জীববৈচিত্র্য আড্ডায় গাব,মাদার গাছ, রিঠা মাছের খোঁজ। শহরে অমিল বাবুই পাখিও।

দঃ দিনাজপুর, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ- ২২ শে মে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস। আর সেই দিবস উদযাপনে পরিবেশ-প্রেমী সংস্থার সংকল্পের অভিনব আড্ডার আয়োজন করেছিল।‌ যার নাম ছিল ‘জীববৈচিত্র্য আড্ডা’ ।‌ আর এই আড্ডা দেই বালুরঘাটের হারিয়ে যাওয়া গাছ,মাছ পাখিদের কথা আলোচনা করলেন
মৃণাল চক্রবর্তী,চঞ্চল শিকদার, ভক্তগোপাল ভট্টাচার্য , দুর্গাশঙ্কর সাহা, শংকর ঘোষ, ত্রিদীব ভট্টাচার্য ,অসিতাভ সরকাররা। বালুরঘাট ও সংলগ্ন এলাকায় একসময় প্রচুর গাব, মাদার,জিগা, আতা,বাবলা গাছ দেখা যেত। দেখা যেত বোন বাঁশ বা বেড়ি বাঁশ। চ্যাকেন্দা,শিসল,
ঝিটকিনি, অ্যালানের (প্যালান) মতো ছোট ছোট গাছ। যেগুলো থেকে শাক, গাছের ফুল থেকে মধু ইত্যাদি পাওয়া যেত। বালুরঘাটেই বিলের ধারে এক ধরনের ঘাস দেখা যেত যার নীচের দিকে মাটির নীচে থাকতো কেশর জাতীয় ফল। খেতে মিষ্টি। শহরের তাল গাছে দেখা মিলতো বাবুই পাখির। তাদের তৈরি করা শিল্প সুষমা মণ্ডিত বাসা। আত্রেয়ী নদীতে দেখা মিলতো বাগাড়(বাঘাড়)মাছের। শুশুক মানুষের সঙ্গে লুকোচুরি খেলত জলে ডুব দিয়ে আবার ভুস করে উঠে। উঠে এলো বালুরঘাটের ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন মাঠে একসময় দেখা যাওয়া প্রচুর শকুনের কথা। আলোচনা হলেও শকুনের হারিয়ে যাওয়ার পেছনে ডাইক্লোফেনাকের কথাও। যা মূলত গরুর খাদ্যে ব্যবহৃত হতো। চড়ুই, বেজি, কাঠবিড়ালি,শেয়ালের কমে যাওয়া অথবা বাড়বাড়ন্তের আলোচনায় মুখর হয়ে উঠলো আড্ডার পরিবেশ। বালুরঘাটের দীর্ঘদিনের নাগরিকরা বলে উঠলেন বালুরঘাটে ছিল জীববৈচিত্র্যের সম্ভার। এখন সেসব অতীত। কিন্তু কেন এই অভিনব আড্ডার আয়োজন দিশারী সংকল্পের? সংস্থার পক্ষ থেকেই উপস্থিত ছিলেন সম্পাদক তুহিনশুভ্র মণ্ডল, বিজন সরকার, সঙ্গীত কুমার দেব। তুহিন বাবু জানান, আমরা বালুরঘাট বায়োডাইভারসিটি রেজিস্টার তৈরি করছি। প্রথম পর্বে আমরা সেই কারণে এই জীববৈচিত্র্য আড্ডার আয়োজন করেছি। বালুরঘাটে যারা দীর্ঘদিনের বাসিন্দা তাদের কাছ থেকে আমরা জানতে পারলাম অনেক গাছ, মাছ ,পাখির কথা। উঠে এলো হারিয়ে যাওয়া কীটপতঙ্গের কথাও।যেগুলো এখন আর দেখতে পাওয়া যায় না প্রায়।
কেন হারিয়ে গেল এসব? আড্ডা থেকে উঠে আসলো সম্ভাব্য কারণগুলো। কেউ বললেন জনসংখ্যা বৃদ্ধির কথা, কেউ বললেন আগাছা নাশ, কেউ বললেন আমরা ভুলে যাচ্ছি প্রকৃতির কথা। কেউ বললেন কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের কথা। আর তার ফলেই জীববৈচিত্রের বসবাসযোগ্য পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশের ভারসাম্য। পরিবেশ তাই বিপদে পড়ছে।
কি করে এই হারিয়ে যাওয়া জীববৈচিত্র্য দের ফিরিয়ে আনা যায়?
আড্ডায় উঠে আসে কোথাও প্রচুর পরিমাণে দেশি ফুল ও ফলের গাছ লাগানো, নদী ও জলাভূমি ভালো রাখা, প্রকৃতির অন্য সন্তানদের জন্য বসবাস যোগ্য পরিবেশ রাখার কথা। সমাধানের পথে হাঁটতে এগুলোই বড় প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবসে নতুন করে অঙ্গীকার। মানুষ নয় প্রকৃতির অন্য সন্তানদের বাঁচার অধিকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। এসব কথাই উঠে আসবে বালুরঘাট বায়োডাইভার্সিটি রেজিস্টারে। জানালেন তুহিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *