মানুষ : শতাব্দী মজুমদার।

যে ছেলেটির সঙ্গে
রোজ দেখা হয়
আমার কিংবা আপনাদের ,
আজ তার গল্প বলি।
ধরা যাক ,ছেলেটির নাম সুমন।
ছোট থেকেই সুমন জেনেছে,
সে ছেলে, তাই তার দায়িত্ব অনেক।
দায়িত্ব মানে সংসারের ,
আর্থিক দায়িত্ব ।
আর তাই তাকে স্কুলের পরীক্ষায়
ভালো রেজাল্ট করতেই হবে,
তবেই না সে ভালো চাকরি পাবে!
বিরাট বাড়ি বানাতে পারবে!
নিজের গাড়িতে বেড়াতে যেতে পারবে!

আরও একটু বড় হলে
সুমন বুঝেছে, ছোট দুই বোনের
বিয়ের দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে,
বাবার কেমো থেরাপি ,মায়ের ডায়ালিসিস
এসবের মাঝেই, দীর্ঘদিনের প্রেমিকার বিয়ে।
সেদিন অন্ধকার ছাদে উঠে
কাঁদতে গিয়ে ,
সুমনের মনে পড়ে যায়
সেই ছোটবেলা থেকে
শোনা কথা গুলো
এমা, ছেলেরা কাঁদে নাকি!
ছেলেদের কাঁদতে নেই।
সত্যি ই ছেলেদের কাঁদতে নেই,
হাজার মন খারাপ হলেও নয়।

বোনেদের ভালো ঘর-বরে বিয়ে,
সু চিকিৎসার পরও
বাবা মায়ের মৃত্যুর
দু এক বছর পর,
একটু বেশি বয়সেই
সুমনের বিয়ে,
সুমন এখন
আট বছরের পুত্রের পিতা,
সুমন বেশ ভালো চাকরি ই করে।
অফিসে তার দায়িত্ব অনেক,
কোনো দিকে তাকাবার সময় নেই।
শুধু বউয়ের ইচ্ছেয় তাল মিলিয়ে
বছরে দু একবার
ভাইজাগ বা নৈনিতাল,
উটি কিংবা আন্দামান।
আর ছেলের আবদারে
চায়না টাউন , বারবিকিউ,
আরসালান এবং ডোমিনোজ।

সুমন মানুষ হতে চেয়েছিল।
যে মানুষ
শুধু টাকা রোজগারের যন্ত্র নয়,
যে মানুষ
পরিবারের অবলম্বন,
অন্তত তার
নিজস্ব একটা আকাশ থাকুক,
অন্যকে খুশি করার পর
তারও একদম নিজের,
খুশির একটা জগৎ থাকুক।
তার গলা ফাটানো কান্নার আওয়াজ
শোনবার মতো,
অন্তত একজন কেউ থাকুক।

আমার বা আপনাদের
পরিচিত ছেলেটি
শুধুমাত্র বাড়ির এবং অফিসের
দায়িত্ববান পুত্র বা কর্মী নয়,
ভালো রোজগেরে বর নয়,
বা বড়লোক পিতাও নয়,
সুমনের পরিচয় সে মানুষ,
একজন অনুভূতি সম্পন্ন”মানুষ”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *