নোভেল করোণা যুদ্ধে- যুদ্ধজয়ের রাজটিকা পড়বে ভারতঃ কোভিড-১৯ ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার এর নিরলস প্রচেষ্টায় স্বার্থকতার কাছাকাছি ভারতের হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়! : শঙ্কর তালুকদার।

0
1545

আজ নোভেল করোনা বিদ্ধস্ত পৃথিবীতে লকডাউন হওয়া ভারতের ২৫ তম দিন; এই মূহুর্তে সাড়া পৃথিবীতে কোভিড১৯ আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৪ লক্ষ আর মৃত্যু মিছিলে ইতিমধ্যেই হারিয়ে গেছে ১৩৪,৬০৩ জন মানুষ; যার মধ্যে ভারতে আক্রান্ত ১২৩৭১ জন ও মৃত ৪২২ জন! আর সেই সংখ্যা ভয়ানক ভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে ঘন্টায় ঘন্টায় ;
এই ভয়ানক ধ্বংশাত্মক সময়ে যখন পৃথিবীর কোন দেশের কাছে এই মৃত্যুঝঞ্ঝা থামানোর কোন অস্ত্র নেই, নেই কোন ওষুধ বা প্রতিষেধক ভ্যাক্সিন যা দিয়ে ঐ ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র ভাইরাস কনার এই মানব সভ্যতা ধ্বংশের তান্ডবকে প্রতিহত করতে পারে; তখন ই ত্রস্ত মানবতাকে স্বপ্ন দেখাতে, ঐ ইলেক্ট্রণ মাইকোস্কোপিক ধ্বংশাত্মক দানবের কর্মকান্ড থামিয়ে দেবার বার্তা নিয়ে নোভেল করোণার টীকা আবিস্কারের খবর দিয়েছেন আণবিক গননা জীববিজ্ঞানী ডঃ সীমা মিশ্র!

বিশ্বস্ত খবরের মাধ্যমে প্রথম জানতে পারি যে করোণা ভাইরাসের বিরূদ্ধে দেশ তথা পৃথিবী ব্যাপি মৃত্যু মিছিল সহ অতিমারী সামলানোর পথের আলো দেখা দিয়েছে – যে করোনা ভাইরাস এখন আমাদের দেশেও সর্বত্র ই প্রায় ছড়িয়ে পড়েছে।
এর টিকা এখনো পর্যন্ত পৃথিবীতে কেউ ই আবিষ্কার করতে পারেনি। সারা পৃথিবীতে বিজ্ঞানীরা গবেষণায় তোলপার করে ফেলছে কোভিড- ১৯এর প্রতিষেধক আবিষ্কারের প্রচেষ্টায়; ভারতীয় বিজ্ঞানীরাও আছেন এই সাধনায়; এর ই মধ্যে একধাপ এগিয়ে শতাব্দীর সবচেয়ে বড় টিকা আবিস্কারটিকে সত্যি করে ফেলেছে ভারতীয় বিজ্ঞান? এমনই খবর ভেসে আসছে দক্ষিন ভারতে থেকে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আশার বানীর মত বলা হয়েছে, হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের স্কুল অফ লাইফ সাইন্স এর ফ্যাকাল্টি সদস্য ডাক্তার সীমা মিশ্র (Sima Mishra)বাস্তব পরীক্ষণের জন্য সেল এপিটোপ্স নামের সম্ভাবিত একটি টিকা তৈরি করেছেন- যেটি নাকি নোভেল করোনার এই তান্ডব থামিয়ে দিতে পারবে! আর এর ই ফলে এই বিশ্বব্যাপি মহাযুদ্ধের মত এই ভয়ঙ্কর তান্ডব ও মৃত্যু মিছিলের অবসান হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে !

ভ্যাকসিনটি একটি ছোট কোরনভাইরাল পেপ্টাইডস, যেটির অণু আক্রান্ত কোষগুলির সাথে যুক্ত করা যেতে পারে। এর ফলে সেই কোষগুলি ভাইরাল পেপ্টাইডসকে নিস্ক্রিয় করে কোষগুলোকে নষ্ট করার উপযুক্ত রোগ-প্রতিরোধক ক্ষমতা তৈরি করে ফেলতে পারে।
সত্যিই যদি ব্যবহারের জন্য এমন ধরনের টিকা আবিষ্কার হয়ে যায়, যা মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারে তবে তা হবে এক অদ্ভুত দৃষ্টান্ত। আর পৃথিবীর কাছে রয়ে যাবে এক অবিস্মরণীয় স্মৃতির দলিল।
এই আবিস্কার হওয়া উপাদানটি ইতিমধ্যেই কোভিড -১৯ এর বিস্তার রোধ করতে পারে এমন একটি নতুন ভ্যাকসিন তৈরির প্রাথমিক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে ফেলেছে।
এর ই সঙ্গে,এটি বিভিন্ন coronavirus সার্স এবং মার্স ভাইরাসগুলির মতো মরসুমের পরে মরসুমে উত্থান হওয়া সেই ভাইরাস আক্রমনের সম্ভাবনাগুলির বিরূদ্ধেও একটি কার্যকরি ভ্যাকসিন হতে পারবে যা কিনা এখন COVID-19 সৃষ্টিকারী করোণা ভাইরাসটির দুর্বৃত্ততাও রুখে দিতে পারে বলে দাবী করা হচ্ছে।
ডঃ মিশ্রর তৈরী ভ্যাকসিন উপাদানটি চিহ্নিত করা হয়েছে ‘টি সেল এপিটোপস’ হিসাবে। এই এপিটোপ ই পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য কোভিড -১৯ এর সমস্ত কাঠামোগত এবং অ-কাঠামোগত প্রোটিন বুঝতে সহায়তা করবে। যেটি মানবদেহে ঐ ভাইরাস প্রতিরোধ করার জন্য অনাক্রম্যতা গড়তে সাহায্য করবে।
এপিটোপগুলি নিয়ে যত্ন সহকারে আরও কিছু পরীক্ষামূলক কাজ করার প্রয়োজনের কারণে টিকা হিসেবে মানুষের ব্যবহারের জন্য এগিয়ে দিতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলেই ডঃ মিশ্রর ধারণা।

সাধারণত, ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য, ধারাবাহিক পরীক্ষা নিরীক্ষায় অতি দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়; তবে শক্তিশালী কম্পিউটার কারিগরী ও গণনা সরঞ্জামগুলির সাহাজ্যে কাজটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দরুণ মাত্র 10 দিনের মধ্যে এই ভ্যাকসিন উপাদানটি দ্রুত তালিকাভুক্ত করা গেছে বলে ডঃ মিশ্র জানিয়েছেন। সম্ভাব্য উপাদানগুলির মধ্য থেকে ভ্যাকসিনগুলির একটি ব্যবহারযোগ্য তালিকা তৈরি করা হয়েছে, যে উপাদানগুলি ভাইরাসটিকে নিস্কৃয় করতে মানব কোষগুলি কীভাবে কার্যকরভাবে ব্যবহার করবে তার উপর ভিত্তি করেই সৃষ্টি করা হয়েছে।

উল্লেখিত টি সেল এপিটোপ’টির সাথে “মানব দেহের প্রোটিন পুলে” কোনও রকম মিল নেই বা এই করোনাইভাইরাল এপিটোপসগুলি মানুষের কোষগুলিতে কোনও বিপরীত-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না; আর সেই কারণেই সঠিকভাবে এই প্রতিরোধ ক্ষমতাটি ভাইরাল প্রোটিনের বিরুদ্ধেই নির্দিষ্ট ভাবে কার্যকরী হবে বলে মনে করা হচ্ছে, যেহেতু এটি কোনভাবেই কোন মানব প্রোটিনের বিরুদ্ধে নয়। তবে, এই ফলাফলগুলি সরবরাহ করার জন্য আরো কিছু পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত করার প্রয়োজন রয়েছে, যেগুলোই হবে এই ভ্যাক্সিনটির চূড়ান্ত প্রমাণ।
এই ফলাফলগুলি ইতিমধ্যেই জরুরি পরীক্ষামূলক মূল্যায়নের জন্য “চেমরক্সিভ প্রিপ্রিন্ট প্লাটফর্ম” (একটি বিশ্বজনীন তথ্য মাধ্যম, যেখান থেকে বিনা স্বর্তে বৃহত্বর মানব স্বার্থে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে বসে বিজ্ঞানীরা এখানকার সমস্ত তথ্য মানব কল্যানের লক্ষ্যে তাদের গবেষণা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ ব্যবহার করতে পারবে) ব্যবহার করে সাড়া বিশ্বের বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সেকথাই এক ই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো ও হয়েছে।

হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতে, ভারত থেকে nCOV ভ্যাকসিন ডিজাইনের ক্ষেত্রে এগুলি পৃথিবীতে প্রথম এমন এই ভাইরাসটির স্ট্রাকচারাল এবং নন-স্ট্রাকচারাল প্রোটিনগুলি জুড়ে পুরো করোনাভাইরাল প্রোটোম অন্বেষণ করেছে যেটি প্রকৃতপক্ষে Covid-19 ভাইরাসটিকেই তৈরি করে এবং সেটিকে প্রতিরোধ করার রূপরেখাটিও পরিস্কার করেছে!
এখন শুধু খানিকটা সময়ের অপেক্ষা মাত্র, তারপরই নোভেল করোনা ভাইরাসকে নিস্কৃয় করে ফেলার অস্ত্র মানুষের হাতে এসে যাবে।
ততদিন কেবল, সাড়া পৃথিবীর মানুষ সচেতনতার সাথে সংক্রমণ রোধের জন্য এইমূহুর্তের সেরা প্রতিরক্ষা, সামাজিক দূরত্ব মেনে আরো কিছুটা সময় জোগার করে ফেলুক!
যেহেতু এই বিজ্ঞানী-পরীক্ষার্থীদের এপিটোপগুলিতে আরও কাজ করার প্রয়োজনের কারণে এই টিকা মানুষের দেহে প্রয়োগ করতে আরো কিছুটা সময় লাগবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
আমরা তাই আশাবাদী বিজ্ঞানীদের গণনা সংক্রান্ত ফলাফলগুলি কার্যকর nCOV ভ্যাকসিনের জন্য দ্রুত পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণ সমাপ্ত হতে সামগ্রিক সমর্থণ এগিয়ে আসবে এবং সীঘ্র ই মানবজাতীর জয়ের পতাকা আন্দোলিত হবে !

তথ্যসূত্রঃ
“”””””””””””””
T cell epitope-based vaccine design for pandemic novel coronavirus
2019-nCoV across structural and non-structural proteins
Seema Mishra

।।শঙ্কর তালুকদার, বরিষ্ট প্রানী ও পরিবেশ বিজ্ঞানী( অবসরপ্রাপ্ত), কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন, বন্যপ্রাণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক, ভারত সরকার।।

।।সংখেপে লেখক পরিচিতি।।

অ্যারাকনো- হ্যাবিট্যাট বায়োলজিস্ট এবং ট্যাক্সোনমিষ্ট ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের দপ্তরে দ্বায়ীত্ব পালনকরে অবসর নিয়েছি।

আমি, ভারতীয় প্রানী বিদ্যা সর্বেক্ষণ, ভারত সরকারের পরিবেশ মন্ত্রকের দপ্তরে, প্রানী সংরক্ষণ ও গবেষণা সংস্থার একজন অবসরপ্রাপ্ত বরিষ্ট প্রাণী বিজ্ঞানী ও পরিবেশ ও প্রাণীসম্পদ বিষয়ক গবেষণায় বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রকল্পে দেশের ও বিদেশের গবেষণাগারে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছি এবং আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পরিষদের( “আ।বা।ভা।সা।প।” )অন্তর্গত ভাষামঞ্চের সাহিত্য বিভাগীয় প্রধানের দ্বায়ীত্ব পালন করছি।

অবসরের পর ও শিক্ষা এবং গবেষণা লব্ধ জ্ঞান ও জীবনের অভিজ্ঞতা সাধারণ মানুষের কাছে পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে পৌঁছে দেবার জন্যই বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও মাতৃভাষায় সাহিত্যচর্চায় ব্রতী!

এছাড়া সচেতনতার লক্ষ্যে কলকাতা থেকে মুদ্রিত বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বন্যপ্রানী সম্মন্ধীয় সুনামি সম্পূর্ণ রঙীন ষান্মাসিক “বন” পত্রিকার উপদেষ্টা ও নিয়মিত লেখক এবং দুই বাংলার সাহিত্য নিকেতনের “হৃদয়ে বাংলা” সাময়ীকির লেখক সহ সভাপতি হিসেবেও সকৃয় ভাবে জড়িত।

এর সঙ্গে, অবসর জীবনেও দেশ জুড়ে পরিবেশ ও বিজ্ঞান সচেতনতার আন্দোলনের সাথে গভীর ভাবে জড়িত থেকে সবুজায়নের কর্মযজ্ঞে একাত্ম ভাবে লিপ্ত।