নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা:- শিক্ষক হচ্ছেন ছাত্র তৈরীর কারিগর। যার হাত ধরেই ভবিষ্যৎ তৈরি হয় শিশুদের । কিন্তু মালদার কালিয়াচকের এক বেসরকারি মাদ্রাসার শিক্ষকের বিরুদ্ধে নাবালক ছাত্র পেটানো এবং কয়েক ঘন্টা ধরে নৃশংস অত্যাচারের ঘটনা অভিযোগ উঠে আসাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এমনকি পুলিশ এব্যাপারে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। অবশেষে বাধ্য হয়ে নির্যাতিত ওই ছাত্রের পরিবার সুবিচারের আশায় মালদা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে কালিয়াচক থানার শাহবাজপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চরকাটোলা এলাকার। সেখানকার একটি আবাসিক মাদ্রাসা মিশনের এক শিক্ষক নাকি দ্বিতীয় শ্রেণীর নাবালক ছাত্রকে চোর অপবাদ দিয়ে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ । শুধু তাই নয় চুরির ঘটনা স্বীকার করার জন্য ওই ছাত্রকে কয়েক ঘণ্টা ক্লাসরুমে আটকে রেখে ওঝা – গুনিন দিয়ে ঝাড়ফুঁক করা এবং মন্ত্রপুত ওষুধ খাওয়ানোর ভয় দেখায় বলে অভিযোগ । ওই শিক্ষকের মারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে আবাসিক মাদ্রাসা মিশনের দ্বিতীয় শ্রেণীর ওই ছাত্র। প্রাথমিকভাবে ওই ছাত্রের চিকিৎসা করানো হয়েছে মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে।
আক্রান্ত ছাত্রের বাবা মোবারক হোসেন জানিয়েছেন , গত শনিবার আমার ছেলেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার মাদ্রাসা মিশনের এক শিক্ষক সৈয়দ আখতার ৪০০ টাকা চুরির অপবাদ দেয়। এরপর ছেলের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায় । লাঠি দিয়ে মারার পাশাপাশি ছেলেকে ঘরে আটকে জাদুটোনার ভয় দেখানো হয়। এরপরই ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিষয়টি জানতে পেরে আমরা ওই মাদ্রাসা মিশন কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাই। কিন্তু ওরা সমস্ত বিষয়ে এড়িয়ে যায়। গত শনিবার এই ঘটনার পর কালিয়াচক থানার অন্তর্গত গোলাপগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে আমরা গিয়েছি অভিযোগ জানাতে । কিন্তু পুলিশ অভিযোগ নেয় নি। বিষয়টি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে মিটমাট করে নেওয়ার কথা পুলিশ বলছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা এক আইনজীবীর সাহায্য নিয়ে সুবিচারের আশায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।
আক্রান্ত ওই ছাত্রের পক্ষের আইনজীবী মহম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, এই ধরনের শিক্ষকের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। নির্মমভাবে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাবালক ছেলেকে পেটানো হয়েছে। ঘর বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এই ঘটনার পর কেন ওই মাদ্রাসা মিশনের অন্যান্য শিক্ষা কর্মীরা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল না, সেটাও বুঝতে পারছি না। পুলিশের ভূমিকা হতাশা জনক। ওই ছাত্র বৈষ্ণবনগর থানার গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা হলেও, সে পড়তো কালিয়াচকের ওই আবাসিক মিশন মাদ্রাসায়। ফলে সেখানকার পুলিশ কোনরকম সহযোগিতা করে নি। বরঞ্চ তারা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টি মীমাংসা করে নেওয়ার জন্য বলেছে। এই অবস্থায় ওই ছাত্রের পরিবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে । অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে নাবালক ছাত্রকে মারধোর, শারীরিক নির্যাতন সহ বেশ কয়েকটি ধারায় মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ যাতে অভিযোগ নেই সে ব্যাপারে আদালতে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
যদিও এ প্রসঙ্গে ওই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি। অভিযুক্ত শিক্ষকের সঙ্গে কোনরকম ভাবে যোগাযোগও করা যায় নি। পাশাপাশি কালিয়াচক থানার অন্তর্গত গোলাপগঞ্জ ফাড়ির পুলিশও এব্যাপারে কোন মন্তব্য করে নি।
মালদার কালিয়াচকের এক বেসরকারি মাদ্রাসার শিক্ষকের বিরুদ্ধে নাবালক ছাত্র পেটানো এবং কয়েক ঘন্টা ধরে নৃশংস অত্যাচারের ঘটনা অভিযোগ উঠে আসাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

Leave a Reply