সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়ল সাঁকরাইল সর্দার পাড়ার বাসিন্দারা।

প্রকাশ কালি ঘোষাল, হাওড়া :  দেশের মধ্যে মন্দির মসজিদ নিয়ে বিবাদ যখন তুঙ্গে। উভয়পক্ষের ধর্মগুরু ও মৌলবী দের বক্তব্যে দেশ তথা রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতাবরণ নষ্ট হচ্ছে। তারই মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির প্রকাশ্যে এলো সাঁকরাইল ব্লকের এলাকায়।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই অনন্য নজিররের ঘটনাটি আজকে ঘটে হাওড়ার সাঁকরাইল ব্লকের অগ্রগামী ক্লাব এর সন্নিকটে সর্দার পাড়াতে।
ওই পাড়াতে আজকে সন্তোষ কর্মকার নামে এক ব্যাক্তি মারা যান। মৃতের ছেলে মাধব কর্মকার তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। তার বাবার দাহ সৎ কারের জন্য এগিয়ে আসে ওই এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। দীর্ঘ দিন ধরেই এই পাড়ার কর্মকার পরিবার আর্থিকভাবে খুবই দূর্বল। দিন আনতে পান্তা ফুরোয় এই অবস্থার মধ্যে মৃত পিতার দাহ কার্য কিভাবে হবে তা নিয়ে যথেষ্ট দুশ্চিন্তায় ছিল মৃত সন্তোষ কর্মকারের পুত্র মাধব কর্মকার। নিজের অক্ষমতার জন্য আটকে যেতে বসেছিল মৃত পিতার দাহ কার্যের কাজও। তবে সেই মুস্কিল আসান করলো ওই পাড়ারই মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা। তারা এগিয়ে এসে দাঁড়ালেন কর্মকার পরিবারের পাশে সাথে হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক ব্যাক্তির মৃতদেহ সৎকারের দায়িত্ত্ব নিলো ওই এলকার মুসলিম ধর্মাবলম্বী বাসিন্দারা।
রীতিমত দাহ সৎ কারের সমস্ত বিধি ব্যবস্থা মেনেই তাকে স্থানীয় শ্মশান ঘাটে নিয়ে যায়। অন্তিম সজ্জাতে মৃতদেহের গায়ে নামাবলী থেকে শুরু করে ফুল চন্দন দিয়ে সাজিয়ে কাঁধে করে শ্মশান ঘাটে নিয়ে যায় তারা। সেখানেই তার পারোলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করান এই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন।
স্থানীয় বাসিন্দা সীমা মিদ্দে জানান তারা এখানে হিন্দু মুসলিম একই সঙ্গে বসবাস করেন। তাদের মধ্যে কোনো জাতপাত ও ধর্মের ভেদাভেদ নেই। তারা একে অপরকে মানুষ হিসাবেই সন্মান করেন। তাই আজকে মুসলিম ভাইয়েরাও এগিয়ে এসেছেন ও কর্মকার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি জানান লকডাউনের সময়তেও এলকার মুসলিম সম্প্রদায় কর্মকার পরিবারকে অনেকভাবে সাহায্য করেছিল। তিনি বলেন মোরা একই বৃন্তে দুইটি কুসুম হিন্দু মুসলমান। হিন্দু তার নয়ন মনি মুসলিম তার প্রাণ তারা এটাই বিশ্বাস করেন।
অপর এক বাসিন্দা নাসিরউদ্দিন সর্দার বলেন এখানে কোনো ধর্মীয় বিভেদ নেই। তার ছেলেরা এগিয়ে এসেছেন। একজন হিন্দু ব্যাক্তির সৎকারের জন্য যা যা করণীয় তার সবই এখানে নিষ্ঠা সহকারে করা হবে। তিনি নিজেও যাবেন সন্তোষ বাবুর শেষ যাত্রায়।
আর্থিকভাবে দুর্বল সর্দার পাড়ার কর্মকার পরিবারের দুর্দিনে যেভাবে ধর্মীয় বিভেদকে দূরে ঠেলে সম্প্রীতির ছবি ফুটে উঠলো তার নজির স্বভাবতই সমাজে খুবই দূর্লভ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *