কাঁথি শহরে বহুতল দুর্নীতির পর্দা ফাঁস।

0
44

পূর্ব মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ- বেআইনি বহুতল নির্মাণের অভিযোগ উঠেছিল অনেক আগে থেকেই। অবৈধতার সেই অপবাদ থেকে বাঁচতে, এবার সেই বহুতলে করা হলো তৃণমূলের নির্বাচনী কার্যালয়।পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে, দীঘা বাইপাসের পাশেই এই বেআইনি বহুতল নিয়ে ভোটের মুখে এবার অভিযোগ তুললো বিজেপি। নয়াপুট এম এম জুনিয়ার বেসিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবকৃষ্ণ বড়াই এই বহুতল দূর্নীতি করছেন বলে বিজেপির অভিযোগ। কিছুদিন আগে গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙ্গে পড়ার সেই স্মৃতি, রাজ্যবাসীর মনে এখনও টাটকা। সেই কান্ড থেকে কাঁথি যে শিক্ষা নেয়নি, সে নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। এমনকি এই বেআইনি বহুতল ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য, পৌরসভার বোর্ড মিটিংয়ে দাবি করবেন বলে জানিয়েছেন কাঁথি পৌরসভার কাউন্সিলর তথা কাঁথি শহর বিজেপি সভাপতি সুশীল দাস।
এই বহুতলের পাশের বাসিন্দা হলেন বেনু প্রধান। এই বহুতলের বিরুদ্ধে প্রথম দিন থেকেই অভিযোগ তুলেছেন তিনি। কারণ এই বহুতলের লেআউটের দিন থেকেই, বেনুবাবুর বাড়িতে ফাটল ধরেছিল। সেই নিয়ে কাঁথি পৌরসভায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন এই প্রতিবেশী। পুরসভায় বৈঠক হয়েছিল। বেণুবাবুর দাবি, সেই বৈঠকে ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন এই দেবকৃষ্ণ বড়াই। কিন্তু আজও তা মেলে নি। বেনুবাবুর আরও অভিযোগ, এই বহুতলের জন্য কাঁথি পৌরসভা থেকে ডোমেস্টিক প্লান অনুমোদন হলেও, বাস্তবে কমার্শিয়াল উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছেন বাড়ি মালিক। যে কারণে নির্মাণের সময় থেকেই, এই বিল্ডিং এর গায়ে, বিক্রি অথবা ভাড়ার জন্য বিজ্ঞাপনের ফ্লেক্স লাগানো হয়েছে। সেখানে দেবকৃষ্ণ বড়াই এর মোবাইল নাম্বারও দেওয়া রয়েছে। এছাড়াও একটা বহুতল নির্মাণ হলে তার চারপাশে দমকলের নিয়ম অনুযায়ী যতটা জায়গা ছাড়া জরুরী, তা মানা হয়নি বলে বেনুবাবুর অভিযোগ।
ইতিমধ্যেই এই বহুতলটি সরজমিনে তদন্ত করে দেখেছেন কাঁথি পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ বেরা। তিনি স্পষ্ট জানাচ্ছেন এই বহুতল বেআইনি। এমনকি কাঁথি পৌরসভা এই বহুতলের জন্য যে প্লান দিয়েছিল, তা না মেনেই এই বিল্ডিং নির্মাণ হয়েছে বলে পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ারের দাবি। নিয়ম মত বিল্ডিং এর চারিদিকে জায়গা ছাড়া হয়নি। আবার কাঁথি পৌরসভা সূত্রে প্রকাশ, ২১ মিটার পর্যন্ত বহুতল নির্মাণের অনুমোদন দিতে পারে পৌরসভা। কিন্তু এই বহুতলের উপরের তল প্লানের মধ্যে নেই। তবুও বাড়ি মালিক সেই তল নির্মাণ করেছেন। এই নিয়ে শুনুন কাঁথি পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ বেরার বিস্ফোরক মন্তব্য।
এই বহুতল নির্মাণ হয়েছে কাঁথি পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হলেন সুবল মান্না। তিনি আগে কাঁথি পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর নিজের ওয়ার্ডে বেআইনি বহুতল নির্মাণ নিয়ে অভিযোগ ওঠায়, পৌর প্রধানের চেয়ারে বসে, সেই নির্মাণ ভেঙ্গে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন সুবল মান্না।
তারপর কালের নিয়মে সময় গড়িয়েছে। পৌরপ্রধানের পদ হারিয়েছেন সুবল মান্না। কিন্তু বাইপাস সংলগ্ন সেই বেআইনি নির্মাণ বহাল তবিয়তে মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে। ভাবখানা এমন যেন, যে বহুতলে তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী কার্যালয় হয়, তাকে ভাঙ্গে কার সাধ্যি ? আর এই বহুতল নির্মাণের জন্য, যার নামে অভিযোগ তুলছে বিজেপি, সেই প্রধান শিক্ষক দেবকৃষ্ণ বড়াই মুখে কুলুপ এঁটে বসে রয়েছেন। এই অভিযোগ সম্পর্কে বারবার জানতে চাওয়া হলেও তিনি কোন মন্তব্য করেননি। এবার বিজেপির অভিযোগ, এই প্রধান শিক্ষক অনেকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো, তৃণমূলের নির্বাচনী কার্যালয়কে দেখিয়ে বেআইনি নির্মাণের তকমা ঢাকতে চাইছেন। এই বেআইনি নির্মাণ ভাঙ্গার জোরালো দাবি তুলেছে বিজেপি।