আধুনিক যুগে লন্ঠনের ব্যবসা অন্ধকারে, চিন্তায় মাথায় হাত লন্ঠন কারিগরদের।

0
243

আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ করোনার কারণে লকডাউন এর জেরে প্রায় দুবছর ধরে বন্ধ ব্যাবসা বাণিজ্য, সমস্যায় পড়েছেন বাঁকুড়ার মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরের লন্ঠন তৈরির কারিগর থেকে শুরু করে ব্যাবসায়ীরা। মহাজনদের কাছ থেকে লন্ঠন তৈরির সামগ্রি কিনে নিয়ে এসে বিভিন্ন মাপের ছিনি হাতুড়ির ঘায়ে নিপুন শিল্পিক হাতের প্রচেষ্টায় তৈরি হয় অতি নিপুন ভাবে এক একটি লন্ঠন। এক একটি লন্ঠন তৈরি করতে সময় লাগে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা। অনেক সময় নিপুন হাতের প্রচেষ্টায় এক একটি মডেল তৈরি হলেও মেলেনা ন্যায্য দাম, যার জেরে তৈরি হয় হতাশা ভেঙে পড়ে শিল্প সৃষ্টির মনোবল। একটা সময় এই শিল্পীরা গ্রাম থেকে শুরু করে শহর বা মফস্বলের প্রতিটা ঘরে ঘরে আলো জ্বালতো এই শিল্পীরা,চাহিদা ছিল ব্যাপক সাপ্লাইও দেওয়া যেত না ঠিকঠাক চাহিদা অনুযায়ী৷ কিন্তু সময় পালটেছে এখন মানুষ গুলোর সাথে সাথে তাদের ব্যাবহার্য জিনিস গুলোও অভিযোজিত হয়েছে,সুপারসোনিক যুগে মানুষ বেছে নিয়ে আধুনিক আলোকিত করার পন্য সামগ্রি ফলে কদর কমেছে এই শিল্পের।

গত দুবছর এই অতিমারী পরিস্থিতির জন্য এই লন্ঠন তৈরির শহরে আসেনা কোনো মানুষজন,বাড়িতে সাজিয়ে রাখার জন্য হলেও কেনাকাটা বন্ধ এই কুটির শিল্পের সামগ্রির। বাড়িতে বসে থেকে কি লাভ তাই এই সব জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসে থাকা মাত্র। শহরে দোকানের সংখ্যা একশো-দেড়শো থেকে এসে ঠেকেছে মাত্র কুড়ি-পঁচিশটা। কয়েক বছর আগেও এই লন্ঠন পাড়ি দিত বাংলার প্রতিটা প্রান্তর ছাড়িয়ে বিদেশে অবদি, সেজে উঠতো পূজো মন্ডপ। লন্ঠন দোকান গুলিতেও একটা সময় কাজ করতো ৪০-৪৫ জন মানুষ এখন সংখ্যাটা দুই থেকে তিন এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র, কিন্তু আধুনিক যুগের বহমানতায় এখন সবটাই অতীত পুরোপুরি বিদ্ধস্ত বাংলার এই কুটির শিল্প।

জীবন জীবিকা চালাতে অনেকেই হয়তো বেছে নিতে হয়েছে উপার্জনের অন্য কোনো রাস্তা। কিন্তু অনেকেই বসে আছেন বাপ ঠাকুরদাদার এই শিল্পকে আঁকড়ে ধরে।

বর্তমানে বিষ্ণুপুর মন্দির নগরীর বেশীর ভাগ এই কুটির শিল্প সামগ্রির দোকান বন্ধ প্রতিদিন। তবে কেউ কেউ নিপুন হাতে কায়দায় প্রতিদিন তৈরি করে যাচ্ছেন এই সামগ্রি। আশায় একদিন আবার সময় ফিরবে সেদিন আবার শুরু হবে বেচাকেনা, আবারো বাড়বে এই শিল্পের কদর। ততদিন পর্যন্ত যদি মেলে কোন সরকারী সাহায্য, বেঁচে যায় শিল্পী, বাঁচে শিল্পও।