আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর আগে বারো ভূঁইয়ার অত্যাচারে বাংলাদেশ থেকে প্রতাপ আদিত্যের বংশধররা আসেন বাঁকুড়া জেলায়। যা তৎকালীন সময়ে ছিল অবিভক্ত বাংলা। মূলত বর্তমানের স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের যশোর থেকে অত্যাচারিত হয়ে তারা চলে আসেন এপার বাংলায়। অবস্থান করেন বর্তমান সময়ের বাঁকুড়া জেলার ওন্দার দামোদরবাটি গ্রামের পশ্চিমের জঙ্গলে। পরবর্তীকালে বসবাস স্থলের পাশে একটি নদী থেকে উদ্ধার করা হয় নিম কাঠের মা মৃন্ময়ীর মূর্তি। সেই সময় বিষ্ণুপুরের রাজা অম্বিকানগর যেতেন দামোদরবাটি গ্রামের উপর দিয়ে। রাজার দৃষ্টি আকর্ষণ করে কাঠের মূর্তি। তিনি বিষ্ণুপুরে নিয়ে যেতে চান মায়ের দারু মূর্তি। প্রতাপ আদিত্যের বংশধরেরা রাজার হাতে তুলে দিতে চাননি মায়ের মূর্তি। বাধ্য হয়ে বিষ্ণুপুরের রাজা ১৪ টি মৌজা দান করেন তাদের এবং উপাধি দেন চৌধুরী। তখন থেকেই শুরু চৌধুরী রাজবাড়ীর। প্রতিষ্ঠিত হয় মা মৃন্ময়ীর মন্দির। সেই তখন থেকেই প্রায় ৩৫০ বছর ধরে নিম কাঠের মূর্তি পূজিত হয়ে আসছে মহা সমারহে।
বাঁকুড়া জেলার দামোদরবাটি গ্রামের চৌধুরী রাজবাড়ির প্রতিমার কাঠামো একেবারে অন্য ধরনের। প্রতিমাতে স্থান পেয়েছে মায়ের গোটা সংসার। একদম উপরে অবস্থান করছেন মহাদেব। ১৬ টি মূর্তি সম্বলিত এই পুরো কাঠামোটি। বৈষ্ণবী ধারা অনুযায়ী সপ্তমী অষ্টমী নবমী চাল কুমড়ো এবং আখ বলি হয় পুজোতে। সাবেকী পূজোয় চাকচিক্য না থাকলেও রয়েছে বহু ইতিহাস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের টানে দামোদরবাটি গ্রামে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। বিশেষ করে অষ্টমীর দিন ধল নামে মানুষের। এখনও দেখা যাবে পুরনো রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ। সেই ধ্বংসাবশেষের আড়ালে যেন আটকে রয়েছে কত না বলার ইতিহাস কত না বলা গল্প।
থিম পুজোর জাঁকজমক এবং চাকচিক্য থেকে বেরিয়ে যদি সাবেকি আনা অনুভব করতে চান তাহলে অবশ্যই আসন্ন দুর্গাপূজায় চলে আসুন বাঁকুড়া জেলার দামোদরবাটি গ্রামে। পুরনো গড় দরজা পেরিয়ে সুবিশাল রাজ প্রাঙ্গনে প্রবেশ করলেই মনে হবে যেন পৌঁছে গেছেন তৎকালীন সময়ে। রাজ পরিবারের বংশধরদের মুখেই শুনতে পারবেন রাজবাড়ীর এবং মা মৃন্ময়ীর ইতিহাস।
Leave a Reply