গত ২২বছরের একটানা অপারেজয় জহরলাল পাল। অন্যদিকে আমরা বামপন্থীর হয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন প্রবীন বামপন্থী নেতা মনোজ ধর। মনোজ ধর প্রাক্তন কাউন্সিলরও বটে। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তালবাগিচা অংশে তাঁর ভালো প্রভাব রয়েছে।যদিও এখানেই শেষ নয়,
সঙ্গে দল হিসেবে এখানে শক্তিশালী সিপিএম কারন ওয়ার্ডটি তাদের দখলেই ছিল। সিপিএম প্রার্থী মিঠুন দে রেড ভলান্টিয়ার হিসাবে এলাকায় ভালো পরিচিতি জোগাড় করেছেন। করোনা কালে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি রবীন্দ্রপল্লী এলাকায় দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি স্টাডি সেন্টার খুলে বিনামূল্যে নিরন্তর টিউশন পড়িয়ে গেছেন বাম সমর্থক শিক্ষক শিক্ষিকারা। সেই ছাত্রছাত্রীরা এই লড়াইয়ে বড় শক্তি সিপিএমের। ফলে সব মিলিয়ে কঠিন লড়াইয়ে নামছে সব দলই। এখন দেখার ওয়াটারলুর এই মাঠ থেকে লড়াই জিতে নেয় কে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *