আবার মেয়ে হওয়ার আশঙ্কায় পাঁচ মাসের অন্তসত্ত্বা গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদাঃ—-কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়াই যেন কাল হয়ে উঠেছিল নববধূ।আবার মেয়ে হওয়ার আশঙ্কায় পাঁচ মাসের অন্তসত্ত্বা গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে।প্রথমদিকে,দেহটি পোস্টমর্টেম না করিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল শ্বশুর বাড়ির লোকেরা।খবর জানাজানি হতেই পুলিশ এসে দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।পোস্টমর্টেম করার পর ওই গৃহবধূর মৃতদেহটি তার বাপের বাড়ির হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে জোরপূর্বক মাটি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে অভিযুক্ত শ্বশুর বাড়ির বিরুদ্ধে।যদিও সমস্ত ঘটনা হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় লিখিত আকারে দায়ের করা হয়েছে বলে
জানা গেছে।ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাতে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাংরুয়া গ্রামে।ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শাশুড়ি সুলতানা খাতুন ও ননদ মুসকান খাতুন পলাতক রয়েছেন।স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,বছর তিনেক আগে কাঁটিহার জেলার আজিম নগর থানার চান্দপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজির আলমের মেয়ে রেশমা খাতুন(২২)এর বিয়ে হয় বাংরুয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আলির ছেলে সুভান আলির সঙ্গে।বিয়ের সময় মেয়ের বাবা নাজির আলম সাধ্যমতো দামী সামগ্রী ও যৌতুক দিয়েছিলেন।তবে পাত্র পক্ষ আরো দুই লক্ষ টাকা দাবি করেছিল।কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিক বাবার পক্ষে ওই টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি।বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য রেশমার উপর চলত অত্যাচার,এমনটাই অভিযোগ পরিবারের।বিয়ের বছর খানেক পর রেশমার কোলে আসে এক কন্যা সন্তান।কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ায় খুশি হয়নি শ্বশুর বাড়ির পরিবার।অভিযোগ,তারপর থেকেই গৃহবধূর ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালাত স্বামী সহ শ্বশুর বাড়ির লোকেরা।জুটত লাঞ্ছনা-বঞ্চনা।
শুধু তাই নয়,ওই গৃহবধূকে বাবার বাড়ি থেকে দুই লক্ষ টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করতেন স্বামী ও শ্বশুর।টাকা না নিয়ে আসলে তার পরিনতি হবে মারাত্মক বলে হুমকি দিতেন শ্বশুরবাড়ি লোকেরা।
পরিশেষে মৃত্যু গৃহবধূর।রেশমার মা জাকেরা খাতুন বলেন,”মুসলিম শরিয়ত মতে তিন বছর আগে তার মেয়ের বিয়ে হয় বাংরুয়া গ্রামে।বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে বাইক,আসবাবপত্র,গয়না ও নগদ অর্থ দিয়েছিলেন ছেলেকে।দেড় বছর আগে মেয়ের কন্যা সন্তান হয়েছে।মেয়ের পুত্র সন্তান না হয়ে কেন কন্যা সন্তান হল?এই জন্য স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করতো।তার মেয়ে মুখ বুজে সব সহ্য করে নিয়েছিল।এরই মাঝে তার মেয়ে আবার পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বামী,শ্বশুর ও দেওয়রের ষড়যন্ত্রে আমার মেয়েকে খুন করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়েছে শাশুড়ি ও ননদ।’এই মৃত্যুর ঘটনায় প্রকৃত তদন্ত চেয়ে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেছেন মেয়ের পরিবার।পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছেন।এদিকে মৃতদেহ পুনরায় কবর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বাপের বাড়ির এলাকায় শেষকৃত্য করার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হবেন ওই গৃহবধুর মা বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *