ভগ্নপ্রায় বাঁশ ও কাঠের পাটাতন দেওয়া সেতুতে উঠলেই নড়তে থাকে, দীর্ঘ সময় ধরে ব্রিজ তৈরি না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

পূর্ব মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:- তমলুক ও নন্দকুমারের বেশ কিছু মানুষের খাল পারাপারের ভরসা কাপাসবেড়্যার বাঁশের সেতু। খালের ওপর পাকার ব্রিজ তৈরি করার দাবি দীর্ঘদিনের। দীর্ঘ সময় ধরে ব্রিজ তৈরি না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, তাম্রলিপ্ত পৌরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাপাসবেড়্যা এলাকার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে প্রতাপ খাল। এই খালের ওপর দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে একটি ভাঙা বাঁশের সেতু। ওই সেতু পেরিয়ে ব্যবতারহাট আদর্শ বিদ্যালয়,কাপাসবেড়্যা প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে যায়। পাশাপাশি নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটানোর জন্য প্রায় হাজারখানে মানুষজন ওই সেতু পারাপার করে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড়সড়ো দুর্ঘটনা। বারবার বিভিন্ন দপ্তরে জানিও কোন লাভ হয়নি। কার্যত বাধ্য হয়েই প্রতিদিন ঝুঁকির পারাপার করছেন ছাত্র-ছাত্রী থেকে এলাকার মানুষজনেরা। এলাকায় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভোটের সময় নেতারা আসেন প্রতিশ্রুতি দেন এই ব্রিজ পাকা করে দেবেন বলে। কিন্তু ভোট চলে যাওয়ার পরেই কেউ ফিরে তাকায় না। এমনকি বছর কয়েক আগে ব্রিজ তৈরির জন্য লাগানো হয়েছিল ফলক। যদিও সেই ফলক এখন ভেঙে গিয়েছে।

তবে পুরোনো এই ব্রিজের চেহারা দেখলে শিউরে উঠতে হয়। ভগ্নপ্রায় বাঁশ ও কাঠের পাটাতন দেওয়া এই সেতুতে উঠলেই নড়তে থাকে সেতু। জোয়ার এলে প্রায়দিন ডুবে যাওয়ার ফলে অনেকসময় স্কুল পড়ুয়ারা পড়েও যান নিচের খালে। এই সেতু এতই সংকীর্ণ পাশাপাশি ২ জন মানুষ কোনভাবে হেঁটে যেতে পারবেন। এবং কোনক্রমে নিত্যযাত্রীরা তাদের সাইকেল নিয়ে হেঁটে পারাপার হন।

স্কুল পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, এই সেতু ব্যবহার করতে তাদের ভয় লাগে, পড়ে যাওয়ার ভয়ের পাশাপাশি ভেঙে পড়ার ভয় ও রয়েছে। তবুও এই সেতু ব্যবহার করেই তাদের যাতায়াত করতে হয়। স্কুল, টিউশন যাওয়ার একমাত্র ভরসা এই সেতু।

স্থানীয় কাপাসবেড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্দ্বীপ মাইতি বলেন, তারা বারংবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্কুল পড়ুয়াদের এই ঝুঁকির যাতায়াত নিয়ে,তবুও কোনো লাভ হয়নি।

স্থানীয় এক বাসিন্দা সুধাংশু বেরা বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান পৃথ্বীশ নন্দী তখন এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর থাকার সময় এই ব্রিজ করার জন্য একটি ফলক লাগিয়েছিলেন। সেই ফলক ভেঙে গেছে আর ব্রিজ শুরুই হয়নি। ভোট আসলে নেতারা আসেন প্রতিশ্রুতি দেন, ভোট মিটলে সব প্রতিশ্রুতি ভুলে যান তাঁরা।

স্থানীয় বাসিন্দা দীপঙ্কর মাঝি বলেন, আশেপাশের চার-পাঁচটি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা এই সেতু পেরিয়ে যাতায়াত করে। মাঝেমধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা। বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। এখন কবে আমাদের এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবো সেটাই দেখার বিষয়।

তবে এলাকার বিজেপি কাউন্সিলর শবরী চক্রবর্তী বলেন, ভোটের আগে শাসকদলের নেতারা অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু কোন কাজ হয়নি। আমি কাউন্সিলর হওয়ার পর ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুবার ওই সেতু রিপেয়ারিং করেছি। এই সমস্যার ব্যাপারে তমলুকের সাংসদ অভিজিৎ গাঙ্গুলীর দ্বারস্থ হয়েছিলাম। সাংসদ আশ্বাস দিয়েছেন ব্রিজ এর সমস্যা স্থায়ী সমাধানের।

যদিও এ বিষয়ে তাম্রলিপ্ত পৌরসভার চেয়ারম্যান দীপেন্দ্র নারায়ণ রায় জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের অর্থে পৌরসভা এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি যদি সাধারণ মানুষের অসুবিধে হয় তাহলে এই সেতুর জন্য আমরা রাজ্য সরকারের কাছে স্কিম করে পাঠাবো। অর্থ বরাদ্দ হলে অবশ্যই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *