চরম জীবন সংকটের মধ্যে গৃহশিক্ষকরা।

0
828

সন্দীপ দেঃ-চরম দুরবস্থার মধ্যে দিনযাপন করছেন বর্তমানে গৃহশিক্ষকেরা। এই সমস্ত গৃহশিক্ষকেরা উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও সরকারি তকমা অর্জন করতে না পারায় জীবন এবং জীবিকার স্বার্থে তাদেরকে বেছে নিতে হয়েছে গৃহশিক্ষকতার কাজ। কিন্তু বর্তমানে লকডাউন পরিস্থিতির সন্মুখীন হয়ে এই গৃহ শিক্ষকরা পরেছে অকূল সমুদ্রে। লকডাউনের কারণে সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ। স্কুল-কলেজ না হয় বন্ধই রইল। কিন্তু স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েরা যে সমস্ত গৃহশিক্ষকের কাছে পাঠ নিতে যেতো সেই সমস্ত গৃহশিক্ষকেরা এখন শিক্ষকতা করতে পারছেন না। তারা দিন কাটাচ্ছেন বাড়ির মধ্যে অসহায়,অস্থির ভাবে। তারা কি খাবে? কিভাবে বাড়ির সকলের অন্নসংস্থান করবে? তা ভেবে দিশেহারা। কারণ এই গৃহ শিক্ষকেরা ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদান করে যৎসামান্য কিছু অর্থ উপার্জন করতো। সেই উপার্জনের মাধ্যমেই তাদের বাড়ির বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বাবা-মা ,স্ত্রী ,ছেলে মেয়েদের মুখে অন্ন তুলে দিত তারা। কিন্তু বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে দেড় -দুই মাস সময় কাল তাদের সেই শিক্ষার জায়গা থেকে সরে এসে বাড়ির মধ্যে দিন জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। ফলে পরের পকেট এর ভাড়ার শূন্য হয়ে গেছে। তাই নচিকেতার সুরে তারাও বলতে শুরু করেছে- “ডিগ্রির ভাঁড়ারেতে তবু কিছু মাল আছে, পকেটের ভাড়ারটা শূন্য”। সত্যিই এরকম পরিস্থিতিতে তারা কি করবে? কিভাবে তাদের জীবন অতিবাহিত হবে? তা ভেবেই তারা দিশেহারা। করোনা ভাইরাস মোকাবিলার জন্য রাজ্যে লকডাউন চললেও দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের কথা ভেবে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ছুটে গিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন যে ছেলেটা গৃহশিক্ষকতা করে তার জীবন নির্বাহ করতো তার সংসার চলছে কিভাবে? এটা নিয়ে কেউ চিন্তিত নয়, নয় কেউ ভাবিত। ফলে এদের অবস্থা দিন-আনা দিন-খাওয়া মানুষদের থেকেও আরো শোচনীয় হয়ে পড়ছে। লকডাউন এর ফলে সমস্ত কিছু বন্ধ, ফলে তাদের পাঠও বন্ধ রাখতে হয়েছে। কিন্তু তারাও জানে না কবে থেকে তারা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে? কিভাবেই বা তারা সংসার সংগ্রামের যুদ্ধে জয়ী হবে? তাই তাদের নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার কথা, মনে হয় সরকারেরও ভাবা উচিত। কারণ অনেকেই হয়তো বলবেন কেনো অনলাইনে তো পাঠ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে? এখান থেকে তো গৃহশিক্ষকরা তাদের উপার্জন করতে পারে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন আমাদের রাজ্যে দারিদ্র্যসীমার নিচে বহু মানুষ বসবাস করে। কতজনের হাতে স্মার্ট ফোন আছে তা ভাবার বিষয়। শুধু তাই নয় মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত যদি ছেলে মেয়েদের কথা চিন্তা করা হয় তাহলে তারা কিভাবে স্মার্ট ফোন পাবে? তাদের হাতে স্মার্টফোন আসবেই বা কিভাবে? আর ফলে অনলাইনে শিক্ষা নেবেই বা কে? তাই অনলাইনে শিক্ষার প্রথা আমাদের রাজ্যে শুরু হতে গেলে এখনো যথেষ্ট সময় লাগবে।এই গৃহশিক্ষকরা বর্তমান সময়ের সমাজ গড়ার কারিগর। কারণ বিভিন্ন স্কুল বুক ফুলিয়ে বলে- আমার স্কুল থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। কিন্তু এটাও ঠিক মাধ্যমিকে প্রথম, দ্বিতীয়,তৃতীয় স্থানাধিকারী ছেলে বা মেয়েটি কিন্তু কোনো না কোনো গৃহশিক্ষকের ছত্রছায়াই ছিল। তাই এই গৃহশিক্ষকদের কথা একেবারে ভুলে গেলে আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে মনে হয় এরা অবহেলিতই রয়ে যাবে। গৃহশিক্ষকের প্রায় দুমাস বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে তারা তাদের গৃহ শিক্ষকতা পেশা থেকে বিরত থাকছে। সেই সমস্ত গৃহশিক্ষকের কথা ভাবা হোক এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু সুরাহা করবার কথা চিন্তা করা হোক। নইলে গৃহ শিক্ষকতা পেশার সাথে জড়িত শিক্ষিত যুবকেরা অন্ধকার জগতে তলিয়ে যাবে।আত্মসম্মানের কারনে তারা না পারছে চতুর্থ শ্রেণীর কাজ করতে, না পারছে বাড়ির পরিচালক/পরিচালিকার কাজ করতে। তাদের পেটে যদি ক্ষিধের টান ধরে, তাহলে তারা উঠে দাঁড়াবে কিভাবে? সরকার বিভিন্ন খাতে বিভিন্নভাবে টাকা ব্যয় করেন।তাই সরকারেরও মানবিকতার দৃষ্টিভঙ্গিতে এই পেশার সাথে জড়িত ছেলে মেয়েদের দেখা উচিত বলে আমার মনে হয়।