পালিত হল ঐতিহাসিক মে দিবস।

পূর্ব বর্ধমান, রামকৃষ্ণ চক্রবর্তীঃ- সোমবার আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস।
১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের ম্যাসাকার শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে প্রতিবছর এই দিনে মে দিবস পালিত হয়।
সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই কর্ম বিভাজন শুরু হল। এক শ্রেণী কৃষিকাজে নিয়োজিত শ্রমিক ও অপর শ্রেণী ভূস্বামী বা জমির মালিক। ধীরে ধীরে সমাজে তৈরি হয়ে গেল শ্রেণী বৈষম্য। কিছু সুবিধাভোগী মানুষ এটা বেশ বুঝে গেলেন, বিনা পরিশ্রমে কেবল বুদ্ধি খাটিয়ে অপরের শ্রমের উপরে নির্ভর করে দিব্যি সুখে থাকা যায়। এই ধারণা থেকেই পরবর্তী কালে বিশেষতঃ প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় দাসপ্রথা গড়ে উঠেছিল।

ক্রমশ বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে উন্নত ও পরে স্বল্পোন্নত দেশগুলিতে কলকারখানা গড়ে উঠল। সেই সব জায়গায় রুটিরুজির জন্য বহু শ্রমিক নিয়োজিত হলেন। বহু দশক জুড়ে এ ধরনের শ্রমিকদের নির্দিষ্ট শ্রমদিবস ছিল না। মালিকের প্রয়োজন অনুযায়ী, তাঁদের কাজ করতে হত। দৈনন্দিন চাহিদার তুলনায় পারিশ্রমিক ছিল নগণ্য। উনবিংশ শতকের শেষার্ধে এ ধরনের শ্রমজীবী মানুষেরা প্রাণের দায়ে ক্রমশ একত্রিত হতে থাকলেন। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ দানা বাঁধতে বাঁধতে ধীরে ধীরে শ্রমজীবী মানুষের সংগঠন বাড়তে থাকল। আমেরিকায় শ্রমিকদের মধ্যে থেকে গড়ে উঠল সমাজবাদী, বামপন্থী, ট্রেড ইউনিয়ন, ক্লাব ইত্যাদি।
আধুনিক যুগে শ্রমিকের সারা জীবন গিলে খাচ্ছিল কারখানা। অসহনীয় পরিস্থিতিতে দিনে ১৬ ঘন্টা কাজ করতে হতো শ্রমিকদের।পুরো এক সপ্তাহ কাজ করার পর শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে, কঙ্কালসার হয়ে পড়ে শিশু শ্রমিকরা। ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের মধ্যে ওই বছরের ১লা মে শ্রমিকরা ধর্মঘট করে। ওই সমাবেশে প্রায় তিন লাখ মেহনতি মানুষ জমায়েত হয় শিকাগোর হে মার্কেটে।সেদিন তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামা বোমা নিক্ষেপ করেছিল,ফলস্বরূপ পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে এবং ১০-১২ জন শ্রমিক নিহত হয়।আরো অনেক শ্রমিক আহত ও গ্রেফতার হন।পরে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ছয় শ্রমিককে প্রহসনমূলক বিচারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।জেলে থাকা অবস্থায় এক শ্রমিক নেতাও আত্মহত্যা করেছেন। এরপর আরও দৃশ্যমান আকারে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সেই আন্দোলন। এসবের ফলে মার্কিন সরকার আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়।

এরপর ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলন’,যেখানে ১লা মে কে শ্রমিক দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। পরের বছর অর্থাৎ ১৮৯০ সাল থেকে ১লা মে বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। সোমবার সেই মর্মে পূর্ব বর্ধমানের পারকাস রোডের সিপিআইএম দলীয় কার্যালয়ে পালিত হয় ঐতিহাসিক মে দিবস।