দুর্গাপূজার সাথে জয়া ও বিজয়ার পুজা ও অঞ্জলি হয় গোপীবল্লভপুরের বক্সী বাড়ির পুজোয়।

তৃণ্ময় বেরা, ঝাড়গ্রাম: দশমীর দিন অপরাজীতা পুজা এই পরিবারের রীতি। স্বগত্রীয় বংশধরদের হাতে নীল অপরাজীতা ফুলের লতা বালার মতো করে পরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর ঘটের শান্তীর জল ছিটিয়ে দেওয়া হয় উত্তরসুরীদের মাথায়। বনেদি বাড়ি হিসেবে বিখ্যাত বক্সী বাড়ি। এই পরিবারের পুজার নিয়ম কানুনে রয়েছে নিজস্বতা। মা দূর্গার সাথে যেমন থাকেন লক্ষী, সরস্বতী তেমনই এখানে অধিষ্ঠান করছেন জয়া, বিজয়া। জয়া, বিজয়ার পুজা আলাদা ভাবে হয় এবং অঞ্জলীও হয় আলাদা। ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর এক ব্লকের জানাঘাটি গ্রামে বক্সী পরিবারের পুজা এবার ১৬০ বছরে পা রেখেছে।বক্সী পরিবার বহু যুগ আগে ছিল মহান্তি পরিবার। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে এক সময় গোপীবল্লভপুর ছিল ময়ূরভঞ্জ রাজাদের অধীনে। মহান্তী পরিবারের পূর্বসুরিদের সামজিক কাজে তাদের অবদান দেখে খুশি হয়ে রাজা বক্সিস দিয়েছিল। আর সেই সময় থেকে এই পরিবার বক্সি পরিবার নামে পরিচিত হয়।নকশাল আন্দোলনের একেবারে আঁতুড় ঘর বলে পরিচিত ছিল গোপীবল্লভপুর। সেই সময় লাল পার্টির আন্দোলনে উত্তাল ছিল গোপীবল্লভপুর। পরবর্তী সময়ে মাওবাদীদের সন্ত্রাশও প্রত্যক্ষ করেছেন গোপীবল্লভপুরের বাসিন্দারা। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতেও বক্সী বাড়ির দূর্গা পুজা কখনো বন্ধ হয়নি। বক্সী বাড়ির দূর্গা পুজার মহাত্ম চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে।কেবল মাত্র এই এলাকাই নয় পাশের রাজ্য, ঝাড়খন্ড ওড়িশ্যা থেকে মানুষ জন আসেন পুজা দেখতে প্রসাদ গ্রহন করতে। এক সময় এলাকার রাস্তা ঘাট ছিল নাই বলে চলে। কিন্তু মানুষ সুবর্নরেখা নদী সাঁতরে, কাঁধে সাইকেল চাপিয়ে পুজা দেখতে আসতেন জানাঘাটিতে বস্কী বাড়িতে। বক্সী বাড়ির পুজার প্রচলন নিয়ে রয়েছে একটি সুন্দর কাহিনী। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে বক্সী বাড়ির দূর্গা পুজার প্রচলন হয় শ্রীহরি বক্সীর হাত ধরে। এই শ্রীহরি বক্সী ছিলেন এলাকার জন দরদি মানুষ। মানব সেবায় তিনি নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন । তিনি ছিলেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক। আর্তের সেবায় তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন।এলাকায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। যে কোন বিপদে তিনি মানুষের পাশে দাঁড়াতেন।স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি বাড়িতে শুরু করেন দূর্গা পুজা। তাঁর পরিবারের লোকজন বলেন অঞ্জলীর সময় তিনি চোখ বন্ধ করে হাত পাতলে হাতে ফুল চলে আসত। আর সেই ফুল দিয়েই হত অঞ্জলী। এই পরিবারের দুর্গাপূজা হয় কালিকা পূরান মতে। নেই কোন বলি প্রথা। চাল কুমড়ো বা আঁখ বলি দেওয়ার রীতি রয়েছে। শ্রীহরি বক্সীর নাতি চিত্তরঞ্জন বক্সী ও বাকি তিন বংশধর প্রদীপ বক্সি, সুশান্ত বক্সী, প্রবীর বক্সী এনারাই বর্তমানে পুজা করে আসছেন। বহু আগে এই পরিবারের পুজাই ছিল এলাকার একমাত্র দূর্গা পুজা। বাড়ির স্থায়ী মন্ডপে দেবী প্রতিমা গড়ার কাজ প্রতি বছর নিয়ম করে হয়। জয়া,বিজয়ার পুজা এই বক্সী পরিবারের বিশেষত্ব। আগে এই পুজার কটা দিন বাংলা, উড়িয়া থেকে যাত্রা পালা বসত। সেই পালা দেখতে হাজারো মানুষ ভীড় করতেন।সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীর দিন স্থানীয়বাসিন্দারা পাত পেড়ে খিচুড়ি প্রসাদ খান। বাড়ি বাড়ি গিয়েও দেওয়া হয় সেই ভোগ। এই রেওয়াজ আজও রয়েছে এই পরিবারে। তবে দু বছর করোনার কারনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোগ দেওয়া হয় নি। আয়োজন কম করা হয়েছিল মহামারীর কারনে।বক্সী পরিবারের অন্যতম সদস্য তন্ময় বক্সি  বলেন “ আমাদের পরিবারের দূর্গা পুজা ঘিরে মানুষ জনের মধ্যে আবেগ রয়েছে।প্রতিবছর  পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে, রীতি মেনে পুজা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *