সুন্দরবনের চড়াবিদ্যায় ধর্মরাজ এর ধর্মশালায় লক্ষাধিক মানুষের ভীড়।

0
804

সুভাষ চন্দ্র দাশ, বাসন্তী : – তিনি যমদূত!তিনিই ধর্মরাজ!তিনি বসে রয়েছে একটি মহিষের উপরে।তাঁর স্বপ্নাদেশ পেয়েই জঙ্গল পরিষ্কার করে একটি মন্দির গড়ে তুলেছিলেন এলাকার জমিদার।সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের চড়াবিদ্যা গ্রাম। সেখানে বিরাজ করছেন স্বয়ং ধর্মরাজ।সালটা বাংলা ১৩৪৪। তখন ইংরেজরা দেশ শাসনের দায়িত্বে রয়েছে। ছিল জমিদারী প্রথা।সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে জলাজঙ্গলে ভরপুর।তৎকালীন সময়ে জমিদার ছিলেন শশীভূষণ নস্কর। তিনি একদিন রাতে স্বপ্নাদেশ পায় স্বয়ং ধর্মরাজের।স্বয়ং ধর্মরাজ তাঁকে নির্দেশ দেয় এলাকায় তাঁর একটি আশ্রয়স্থল কিংবা মন্দির প্রতিষ্ঠা করার জন্য।স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর মহা ফাঁপরে পড়ে যায় নস্কর পরিবার। এরপর এলাকার জঙ্গল পরিষ্কার করে একটি বট ও অশ্বথ গাছের পাশে ধর্মরাজ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।সেখানেই জাঁকজমক করে পুজোপাঠ পেতে থাকেন স্বয়ং ধর্মরাজ।বছর দুই পর মন্দির টি পাকা হয়।এর পরবর্তী কালে আবারও স্বপ্নাদেশ পায় শশী বাবু। তিনি জানতে পারেন যেখানে যেমন ভাবে মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছে,তেমনই ভাবে থাকবে। মন্দিরের কোন কিছুই পরিবর্তন করা যাবে না।এবং রাতের বেলায় মন্দিরে কোন আলো জ্বলবে না।ধর্মরাজের নির্দেশে সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল। পরবর্তী সময়ে শশীভূষণের মৃত্যু হলে তাঁর ছেলে বামাচরণ মন্দিরের দেখভাল শুরু করেন। বামাচরণ নস্করের ১৬ টি ছেলে ছিল। তিনি মূল মন্দিরের সংস্কার করে বড় করার পরিকল্পনা গ্রহণ করলে ধারাবাহিক ভাবে তাঁর ১৪ ছেলের অকাল মৃত্যু হয়। পরবর্তী সময়ে আরো দুই ছেলের মৃত্যু হয়।সেই থেকে ধর্মরাজের মূল মন্দির একই রাখার সিদ্ধান্ত নেয় নস্কর পরিবার। এছাড়াও মন্দিরের বাইরে আলোর ব্যবস্থা থাকলেও ধর্মরাজের নির্দেশে মন্দিরের ভিতরে অন্ধকার রাখা হয়।
সেই ইংরেজ আমল থেকে এই প্রত্যন্ত সুন্দরবনের অখ্যাত গ্রামের ধর্মরাজ মন্দিরের পুজোপাঠ চলে আসছে আজও।প্রতি বছরই জৈষ্ঠ্য মাসের পয়লা তারিখেই পুজো পার্বন অনুষ্ঠিত হয়।পুজো উপলক্ষে সারাদিন মেলা বসে।দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয়।চৈত্র মাসের মতো সন্ন্যাসী হয় প্রচুর ভক্ত। এমন কি ঝাঁপও হয়।অনেকেই মানত করেন।জানা গিয়েছে ধর্মরাজের কাছে যে যেমন ভাবে মানত করেছেন,ধর্মরাজ তার মানত পূরণ করেছেন। বিশেষ করে ক্যানসার আক্রান্ত রোগী ধর্মরাজের চরণ স্পর্শ করে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। দাবী অগণিত ভক্তের।সাধারণ ভক্তরা মনঃষ্কামনা পূরণের জন্য বট-অশ্বথ্থ গাছে টিল বাঁধেন। আবার কেউ কেউ মন্দির প্রাঙ্গণে পুকুরে গিয়েও মানত করেন।মানত সফল হলেই ধর্মরাজ কে পুজো দিয়ে থাকেন ভক্তরা।সোমবার বাসন্তীর চড়াবিদ্যা গ্রামে বসেছিল ৮৫ তম ধর্মরাজ মেলা।ভীড় হয়েছিল লক্ষলক্ষ ভক্তের।মনঃষ্কামনা পূরণ হওয়ায় এদিন ১০৫ জন ভক্ত ধর্মরাজের ছলম(মাটির তৈরী ধর্ময়াজের মূর্তি)দিয়ে পূজোপাঠ করেছেন।ধর্মরাজের নির্দেশে মন্দিরের পুরোহিত ও পরিবর্তন করা হয় না। শুরুতেই পুজোপাঠ করতেন বারুইপুরের সরবেড়িয়ার শৈলেন্দ্র নাথ আচার্য্য। তাঁর প্রয়াণের পর তাঁরই জামাই ভূতনাথ চ্যাটার্জী ধর্মরাজ এর পুজোর দায়িত্ব লাভ করেন।
পুজো কমিটির সম্পাদক অশোক নস্কর জানিয়েছে ‘বিগত দিনের সমস্ত নিয়ম মেনেই ধর্মরাজ বাবার পুজো অনুষ্ঠিত হয়।দেশ বিদেশ থেকে প্রচুর ভক্তরা আসেন পুজো দিতে এবং মানত করতে। একদিনের ধর্মরাজ মেলায় মহামানবের মিলনক্ষেত্র হিসাবে গড়ে ওঠে সুন্দরবনের অখ্যাত গ্রাম চড়াবিদ্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here