
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দিঘা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে, বঙ্গোপসাগরের কোলে নিঃশব্দে বসে আছে শঙ্করপুর। এটি এমন এক সমুদ্রসৈকত যেখানে ভিড়ের কোলাহল নেই, শুধুই বাতাসের ফিসফিসানি, ঢেউয়ের গর্জন আর নির্জনতার স্নিগ্ধ ছোঁয়া। যারা প্রকৃতির সঙ্গে নিঃশব্দে কিছুক্ষণ কাটাতে চান, তাদের জন্য শঙ্করপুর এক আদর্শ স্থান।
️ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য
শঙ্করপুরের সৈকতের সৌন্দর্য দিঘা বা মন্দারমণির থেকে আলাদা। এখানে নেই প্রচুর পর্যটকের ভিড়, তাই প্রকৃতির আসল রূপটি নিঃসংকোচে ধরা দেয় চোখে। সূর্যোদয়ের সময় লালচে আলো যখন সমুদ্রের বুকে নাচে, সেই দৃশ্য একেবারে মনোমুগ্ধকর। সমুদ্রতটে সারি সারি কাঁকড়ার দৌড়ঝাঁপ, নারকেল গাছের ছায়ায় বসে ঢেউয়ের শব্দ শোনা—সব মিলিয়ে এখানে যেন প্রকৃতি নিজের গল্প বলে চলে।
মৎস্যজীবী গ্রাম ও জীবনের স্পন্দন
শঙ্করপুরের অন্যতম আকর্ষণ হল এখানকার মৎস্যজীবী গ্রাম। সকালে ভোরে সমুদ্রতটে দেখা যায় শত শত নৌকা মাছ ধরতে যাচ্ছে বা ফিরছে। তখন বাতাস ভরে ওঠে মাছের গন্ধে, আর জাল টানা, মাছ বাছাই—সব মিলিয়ে জীবনের এক বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে। এই দৃশ্য পর্যটকদের কাছে এক অনন্য অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে।
শান্ত নির্জনতার রাজ্য
দিঘা ও মন্দারমণির তুলনায় শঙ্করপুর এখনো অনেকটাই অপ্রচলিত। তাই এখানে ভিড় নেই, বাণিজ্যিক শব্দ নেই—শুধুই নির্জনতা আর প্রকৃতির শান্তি। অনেক দম্পতি, লেখক, কবি কিংবা ফটোগ্রাফার এখানে আসেন নিজের মতো কিছুটা সময় কাটাতে। সূর্যাস্তের সোনালি আলোয় যখন আকাশ ও সমুদ্র একাকার হয়ে যায়, তখন মনে হয় পৃথিবীর সব কোলাহল যেন দূর কোথাও হারিয়ে গেছে।
আবাসন ও যাতায়াত
শঙ্করপুরে এখন বেশ কয়েকটি সুন্দর হোটেল ও রিসর্ট রয়েছে, যেখানে আরামদায়কভাবে থাকা যায়। দিঘা থেকে টোটো, অটো বা গাড়িতে খুব সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় এখানে। কলকাতা থেকে সড়কপথে দিঘা যাওয়ার রাস্তাই শঙ্করপুর পর্যন্ত পৌঁছায়। ট্রেনে দিঘা স্টেশনে নেমে এখানেও আসা যায় সহজেই।
খাবার ও স্থানীয় রন্ধনপ্রণালী
শঙ্করপুরে সামুদ্রিক খাবারের স্বাদ না নিলে ভ্রমণ অসম্পূর্ণ। স্থানীয় হোটেলগুলোতে টাটকা মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, প্রন ভাজা ইত্যাদি পাওয়া যায়। যারা সমুদ্রপাড়ে বসে তাজা মাছ ভাজা আর ঠান্ডা নারকেল জল উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য এটি স্বর্গের মতো।
দর্শনীয় স্থান
শঙ্করপুরের কাছেই রয়েছে:
- দিঘা সমুদ্র সৈকত – মাত্র ১৪ কিমি দূরে।
- মন্দারমণি – প্রায় ২০ কিমি দূরে।
- তাজপুর সৈকত – প্রায় ১০ কিমি দূরে।
- উদয়পুর সৈকত – দিঘার কাছে অবস্থিত, এক অসাধারণ স্থান সূর্যাস্ত দেখার জন্য।
❤️ শেষকথা
শঙ্করপুর এমন এক স্থান, যেখানে সমুদ্রের ঢেউয়ে নেই কোলাহল, আছে শুধু শান্তির সুর। এখানে এসে মানুষ নিজের সঙ্গে কথা বলে, প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যায়। তাই যদি তুমি একদিন জীবনের চাপ থেকে মুক্তি খুঁজে নিতে চাও, তবে চলে এসো শঙ্করপুরে—এই নির্জন সমুদ্রতটে, যেখানে আকাশ, বাতাস আর ঢেউ তোমাকে আলিঙ্গন করবে নিঃশব্দ ভালোবাসায়।












Leave a Reply