অরণ্যশহরে ব্রাউন সুগারে নেশার কবলে পড়ছে কিশোর ও যুব সমাজ, শহরকে নেশামুক্ত করার আবেদন জানালো ঝাড়গ্রাম রিপোটার্স ক্লাব।

0
229

তৃণ্ময় বেরা, ঝাড়গ্রাম: অরণ্যশহরে ব্রাউন সুগারে নেশার কবলে পড়ছে কিশোর ও যুব সমাজ। বছর খানেকের মধ্যে রমরমিয়ে বেড়েছে ব্রাউন সুগারের ব্যবসা। নেশার প্রতিবাদ করায় শহরে যুব তৃণমূলের এক নেতা আক্রান্ত হয়েছেন। তারপরই নড়েচড়ে বসছে শাসক দল। অরণ্যশহর নেশামুক্ত করার দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বন প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাসঁদা। বিরবাহা বলেন, ‘‘করোনা কালে এই নেশার প্রবণতা বেড়েছে। এটা যথেষ্ট চিন্তার কারণ। আমার কাছে এরকম রিপোর্ট আসার পর পুলিশ সুপারের সঙ্গে আলোচনায় বসেছি। কয়েকজনকে ধরা হয়েছিল।’’ তবে বিরবাহা আরও বলেন, ‘‘বাড়ির মা-বাবাকে সচেতন হবে। ছেলে নেশাগ্রস্ত হয়েছে কিনা তা পরিবারের লোকজন আগে বুঝতে পারবেন। তাই পরিবারের লোকজনকে সাহস করে এগিয়ে আসতে হবে।’’
বুধবার সন্ধ্যায় অরণ্যশহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নৃপেনপল্লী এলাকার ঘোষালের মাঠে ব্রাউন সুগারের নেশা করছিলেন এক যুবক। ওই যুবককে নেশা করতে দেখে প্রতিবাদ করেছিলেন ১২ নম্বর ওয়ার্ডের যুব তৃণমূলের ওয়ার্ড সভাপতি শেখ নাসিরউদ্দিন। তারপরই নাসিরউদ্দিন বাড়ি ফেরার পথে পথ আটকে ওই যুবক মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে বলে অভিযোগ। নাসিরুদ্দিন থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে। কিন্তু কেউ গ্রেফতার হয়নি। শহর যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি উজ্জ্বল পাত্র বলেন, ‘‘সমাজের একটি অংশ ব্রাউন সুগারের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। সমস্তস্তরের মানুষকে একজোট হয়ে এর বিরুদ্ধে পথে নামতে হবে। আমরা ঝাড়গ্রামকে নেশামুক্ত শহর চায়। দলীয় স্তরে উচ্চ নেতৃত্বকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। পুলিশ-প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। ’’ ঝাড়গ্রাম রিপোটার্স ক্লাবের পক্ষ থেকে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, মহকুমা শাসক, পুরপ্রধানের কাছে নেশামুক্ত শহর গড়ে তোলার জন্য লিখিত ভাবে আবেদন জানানো হয়েছে।
গত এক বছরে ঝাড়গ্রাম শহরে মাথা চাড়া দিয়েছে ব্রাউন সুগারের রমরমা ব্যবসা। মোবাইলের ব্যাটারির বদলে ব্রাউন সুগার রেখে চলছে পাচার। এমনকি মোবাইল কভারের পিছনে লুকিয়ে চলছে এর ব্যবসা। মাত্র দু’শো থেকে চারশো টাকায় মিলছে এই ব্রাউন সুগারের প্যাকেট। রাংতা দিয়ে মোড়া থাকে ব্রাউন সুগার। শহরের অষ্টম নবম শ্রেণি থেকেই স্কুল পড়ুয়ারা এই নেশার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। শহরের নৃপেন পল্লী, আলাপনি মাঠ, হিন্দু মিশন মাঠ, বিবেকানন্দ পল্লী এলাকা, শক্তিনগর, সুভাষপল্লী, নৃপেনপল্লী, উত্তর বামদা, নামো জামদা, কাঞ্চনওয়েল মিলের আশেপাশে একাধিক জায়গায় এই চক্র চলছে বলে অভিযোগ। এসব এলাকা ছাড়াও আনাচে কানাচে শহরে এই চক্র বেড়ে উঠেছে। এমনকি এলাকার যুবকরা ভুল পথে চালিত হয়ে অনেকেই মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। শহরে এই নেশায় আসক্ত হয়ে বাইক দুর্ঘটনা ও আবাসন থেকে ঝাঁপ দিয়ে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শহরে শাসক দলের এক নেতা আড়ালে বলছেন, ‘‘ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ সবকিছুই জানে। কিন্তু তুবও পুলিশের নাকের ডগায় কিভাবে এই ব্যবসা চলছে?’’ তবে ব্রাউন সুগারের বাড়-বাড়ন্তের জন্য পুলিশ-প্রশাসনকে দায়ী করছে নাগরিক সংগঠন। ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগের আহ্বাগক শ্রীমন্ত রাউৎ বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন সব জানে। যাঁরা মূল সরবারহ করছে তাঁদেরকে ধরতে হবে। শুধুমাত্র কিশোর ও যুব সমাজকে দোষ দিলেই হলেব না। প্রশাসনের ঢিলেমির জন্য বাড়-বাড়ন্ত হচ্ছে। এর দায় পুলিশ-প্রশাসন কোনও মতেই এড়াতে পারে না। পাশাপাশিমানুষকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। মানুষজন পথে নামলেই প্রতিকার সম্ভব।’’ তবে পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা হানা দিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করছি। কিন্তু জামিন পেয়ে আবার এই ব্যবসা শুরু করছে। আমরা গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছি।’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here