আজ বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। প্রতিবছর এপ্রিল মাসের ২৫ তারিখে সমগ্র বিশ্বে পালন করা সচেতনতামূলক দিবস।আফ্রিকায় ২০০১ সালের ২৫ এপ্রিল প্রথম ম্যালেরিয়া দিবস পালন করা হয়। এরপর ২০০৭ সালে ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির ৬০তম অধিবেশনে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবসের প্রস্তাবনা করা হয়। এর পর থেকে প্রতি বছর ২৫ এপ্রিল দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
রাষ্ট্রসংঘর বিশেষ সংস্থা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তত্ত্বাবধানে এই দিবস সমগ্র বিশ্বের এর সদস্য রাষ্ট্রসমূহ এবং এর সঙ্গে জড়িত অন্য সংস্থাগুলি ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ এবং সচেতনতা সৃষ্টির জন্য এই দিবস পালন করে। ১০৬ টি দেশের প্রায় ৩.৩ বিলিয়ন লোক ম্যালেরিয়ার কবলে পরার সম্ভাবনা আছে। ২০১২ সালে ম্যালেরিয়াতে প্রায় ৬,২৭,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এর বহুসংখ্যক আফ্রিকার শিশু ছিল। এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা, মধ্য প্রাচ্য এবং ইউরোপের কিছু অংশ ম্যালেরিয়ার কবলে পড়েছে।
বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পালন করা বিশ্বের স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত ৮ টা সরকারি দিবস এবং কার্যসূচীর অন্যতম। বাকীগুলো হল বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস, বিশ্ব রোগপ্রতিরোধক সপ্তাহ, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, বিশ্ব তামাকবিরোধী দিবস, বিশ্ব এইডস দিবস, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস এবং বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস।
বিশ্ব ম্যালেরিয়া রিপোর্টের সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, ২০১৫ সালে প্রায় ৪,২৯,০০০ মানুষের মৃত্যু এবং ২১২ মিলিয়ন নতুন করে ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হয়েছিল। ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হার ২১% এবং মৃত্যুর হার ২৯% কমেছে। উপ-সাহারান আফ্রিকাতে সেই হার ক্রমে ২১% এবং ৩১% কমেছে।
১৮৮০ সাল নাগাদ চার্লস ল্যাভেরন লোহিত রক্ত কণিকা থেকে ম্যালেরিয়ার কারণ হিসেবে একটিমাত্র কোষবিশিষ্ট পরজীবী প্রোটোজোয়াকে চিহ্নিত করেন। ফলে শত বছর ধরে চলা দূষিত বায়ু সেবনের ফলে রোগ সৃষ্টির ভুল ধারণার অবসান ঘটে। ১৮৯৭ সালে ভারতে কর্মরত ব্রিটিশ ডাক্তার স্যার রোনাল্ড রস প্রমান করেন যে Anopheles (অ্যানোফিলিস) মশা এই রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। এ যুগান্তকারী আবিষ্কারের কারণে তাকে ১৯০২ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
এটি একটি সংক্রমিত স্ত্রী মশার (আনোফেলিস মশা) কামড়ের সাথে শুরু হয়, যা তার লালার মাধ্যমে প্রোটিস্টর সংবহন তন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করে এবং শেষে যকৃতে পৌছায়, যেখানে তারা পরিপক্ক হয় এবং বংশবৃদ্ধি করে। ম্যালেরিয়ার সাধারণ রোগের লক্ষণসমূহ হল জ্বর এবং মাথা ব্যাথা, যা খুব গুরুতর ক্ষেত্রে কোমা বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
ফলে মশা দূর করতে, মশার লার্ভা ধ্বংস করার বার্তা দেওয়া হয়। বিভিন্ন দেশের সরকারের তরফে সচেতনতা প্রচার করা হয়। কিন্তু যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার তা হল মানুষের সার্বিক সচেতনতা।
ম্যালেরিয়ার লক্ষ্মণ –
নির্দিষ্ট সময় পরপর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা। জ্বর সাধারণত ১০৫-১০৬ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে।
জ্বর ছেড়ে গেলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যেতে পারে।
মাঝারি থেকে তীব্র কাঁপুনি বা শীত শীত অনুভব,
গায়ে মারাত্মক ব্যথা এবং মাথাব্যথা।
বমি-বমি ভাব
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে করণীয়–
মশাবাহিত রোগ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার ব্যপারে সচেতন হতে হবে। মশার কামড় থেকে দূরে থাকাই এ রোগ প্রতিরোধের উপায়।
দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি বা কয়েল ব্যবহার করতে হবে। দরজা-জানালায় মশা প্রতিরোধক জাল, শরীরে প্রতিরোধক ক্রিম, ঘরে মশা মারা স্প্রে ব্যবহার করুন।
ঘরের আশপাশে কোথাও পানি জমে যেন মশা বংশবিস্তার না করতে পারে; সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
মশাবহুল স্থানে কীটনাশক বা কেরোসিন ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় যাওয়ার প্রয়োজন হলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়ে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ঔষধ সঙ্গে রাখা উচিত।
চিকিৎসা—–
রোগের উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সংক্রমণের তীব্রতা আর ম্যালেরিয়ার ধরণের উপর এই রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে। সাধারণতঃ তীব্রতা কম হলে ম্যালেরিয়া-প্রতিকারের জন্য মুখে খাওয়ার ঔষধ দেওয়া হয়। কিন্তু সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ার (মারাত্মক ম্যালেরিয়া) ক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
এ রোগ প্রতিরোধের জন্য কার্যকরী টিকা এখনো বিশ্বব্যাপী বহুল প্রচলিত নয়। তাই অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণই এ রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায়।
উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া থেকে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। ম্যালেরিয়া রোগে অধিকাংশ মৃত্যুর কারণ হলো সময়মতো রোগ সনাক্ত না হওয়া এবং চিকিৎসায় বিলম্ব করা। সেজন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। রোগের লক্ষণ দেখা দিলে জটিলতা সৃষ্টির আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।
Leave a Reply