পূর্ব বর্ধমান, রামকৃষ্ণ চক্রবর্তীঃ-ক্রমবর্ধমান বর্ধমান শহরকে কেন্দ্র করে ব্যাঙের ছাতার মত বেসরকারী নার্সিংহোম গজিয়ে ওঠা এবং সেই নার্সিংহোমকে চালু রাখতে রমরমিয়ে ওঠা দালালরাজ নিয়ে রীতিমত বিস্ফোরক বক্তব্য রাখলেন খোদ ডেপুটি সিএমওএইচ থেকে বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস। বুধবার বর্ধমানের পুরসভার পান্থশালায় প্রগ্রেসিভ নার্সিংহোম এণ্ড হসপিটাল এ্যাসোসিয়শনের ৭ম জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল। আর এই সভাতেই উদ্বোধন পর্বে এসে নার্সিংহোমের দালাল রাজ নিয়ে সরব হলেন বক্তারা। এদিন ডেপুটি সিএমওএইচ ২ সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, আমাদের পূর্ব বর্ধমান জেলায় সরকারি হাসপাতালে বেড যত সংখ্যায় আছে আরও একটু বেশি হলে ভালো হয়। অন্যদিকে বেসরকারি ক্ষেত্রে বেড আরও অনেকটা কম হলে ভালো হয়। বেড ও জনসংখ্যার অনুপাত অনুযায়ী শয্যা সংখ্যা বেশি। এর উপর প্রতিবছর নতুন নতুন বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম তৈরী হচ্ছে। এর ফলে অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা চলছে। ফলে দালালরাজ চলছে। বর্ধমানে চিকিৎসা করাতে এসে দালালদের খপ্পরে পড়তে হয় না এমন ঘটনা খুব কমই হয়। এর কারণ অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা। এদিন তিনি বলেন, বেসরকারি ক্ষেত্রের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সরকারকে সময়মত রিপোর্ট দেওয়া দায়িত্ব। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আমরা তা পাচ্ছি না। এতে আমাদের সমস্যা বাড়ছে। অনেক রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। জনস্বাস্থ্যের পরিষেবা ঠিকমত চালাতে এই রিপোর্ট নিয়মিত পাঠাতে হবেই। সুবর্ণবাবু এদিন বলেন, সিএমওএইচ দপ্তরে আপনাদের কোনও কাজের জন্য আমাদের অফিসের কাউকে এক কাপ চাও খাওয়াতে হবে না। কিন্তু দালালরাজ বন্ধ করুন। এটা আপনারাই বন্ধ করতে পারেন। এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সমস্যা তৈরী হচ্ছে। কারণ আমরা শুনি দালালরাজ চলছে কিন্তু কোনও লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়না। ফলে আমাদের স্বদিচ্ছা থাকলেও কিছু করতে পারিনা। তিনি বলেন, বিভিন্ন এ্যাম্বুলেন্স চালকরা রোগীদের ভুল বুঝিয়ে তাঁদের অসুবিধার মুখে ফেলছেন। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিত্সা করানো হবে বলে বিভিন্ন নার্সিংহোমে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। আর চিকিত্সা হয়ে যাবার পর রোগীদের মোটা অংকের বিল ধরিয়ে দিচ্ছেন। আর তা নিয়ে নানারকম ঝামেলার সৃষ্টি হচ্ছে। তখন রাজনৈতিক নেতাদের ধরে ঝামেলা মেটাতে হচ্ছে।এদিন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্যাধিকারিক জয়রাম হেমব্রম জানিয়েছেন, দালালরাজ নিয়ে তাঁর কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। আসলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এদিন বলেন, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল যেহেতু রেফারেল হাসপাতাল তাই বাইরের জেলা থেকেও রোগীরা আসে। ফলে হাসপাতালের ওপর চাপ থাকেই। নার্সিংহোমগুলির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের যা সামর্থ্য ও পরিকাঠামো সেই অনুযায়ীই রোগী ভর্তি করবেন। বাড়তি নয়। একইসঙ্গে সরকারী হাসপাতালে রোগীদের পাঠাতে হলে সময় নিয়ে পাঠাবেন। মুখ্য স্বাস্থ্যাধিকারিক এদিন বলেন, অনুর্ধ ১৯ বছরের মহিলাদের মা হবার ঘটনা বর্ধমান জেলায় বেশি। যদিও এই হার আগে ছিল ২৯ শতাংশ। কিন্তু এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ শতাংশে। অর্থাত ১০০ প্রসূতি মায়েদের মধ্যে ১৯জনই অনুর্ধ ১৯। এই প্রবণতা ঠেকাতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বোঝাতে হবে। এদিন এই সংগঠনের রাজ্য চেয়ারম্যান সেখ আলহ্বাজউদ্দিন জানিয়েছেন, বর্তমান আর্থ সামাজিক অবস্থায় কমিশন ব্যবস্থা সর্বত্র ছেয়ে গেছে। আর তার ছোঁয়া এই পেশাতেও লাগছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। তবে সংগঠনগতভাবে তাঁরা এভাবে সচেষ্ট আছেন, নার্সিংহোম মালিকদের তাঁরা সর্বদা সতর্কও করছেন। তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে এই প্রবণতা অনেকটাই কমেছে। এদিন অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিডিএ-এর চেয়ারম্যান কাকলী গুপ্ত তা, জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথ রায়, সংগঠনের জেলা সভাপতি তারকনাথ ব্যানার্জী, সম্পাদক আসরাফ আলি প্রমুখরা।
রমরমিয়ে ওঠা দালালরাজ নিয়ে রীতিমত বিস্ফোরক বক্তব্য রাখলেন খোদ ডেপুটি সিএমওএইচ থেকে বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস।

Leave a Reply