দুবরাজপুর, সেখ ওলি মহম্মদঃ- নতুন বছরের প্রথম দিনে আপামর বাঙালিরা মাতেন বনভোজনে। ঠিক তেমনি জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাও যান বনভোজনে। এছাড়াও তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে যান শ্রীকৃষ্ণ, গোপালজি ও বনমালী। এই রীতি দীর্ঘ ১৫০ বছরের বেশী পুরাতন।
উল্লেখ্য, দেড়শ বছর আগে বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের হেতমপুরে শ্রী গৌরাঙ্গ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হেতমপুরের মহারাজ শ্রীরামরঞ্জন চক্রবর্তী। প্রাচীনকালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই বনভোজনের এই রীতি প্রচলিত রয়েছে। কালের নিয়মে সেই রাজাও নেই, রাজত্বও নেই। বহু বছর ধরে এই বনভোজন অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল। গৌরাঙ্গ মঠ এই মন্দিরের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আবার রীতি মেনে শুরু হয় বনভোজন অনুষ্ঠান। তবে বর্তমানে তা আরও জাঁকজমকপূর্ণ হয়েছে। যোগ হয়েছে গৌড়ীয় রীতিনীতি। আর প্রাচীন সেই রীতি মেনেই ইংরেজি বছরের প্রথম দিন মন্দিরের পাশের জঙ্গলে ভগবানকে নিয়ে ভক্তদের হয় বনভোজন।
বছরের প্রথম দিনে বনভোজনের ক্ষেত্রে আরও এক প্রাসঙ্গিকতার কথা শোনা যায় গৌড়ীয় মঠের অধ্যক্ষ শ্রী ভক্তি বারিধী ত্রিদন্ডী মহারাজের মুখ থেকে। জানা যায়, এই দিনেই ২০০৭ সালে হেতমপুরের রাজা মাধবীরঞ্জন চক্রবর্তী তাদের হাতে মন্দিরের এবং দেবতাদের সেবার দায়িত্ব তুলে দেন। সে কারণেই আজকের দিনটাকে একটু আলাদা ভাবে উপভোগ করা হয়।
বনভোজনে মূল চার রকম পদ থাকলেও ভক্তদের দেওয়া নানান পদে ভোগের সংখ্যা বাড়তেই থাকে, তা দাঁড়ায় প্রায় ৫৫ – ৬০ ধরনের। মূল চার রকম পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সাদা অন্ন, পুষ্পান্ন, খিচুড়ি অন্ন, পরমান্ন। এছাড়াও থাকে নানান ধরনের মিষ্টি বা মিষ্টান্ন। একেবারেই রাজকীয় ভাবে এদিন ভগবান জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রা এছাড়াও শ্রীকৃষ্ণ, গোপালজি ও বনমালী কে নিয়ে ভক্তদের বনভোজনের রীতি বছরের পর বছর ধরে হয়ে আসছে হেতমপুরের এই গৌরাঙ্গ মঠে। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ও হরিনাম সংকীর্তনের মধ্য দিয়ে জাঁকজমকভাবে মন্দির পরিক্রমা করার পর, নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গলে। রীতি মেনে দিনভর চলে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান। আর বনভোজন হয়ে গেলেই একইভাবে আবার ফিরিয়ে আনা হয় মূল মন্দির প্রাঙ্গনে। নতুন বছরের প্রথম দিন অন্যরকম বনভোজনের যোগ দিতে দুর-দুরন্ত থেকে ভক্তরা ছুটে আসেন।
জগন্নাথ, বলরাম সুভদ্রাকে নিয়ে বনভোজন হেতমপুরে।

Leave a Reply