মাতৃ আহবানে তারুণ্যের ঢাকের সুরে ফুটে উঠলো সময়ের অদৃশ্য দানবের “অকাল বোধন”।

0
2688

পর্যালোচনায়, সৌগত রাণা কবিয়ালঃ- আমাদের দেখা হোক হাতের তালুতে, আমাদের দেখা হোক ভোরের আলোতে, আমাদের দেখা হোক বিজ্ঞান জিতলে, আমাদের দেখা হোক মৃত্যু হেরে গেলে,
আমাদের দেখা হোক আগের মতো করে, আমাদের দেখা হোক সুস্থ শহরে……..

এই সময়ের লেখক দ্বন্দে আলোচিত-সমালোচিত সময়োচিত এই লেখাটির স্রষ্টার জন্য বাংলার তাবৎ সাহিত্যিক বোদ্ধাদের কানামাছি খেলাটা হয়তো আরও কিছুদিন চলবে.. তবে কিছু অনবদ্য সৃষ্টি নিয়ে অযাচিত এই বিতর্ককে পাশ কাটিয়েও যে দারুণ ভাবে বেঁচে থাকার পৃথিবীতে আবার ছন্দে ফেরা যায়, সেটা এক অসাধারণ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুললেন মাত্র গোটা কুড়ি শিক্ষানবিশ…!

“অকাল বোধন”….
সনাতনী বাঙালির জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য উৎসবকে ঘিরে এই স্বেচ্ছা গৃহবন্দীর পৃথিবীতে আবার আলোয় ফেরার এক সহজ-সরল অসাধারণ ছায়াছবি…!

দি জর্জ টেলিগ্রাফ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের শততম জন্মদিনে
গত ১৬ই মে ২০২০ তারিখে তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে মুক্তি পেল ইনস্টিটিউটের প্রধান কেন্দ্র শিয়ালদার জর্জিয়ান্সদের উদ্যোগে তৈরি করা স্বল্প দৈর্ঘের ছবি ‘অকাল বোধন’-( ray of hope)…

মাত্র সাতাশ মিনিটের এই ছবিতে প্রায় কুড়ি জন তরুণ শিক্ষার্থী তাদের তারুণ্যের উদ্যোম আলোয়, স্বেচ্ছা এই গৃহবন্দীর সময়েও নিজেরাই মোবাইল ক্যামেরার মাধ্যমে “অকাল বোধন” অসাধারণ নির্মাণ ও সম্পাদনা করলেন..!
‘অকাল বোধন’ এর এই অসাধারণ চিত্রায়নের নেপথ্যে যারা কাজ করেছে, তারা হলেন-
সাধনা, অন্তরা, দেবঙ্গনা, পুষ্পিতা,
মাম্পি, আন্দালিব, বিশাল, আদিত্য, অরিজিৎ, অয়ন্তিকা, রিম্পা, পূজা, সুনেত্রা, সায়নী, গার্গী, আরাধ্যা, অভিষেক, স্নিগ্ধ,
দেবদীপ ও জয়রাজ প্রমুখ…!

মানুষের শুভ স্বপ্ন সবসময় তার বাঁচার সবচাইতে বড় অনুপ্রেরণা, আর সেই প্রেরণাতেই “অকাল বোধন”-এ ফুটে উঠলো যে, ‘লকডাইন’ নামক সময়কে থমকে দেয়ার এই টাইম ট্রাভেলিং দুঃস্বপ্নের দিনেও একমাত্র মানুষই কিন্তু পারে নিশ্চিত সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করতে..!

ছবির কুশীলবদের কথায়,
” দীর্ঘদিন এই লকডাউনের মধ্যেও আমাদের শিক্ষকেরা আমাদের অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষাদান করে আসছেন, এই কঠিন সময়েও প্রত্যেক মুহূর্তে ইনস্টিটিউট আমাদের পাশে থেকেছে..তাই জর্জ টেলিগ্রাফের শত বছর উৎযাপন উপলক্ষে এবং ওনাদের প্রণাম জানাতেই আমাদের এই প্রয়াস “…!

অনলাইনে মুক্তি পাওয়া “অকাল বোধন” এর মাধ্যমে প্রজন্মের নতজানু কৃতজ্ঞতা উঠে এসেছে, সভ্যতাকে অকাল বৈধব্য দেয়া মহামারীর এই আতংকিত সময়েও সমাজের অবকাঠামোগত কাজে নিয়োজিত সেইসব মানুষদের প্রতি, যারা প্রতিক্ষণ নিজেদের জীবন বিপন্ন করে এই মানব সভ্যতাকে ছন্দে ফিরিয়ে আনতে দিন রাত নিরলস কঠোর যুদ্ধ করে যাচ্ছেন …!

বর্তমান পৃথিবীতে মানুষের জন্য এক ভয়ংকর সভ্যতার অভিশাপ হয়ে পৃথিবীতে হানা দিয়েছে করোনা নামক অদৃশ্য এক দানব অস্তিত্ব…যার দাপটে পৃথিবীতে তালা পড়েছে জাত-ধর্ম নির্বিশেষে ইশ্বরের সকল গৃহে..! হয়তো মানবিক বোধের জাগরণে আরেকটি অকাল বোধনের আহবানে মানুষের জন্য সময় এসেছে, বিধাতার অপলক শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি রুপকে অবজ্ঞা করার প্রায়শ্চিত্ত কালকে কাটিয়ে ওঠার…!
আর সেই স্বপ্নে এক দল তরুণ তুর্কি তাদের “অকাল বোধন”.. নামক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচিত্রের মাধ্যমে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন.. ‘ ছন্দে ফেরা মানুষের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য… সৃষ্টির শুরু থেকে বিবর্তনের এই যুদ্ধে কেবলমাত্র মানুষের সময়-আপেক্ষিক সুস্থ বোধই বারবার জয়ীর বরমাল্য পড়িয়েছে তার গলায়’…!

ছন্দে ফিরুক পৃথিবী.. সত্য ও সুন্দরের জয় হোক…!

সৌগত রাণা কবিয়াল
( কবি সাহিত্যিক ও কলামিস্ট )