রবীন্দ্র জয়ন্তীতে উৎসবমুখর কলকাতার বুকে রবীন্দসদনের অবনীন্দ্র সভাঘরে দশভুজা সাহিত্য পত্রিকার আলোকিত মোড়ক উন্মোচন ও কিছু কথা………..।।।।।

0
1136

কলকাতা, সব খবর ডেস্ক :- প্রবাহমান সৃষ্টির ধারাকে সঠিক পথে ধাবিত করতেই মানুষের চরিত্রের যে গুণের সমন্বয়টি প্রয়োজন তার নামই “দশভুজা”…! অনাবদ্ধকে যে আবদ্ধ করতে জানে সেই প্রাচীণ শাস্ত্রের সবমন্ত্রময়ী নারী শক্তি প্রতিক দেবী দূর্গা(দশভুজা).. অর্থাৎ আমাদের চোখের সামনে ঘুরে বেড়ানো সদা হাস্যোজ্জ্বল সেই সকল মানুষ যাদেরকে আমরা(বিশেষত পুরুষ কূল) নিজের অহমিকায় নারী ভেবে তাদের জন্য বিশেষ অধিকারের কথা বলে বলে করুণা করার বোকা কাজটি করে থাকি মহা আনন্দে নিজের মূর্খতার ভুড়ি হেলিয়ে দুলিয়ে, সেই স্নেহমহী জায়া-জননীই সৃষ্টির প্রকৃতি দশভুজা…!

বিশ্ব সাহিত্যের অবতার পুরুষ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে কলকাতার রবীন্দ্রসদনের অবনীন্দ্র সভা ঘরে গত ২৪শে বৈশাখ, ৮ইমে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো বাংলার এক ঝাঁক প্রকৃত মননশীল নারীর আপন শব্দের পরিচয় পত্র স্বরুপ ‘দশভুজা’ সাহিত্য পত্রিকার বৈশাখী সংখ্যার আলোকিত স্নেহময় মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান…!

এই মহাবিশ্বে, নিজের সৃষ্টির সঠিক বিকাশ ও প্রকাশের মাধ্যমে স্রষ্টা পরম সুখের অনুভূতি প্রাপ্ত হয়..কিন্তু প্রকৃতির সৃষ্টি যদি তার নিজের মনকে কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তবেই না সে মানুষ… সেই অর্থে পৃথিবীতে সৃষ্ট সকল প্রাণীই মানুষ হতে পারে যদি তারা তাদের মনকে বস করে জীবন ধারণ করতে পারে…! তাই নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভেবে মানব কূলের লম্বা ঢেকুর তোলা যেন বোকার স্বর্গ রথে চড়ে অক্সিজেন মাস্ক পড়ে স্রোতস্বিনী নদীতে হাওয়া খাওয়া..; অর্থাৎ আধুনিক সমাজে দশভুজা শব্দটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাধারনের সম্যক জ্ঞান দিয়ে নারীর ‘দশভুজা’ অলংকরণের সঠিক মূল্যায়ন যে নিতান্তই সহজ কাজ নয়..যেটা আপন মেধা মননে সম্বৃদ্ধ দশভুজা সাহিত্য পরিবারের সকল নারীগন সেদিন নিজেদের মননশীলতা আর স্নেহময়তার আবরণে বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন তাদের স্বভাবসুলভ
বিনয়ের সাথে…!


দশভুজা সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদিকা শ্রীমতী কৃষ্ণা চক্রবর্তী মহাশয়া তার অসাধারণ মাতৃকা মন নিয়ে, এই সংসার নামক খাঁচায় নিজের সফল কর্মযজ্ঞের ফাঁকে ফাঁকে, বাংলার কিছু মেধাবী প্রচারবিমুখ নারী শব্দ-শিল্পিদের এক সুতোয় বেঁধে বিগত চার বছর ধরে কি অসাধারণ ভালোবাসাময় শুদ্ধ স্নিগ্ধতায় সাজিয়ে তুলেছেন সাহিত্য-মন্দিরের পবিত্র বেদী….
দুঃখজনক হলেও যা এই সময়ের সাহিত্য প্রাঙ্গণে খুবই কম দৃষ্টিগোচর হয়…!
সাহিত্যকে ভালোবেসে জীবনের মন্দ-ভালো এই চলার পথে জামশেদপুরের কৃষ্ণা চক্রবর্তী তার সন্তান সম সাহিত্য পাতা দশভুজাতে সাথে পেয়েছেন বেশ কয়েকজন আলোকিত মানব প্রাণকে…! প্রত্রিকাটির প্রারম্ভিক যাত্রা নারী কবিদের নিয়ে শুরু হলেও আজকের সময়ে দশভুজা পরিবার তাদের পাশে পেয়েছেন প্রবীণ কবি শুভাশিস সরকার, অসীম দাস, পুলক বসু, বিপ্লব ভট্টাচার্য- এর মতো কিছু ভাতৃ প্রতিম ভরসার মুখকে…যারা দশভুজার প্রকৃত মানেটা সত্যি জেনেই দশভুজাদের সন্মানে নিজেদের ভালোবাসা দিয়ে পত্রিকার সাথে পরিবারের মতো জড়িয়ে গেছেন…!

আসলে, মানব সভ্যতার ইতিহাসে নারীকে দশভুজা বলে সম্বোধন করাটা কিন্তু যথেষ্ট যৌক্তিক কারণেই…!
একজন নারী হলেন পরমা শক্তির প্রতীক.. নারী ছাড়া আণবিক এই মহাশক্তি (শিব) কেবল জড় বস্তু , নারীর শক্তিতেই এই ভ্রম্মান্ড(ব্রহ্মা) সৃজন , নারীর প্রেম সত্তাতেই (বিষ্ণু) পালন এবং নারীর দৃষ্টি ঝাপসা হলেই (রুদ্র) সংহার করেন…! তাই বলে সকল নারী নয়, কেবল সেই সকল নারীই দশভুজার উপাধ্য, যারা সৃষ্টির সকল সত্য-মতকে দূর্গ-সম দৈত্য-মানব থেকে রক্ষা করেন এবং ধরিত্রী রুপে এই সংসার-জীবনকে ফুলে-ফলে সুমিষ্ট করে রাখেন..!
ঠিক তেমনটাই এক আনন্দময় সুখের স্বরুপ ফুটে উঠেছিলো দশভুজা সাহিত্য পত্রিকার এই অনুষ্ঠান মঞ্চে গত ৮ই মে রবীন্দ্র জয়ন্তীতে উৎসবমুখর কলকাতার বুকে…!

শুভাশীষ সরকারের অনবদ্য সাবলীল হাস্যরসাত্মক আন্তরিক উপস্থাপনায়, দশভুজা সাহিত্য পত্রিকার বৈশাখী সংখ্যার আলোকিত এই মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ কবি শ্রী অসীম দাস মহাশয়, কবি শ্রী পরাণ মাঝি মহাশয়, সাহিত্যিক-প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক শ্রী সৌগত রাণা কবিয়াল মহাশয়, প্রবীণ সাংবাদিক পুলক বসু মহাশয় ও কবি শ্রী সদ্যোজাত মহাশয় সহ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ…!
দশভুজা সাহিত্য প্রত্রিকার সম্পাদিকা শ্রীমতী কৃষ্ণা চক্রবর্তী মহাশয়া, সভাপতি শ্রীমতী শ্রাবণী ঘোষ মহাশয়া, প্রধান উপদেষ্টা শ্রী সুভাশিস সরকার মহাশয়, কবি শ্রী বিপ্লব ভট্টাচার্য মহাশয়, শ্রীমতী মন্দিরা মুখার্জ্জী মহাশয়া সহ পত্রিকার সকল সদস্যাবৃন্দদের আন্তরিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠান মঞ্চে উক্ত দিন দশভুজা পত্রিকার বৈশাখী সংখ্যার মোড়ক উন্মোচনের পাশাপাশি উন্মোচিত হয় কবি কৃষ্ণা চক্রবর্তীর সম্পাদনায় এই সময়ের প্রতিভাবান কবিদের কবিতা নিয়ে যৌথ কাব্যগ্রন্থ ‘কল্পকথায় তোরা’ ও কবি শুভাশিস সরকারের একক কাব্যগ্রন্থ ‘মেঘলা মনের বৃষ্টি’…!

অনুষ্ঠানে আলোকিত উদ্বোধনীতে বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী তথা পত্রিকাটির সভাপতি শ্রীমতী শ্রাবণী ঘোষ মহাশয়ার অসাধারণ সুন্দর সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে ও মঞ্চে গুনিজনদের বিশেষ সন্মানের সাথে আহবানের পর, অনুষ্ঠিত হয় অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ দুটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের শ্রুতি নাটক…! সুনীল সরকার, মৌসুমী সাহা অভিনীত – ‘আমি তুমি ইউটিউব’ এবং দেবাশিস বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়, জয়দেব নস্কর ও শাশ্বতী দে অভিনীত- ছ’টা ‘চল্লিশের ব‍্যান্ডেল লোকাল’ শীর্ষক দুটি শ্রুতি নাটিকা অনুষ্ঠানের শ্রী বৃদ্ধি করে এক অন্য মাত্রা এনে দেয়..! এটি রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন কবি দেবাশিস বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়…! বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী রঞ্জনা কর্মকার, দেবিকা ব্যানার্জী, রুমকি দত্ত, সুতপা চক্রবর্তী, মুনমুন চক্রবর্তী সেন, সেবন্তী ঘোষ, শিপ্রা দাস জানা, ববি সরকার, মুনমুন মুখার্জ্জী প্রমুখের অনবদ্য আবৃত্তি পাঠের পাশাপাশি দমদম থেকে আগত পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মেয়ে শ্রীতমা ঘোষ এবং কাঞ্চন কুমার দে ও মনোরোমা দে-র যৌথ আবৃত্তি পাঠ ছিল অনুষ্ঠানে অন্যতম সুন্দর পরিবেশনা… অনুষ্ঠানের সমাপ্তি সঙ্গীত পরিবেশন করেন আর এক বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী শ্রীমতী সুপ্রিয়া সরকার মহাশয়া…।

দশভুজা পত্রিকার সম্পাদিকা শ্রীমতী কৃষ্ণা চক্রবর্তী অনুষ্ঠানে তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সবিনয়ে দশভুজা নিয়ে তার কিছু অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন..!
তার ভাষায়….
” আমার মা একদিন বলেছিলেন, মা তুমি আর সকলের মতন শুধু সংসারেই নিজের কর্মকে আবদ্ধ না রেখে সমাজের জন্য এমন কিছু করার চেষ্টা করো যাতে তোমার কর্মের যোগ্য প্রতিফলন হয়..! যেহেতু সাহিত্যের প্রতি আমার বিশেষ দূর্বলতা ছিলো, তাই আমি এই সাহিত্যকেই আমার কর্ম সুখের আশ্রম করতে গিয়ে দশভুজার সৃষ্টি করি….! প্রথম প্রথম অচেনা পথে অনেকটা হোঁচট খেতে খেতে আজ আমি সত্যিকার অর্থেই কিছু দশভুজা নারীকে কাছে পেয়েছি, যাদের ভালোবাসা আর অসীম কর্মগুনে আজ চার বছরের মধ্যে দশভুজা সাহিত্য পত্রিকা শুধুমাত্র একটি ছাপা পত্রিকা নয়, এর বাইরেও সমাজের মানুষের মানবিক উন্নয়নে দশভুজার নারীরা আজ অনেক কাজ করে যাচ্ছেন….! দশভুজা পরিবারের মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে ‘দশভুজা ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন’ এর ব্যানারে আমরা ভবিষ্যতে একটি অনাথ আশ্রম ও একটি বৃদ্ধাশ্রম করার জন্য প্রচেষ্টা করছি….! আমি কখনই চাইনা দশভুজা সাহিত্য পত্রিকা একটি বানিজ্যিক অবয়ব হয়ে উঠুক… প্রকৃত মেধাবী নারী লেখিকার স্বপ্নের শব্দগুলো নিয়ে দশভুজা হয়ে উঠুক আমাদের সমাজের নারীর সত্য দর্পণ…যে দর্পণে অবহেলিত বঞ্চিত নারীরা তাদের অন্তরের দশভুজাকে অনুভব করে তাকে কাজে লাগিয়ে সমাজে-রাষ্ট্রে সন্মানিত সফল নারীর ভূমিকায় নিজেদের প্রকাশিত করবে…..! সেটা মাথায় রেখে আমরা প্রতি বছর একজন নারীকে “দশভুজা” সন্মানে সন্মানিত করি তার যোগ্যতার পরিচয়ে…! আমি চাই সাহিত্য হোক আনন্দমুখর মানবিকতা পূর্ণ.. ভালোবাসাময় এক বন্ধন….! ”

অনুষ্ঠানের শেষ সময়ে এক অদ্ভুত সুন্দর শুদ্ধ পারিবারিক আনন্দের পরিবেশ সৃষ্টি হয় মঞ্চ প্রাঙ্গণে…! দশভুজা পরিবারের সকলের পারস্পরিক আন্তরিকতা, ভালোবাসা ও সম্মানবোধ মনে করিয়ে দেয় যে, মানুষ হতে গেলে শুধু মন থাকলেই হয়….বাকিটা কেবলই ইতিবাচক এক সাম্যবাদী পৃথিবী সৃষ্টির সদিচ্ছা….!

এই জগৎ সংসারে কেবল নারীই একমাত্র দশভূজার প্রতীক..! নারীর কাজ, নারীর শ্রমকে তখনই পুরুষ প্রশংসা করে যখন নারী তার জীবনের দশ দিক পরম মমতায় শত যন্ত্রণা সহ্য করেও সামলাতে পারে…! বাঙালির টেবিলভরা খাবার দেখে আমন্ত্রিত অতিথি বিস্ময়ে বলে ওঠেন, ‘ ও কী সব্বোনাশ! বৌদি একা হাতেই এর সবগুলো করেছেন বুঝি ?’ তখন কিন্তু তার স্বামী বাবুটি শার্টের কলার নাড়িয়ে জবাব দেন, ‘দেখতে হবে না বউটা কার..?’ মুখ লুকিয়ে নিজের কর্ম করে অপরকে সুখী করার যে মহানুভবতা, তার নামই যে নারী..!
আজকের অধুনা সমাজেও কিন্তু একমাত্র নারীই হতে পারেন দশভুজা.. দৃশ্যত তারা দুহাতে জগৎ সামলান বটে, কিন্তু তাদের আরও আটখানা হাত অদৃশ্যে কাজ করে যায়…!
তার মানে আরও চারজন গৃহপরিচারিকা আছেন বুঝি..? আরে না না মশাই, ওদের পিঠেই ওগুলো লুকানোই আছে…!
একজন কর্মজীবী নারী নটা-পাঁচটা অফিস করেন..অফিস থেকে ফিরেই দেখতে পান তাঁর বসার ঘর ভরা স্বামীর আত্মীয়-বন্ধু.. অতএব, অফিসের পোষাকেই জলখাবারের ব্যবস্থা…! আবার সেই স্বামীর ইচ্ছেতেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও রমনী রুপে নিষ্ঠার সাথে দ্বায়িত্ব পালন করা.. মধ্যরাত অবধি সংসার-স্বজনের সুখ নিশ্চিত করতে করতে কেও যদিবা ভুলে একবার আহারে বলে ফেলে, তবে সংসারের গৃহকর্তা বিগলিত হয়ে অহংকারে বলে ওঠেন ,’আরে ওরা হলো গিয়ে মা দুর্গার অবতার..ওরা ছাড়া কে করবে এই মায়ার জগৎ উদ্ধার’…?
তাই দশভুজা বলে নারীকে মাথায় তুলে রাখলেও নারীর এতে আহ্লাদিত হওয়ার কিছু নেই…! একজন নারীকে তার নিজের শরীর, নিজের পেশা, নিজের অবসর, নিজের বিনোদনকে তুচ্ছ করলে চলবে না..! আমরা কেবল মা দুর্গার দশ হাত দেখি, ধরে নিই তার হাতগুলো বুঝি হাতা, খুন্তি, ঝাড়ু, ঝুড়ি, কোদাল, দা, বটি, কমণ্ডলু ইত্যাদি সেবা যন্ত্রের সমাহার..অনেকে জানিও না যে তার হাতের অস্ত্রগুলো আসল মানেগুলো কি..; জেনে রাখা ভালো যে দুর্গা দেবীর দশ হাতে ধরা দশটি অস্ত্রের মধ্যে ত্রিশূল—তিনটি ফলায় আছে তমঃ রজঃ ও সত্য; গদা—আনুগত্য, ভালবাসা ও ভক্তি; বজ্রাস্ত্র—দৃঢ়তা ও সংহতি; সাপ—বিশুদ্ধ চেতনা; অগ্নি—জ্ঞান ও বিদ্যা, শঙ্খ—জীবজগতে প্রাণের সৃষ্টি; চক্র—সৃষ্টি ও জগতের কেন্দ্রে অধিষ্ঠান, তির-ধনুক—ইতিবাচক শক্তি; পদ্ম—অন্ধকারেও আলোর আবির্ভাব; তলোয়ার—বুদ্ধি যা বৈষম্য ও অন্ধকার দূর….!
দশভুজা দেবী দুর্গার হাতের অস্ত্রগুলোর তাৎপর্য -ঢাক, ঢোল, কাশর, ধূপ-ধূনো, অঞ্জলি, প্রসাদ, হইচই, বিসর্জনের মধ্যে বিলীন হয়ে যায় ঠিকই…কিন্তু অস্ত্রগুলো সম্পর্কে নারী-পুরুষ সবারই সম্যক ধারণা থাকা আবশ্যক…! এগুলোর মধ্যে যেমন আনুগত্য, ভালবাসা ও ভক্তি আছে তেমনি চেতনা, বুদ্ধি, আলো ও বৈষম্য দূর করার বাণীও নিহিত আছে… যদিও নিজেকে ক্রমাগত বিলিয়ে দেওয়ার কথা কোথাও তেমন সরাসরি উল্লেখ নেই… তাই অধুনা বানিজ্যিক বিজ্ঞাপনে নারী প্রকৃত দশভুজা চরিত্র-গুনকে ঘরে-বাইরে নারীর ঘাড়ে বাহবা আর কাজের বোঝা চাপিয়ে কেউ তাকে দশভূজায় মহিমান্বিত করতে এলে বজ্রাস্ত্র (দৃঢ়তা ও সংহতি) নিয়ে মোকাবিলায় নামতে হবে…!
যে নারী স্বয়ং স্বরস্বতী, তাকে জ্ঞানের কথা শেখাতে গিয়ে তার মেধা সত্তাটিকে নষ্ট করে দেয়ার এই অধুনা প্রচলন সাহিত্যে এবার বন্ধ হওয়া খুব প্রয়োজন বাংলা সাহিত্যের স্বার্থেই..! “দশভুজা” এর মতন কিছু সাহিত্য পরিবার একসময় হয়তো আবার ফিরিয়ে আনবে আমাদের সাহিত্যের সেই স্বর্ণযুগ, যে যুগে সাহিত্য বাঁচতো শ্রেফ মেধায় মননে..অকারণ জৌলুসতায় নয়…!
জয় হোক প্রকৃত অর্থে দশভুজাদের…জয় হোক বাংলা সাহিত্যের..!

কলমে–
–সৌগত রাণা কবিয়াল
( কবি সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here