“জীবে প্রেম করে যেই জন,সেই জন সেবিছে ঈশ্বর” এই বার্তা নিয়ে পৃথিবীর ভারসাম্যর রক্ষা করছে কোলাঘাটে সর্পপ্রেমীক যুবক।

0
310

পূর্ব মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:-  “জীবে প্রেম করে যেই জন,সেই জন সেবিছে ঈশ্বর” এই বার্তা নিয়ে পৃথিবীর ভারসাম্যর রক্ষা করছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাটে সর্পপ্রেমীক প্রলয় ঘোষ,গর্বিত পরিবেশপ্রেমীরা,
সাড়ে পাঁচ ফুটের কালো খরিষ, ছোট বাচ্চা থেকে ইয়া বড়সড় মোটাসোটা চন্দ্রবোড়া, কখনো আবার বিষাক্ত মা-গোখরা সপের সাথে তার একাধিক বাচ্চা সাপ। আঠাশ বছরের জনমজুর যুবক প্রলয় ঘোষ তাদেরকে উদ্ধার করে প্রাণ বাঁচাচ্ছে । আশপাশের গ্রাম থেকে যখনই খবর পেয়েছে সব কাজ ফেলে খাঁচা ডিব্বা লাঠি নিয়ে পৌছে যাচ্ছেন সাপ ধরতে। এরপর তার সাধ‍্যমত সাপের যত্ন আত্তি ও সংরক্ষণ করে পাঁশকুড়া বন দফতরে নিজেই খবর দেন। বন দফতরের কর্মীরা যখন সময় হয় চার চাকার গাড়ি, গ্লাভস, কাঠের পেটি, স্নেক স্টিক ইত্যাদি নিয়ে তিন/চারজন হাজির হন। ঢাল তলোয়ারহীন সর্পপ্রেমীক প্রলয় তার উদ্ধার করা ভয়ংকর বিষাক্ত সাপ গুলো তুলে দেন বন দফতরের হাতে। এক আধবার নয় কয়েক বছরের এই ঘটনায় কোলাঘাটের আঁড়র, আশুরালী, ছাতিন্দা বোরডাঙ্গি সহ আশ পাশের গ্রামের মানুষের কাছে প্রলয় ঘোষ সর্প প্রেমিক হিসাবে এক পরিচিত নাম হয়ে উঠেছে। ঘরে বাকুলে আশপাশের ঝোপ ঝাড়ে বিষাক্ত সাপ দেখা দিলেই প্রলয় মানুষ এবং সাপ উভয়ের কাছেই রক্ষাকর্তার ভূমিকা পালন করে চলেছেন। এই চলতি বছরেই লুপ্তপ্রায় প্রায় আটটি সাপ বন দফতরে হাতে তুলে দিয়েছেন বলে প্রলয়ের দাবি। প্রলয়ের বাড়ি কোলাঘাট থানার আঁড়র গ্রামে। বৃদ্ধা মাকে নিয়ে তার একার সংসার। আয় ইনকাম বলতে এক বেসর কারি ইমারতি সামগ্রী সরবরাহের শ্রমিক। সাপ ধরার মত এমন বিপজ্জনক কাজে তার কেন এত আগ্রহ জানতে চাইলে প্রলয় বিনয়ের সাথে জানান, –
” এই মহাবিশ্বে অন‍্যসব গ্রহের থেকে পৃথিবী এইজন্যই আলাদা যে এখানে সবুজ ও প্রানের অস্তিত্ব আছে।
সেই পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় সব প্রানীর অস্তিত্ব থাকলে তবেই আমরা সবাই বাঁচব। বিশেষ করে গ্রামে গঞ্জে সাপ ধরা পড়লে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পিটিয়ে মেরে দেওয়া হয়। এতে কেন জানিনা আমার খুব কষ্ট হয়। তাই আমার জন্মগত বা নিজস্ব পারদর্শিতা দিয়ে সাপগুলো ধরি এবং বনদফতরে হাতে তুলে দিয়ে নিজে খুব স্বস্তি ও আনন্দ পাই। “বনদপ্তর তোমাকে যদি সাপ ধরার প্রশিক্ষণ দেয় তুমি কি তা নেবে ? এই প্রশ্ন করলে প্রলয় আক্ষেপ করে বলেন,” আমার এই ঘটনা স্থানীয় পুলিশ, গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির বনজসম্পদ, ব্লক উন্নয়ন অফিস, জেলার বন দফতর সবাই কমবেশী জানেন। কতবার অনুরোধ করেছি , আমাকে সাপধরার বিশেষ স্টিক, গ্লাভস, সাপ ধরে রাখার দু-একটা পেটি দিননা ! সবাই বলেন দেখছি, এভাবেইতো কেটেগেল কয়েক বছর। আমি মজুর খেটে যা পাই তাতে সংসারই চলেনা। তবে আমি যত দিন পারব আমার সীমিত সামর্থ‍্য দিয়েই এইসব প্রানীদের সাধ‍্যমত বাঁচিয়ে বনদফতরে হাতে তুলে দেব। ওনাদেরতো আবার ডাকলেই সাথে সাথে পাওয়া যায়না, তখন বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়। প্রলয়ের একবিন্দু আশার আলো, কোলাঘাট নতুন বাজারের একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান কথা দিয়েছে আগামী এক সপ্তাহের মধ‍্যে সাপধরার কিছু সামগ্রী খরিদ করে ওর হাতে তুলে দেবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কতৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসন প্রলয়ের পাশে যৎসামান্য থাকলে হয়ত আরো ভালো হত বলে অভিমত ওই স্বেচ্ছা সেবী প্রতিষ্ঠানের অন‍্যতম অসীম দাস। পাশাপাশি এই প্রলয় ঘোষের এইরকম কর্মকাণ্ডতে গর্বিত এলাকার পশুপ্রেমী থেকে শুরু করে সমাজসেবীরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here