সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং – খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত রফিকুলকে ফাঁসি দিতে হবে। আর এই দাবি নিয়েই তৃণমূল নেতৃত্বের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসীর ও নিহতের তৃণমূল কর্মী স্বপন মাঝি,ভুতনাথ প্রামাণিক ও ঝন্টু হালদাদের পরিবার পরিজনরা।রীতিমতো হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রায় কয়েক হাজার গ্রামবাসী এদিন উপস্থিত হন নিহত তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য স্বপন মাঝির বাড়ির সামনে। নেতৃত্ব অবশ্য গ্রামবাসীদের কে আশ্বাস দেন যে, দোষীরা অবশ্যই উপযুক্ত সাজা পাবে। পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করবে। শুধু তাই নয় । তৃণমূলের একটি পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল যায় এলাকায়। নিহত তিনটি পরিবারের হাতে ৪ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য গত ৭ জুলাই ক্যানিংয়ের গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ধর্মতলার জেলেপাড়া সংলগ্ন পিয়ারের পার্ক এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তার উপর গুলি করে চপার দিয়ে খুন করা হয় তিন তৃণমূল কর্মীকে। একজন হলেন স্থানীয় গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সদস্য স্বপন মাঝি ও অন্য দুই তৃণমূল কর্মী হলেন ভূতনাথ প্রামাণিক ও ঝন্টু হালদার। এই ঘটনার পর অতিক্রান্ত হয়েছে দুদিনের বেশি সময়। এই ঘটনা জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ শুধুমাত্র বশির উদ্দিন শেখ নামে এক দুষ্কৃতির ভাই আবতাফ উদ্দিন শেখকে গ্রেপ্তার করেছে কুলতলী এলাকা থেকে । মূল অভিযুক্ত রফিকুল সর্দার সহ অন্যরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় বিক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয় মানুষের মধ্যে। আর তাই বিক্ষোভ থেকেই স্থানীয় মানুষরাই এদিন নিহতের বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখায়।
তিনটি পরিবারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত করুণ।আর্থিক অনটনের মধ্যেই দিন কোন রকমে কাটাচ্ছেন তারা। স্বপন মাঝি সেই ভাবে এলাকায় তেমন কিছু রোজগার করতেন না। শুধু তাই নয় অন্য দুজন পরিবারের একমাত্র রোজগারের সদস্য ছিলেন। তাদের আর্থিক অবস্থা আরো করুণ। সেই কথা বিবেচনা করে শনিবার তৃণমূলের এক প্রতিনিধি দল আসেন এবং আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়া হয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হাতে।
এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের যে প্রতিনিধি দল স্বপন মাঝির বাড়িতে উপস্থিত হন । ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে কথা বলেন। তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিন পরিবারের সদস্যরা।পাশাপাশি নিহত তৃণমূল কর্মীর পরিবার থেকে দাবী করা হয় চাকরি ব্যবস্থা করার জন্য। এই তৃণমূলের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, মালা রায়, সাংসদ প্রতিমা মন্ডল, শুভাশিস চক্রবর্তী, বিধায়ক দিলীপ মন্ডল, শওকত মোল্লা, পরেশ রামদাস, যোগরঞ্জন হালদার, সুব্রত মন্ডল ও অন্যান্য দলীয় নেতৃত্বরা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতোই এই প্রতিনিধি দলটি এলাকায় আসেন বলে জানান সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার।
এ বিষয়ে সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, দোষীরা অবিলম্বে সাজা পাবে। শুধু তাই নয় দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেবে প্রশাসন। কোনরকম রাজনৈতিক রঙ না দেখেই দুষ্কৃতীদের জন্য প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন। এটা উত্তর প্রদেশ নয়।এখানে বিচার না করে এনকাউন্টার করে মেরে দেওয়া হবে। পরিবারের লোক সঠিক বিচার এবং ন্যায়বিচার পাবেন। এটা দুষ্কৃতিদেরই কাজ। দুষ্কৃতিরা কখনো দুষ্কর্ম করে এ রাজ্যে রেহাই পাবে না।
বিধায়ক সওকত মোল্লা বলেন ‘খুনের ঘটনায় জড়িত বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতিরা অবশ্যই সাজা পাবে। তার জন্য আমাদের যা যা করণীয় তার সবটাই করবো।’
নিহত পরিবার গুলোর চাকরীর দাবী প্রসঙ্গে ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক পরেশরাম দাস বলেন ‘তৃণমূল কংগ্রেস জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি মানুষের পাশে রয়েছে এবং থাকবে। নিহতদের পরিবার যে চাকরির দাবী করেছেন তা আমরা আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর কাছে জানাবো।পাশাপাশি খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের যাতে ৭২ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করে পুলিশ প্রশাসন সেই দাবীই জানাবো। ’
অন্যদিকে নিহত তৃণমূল কর্মীদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিধায়ক সওকত মোল্লা ও বিধায়ক পরেশরাম দাস সোজা ক্যানিং থানায় হাজীর হয়। সেখানে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্তদের ধরার জন্য পুলিশ কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
গত বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরও এদিন এলাকার পরিস্থিতি ছিল যথেষ্টই থমথমে। বহু বাড়ি এখনো পুরুষ শূন্য। স্থানীয় বাজারগুলিতে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। এলাকায় বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট।
Leave a Reply