আমরিকা আমেরিকা (Menlo Park, New Jersey) : রাজাদিত্য ব্যানার্জী।

0
77092

বয়স বাড়ছে বিমানবন্দরগুলোর । কত ভোরবেলা, দুপুরবেলা ফেলে এসেছি।
প্লেনে ওঠার আগে চেক্ড ইন ব্যাগেজে সুটকেস জমা দিয়েছি হাজারবার। জমা দেওয়া হয়নি একটা অদৃশ্য ব্যাগেজ যার নাম কালচার –নিজের সংস্কৃতি। মায়ের হাতের রান্না খাবার জন্যে যেমন মন কেমন করে প্রবাসে তেমনি নিজের ভাষা না বলতে পারার যন্ত্রণাটা লিখে বোঝানো যায়না। বিশেষ করে ইউরোপে।

একটা নস্টালজিয়া মাখা থাকে এই বেঁচে থাকা না থাকার মধ্যে। আগে যখন whatsapp, ফেসবুক ছিলনা তখন মাকে ISD করলে কোকিলের ডাক শুনতে পেতাম। সারাদিন মন খারাপ হয়ে যেত। প্রশ্ন করতাম এই মাইগ্রেশনকে।

ইদানিং সবাই কবি, চলচ্চিত্র নির্মাতা , বুদ্ধিজীবী , থিয়েটার কর্মী। শিল্প নির্মান করতে গেলে যে গভীর মননের প্রয়োজন আছে সে কথা আমরা ভুলে গেছি। আমরা সবাই দৌড়াচ্ছি কিছু না কিছু পাব বলে। পাঞ্জাবির রং বদলে নিচ্ছি –কখনো সবুজ,কখনো গেরুয়া, যে যা দেবে ফাউ ফুচকা খাবার মতন গিলে নিচ্ছি। কখনো মোটা পেনশন, প্রচুর অশ্লীল প্রচার, কখনো রবীন্দ্র রেফিউজি হচ্ছি ,কখনো অন্যদের কান টেনে বুঝিয়ে দিছি কান (Cannes) আসলে আমাদের পাশের বাড়ির গলিটার নাম—রইলো বাকি ইজিম। হুম …সেটা আবার কি বস্তু বাবা ? ইজিম না থাকাটাই সব চেয়ে বড় ইজিম। এই সব জন্তুরা (জন্তুদের অপমান করার জন্যে আমার ফাঁসি হোক ) ভারতবর্ষে শুধু নয়, বিদেশেও থাকেন।

আমার ইউরোপিয়ান বন্ধুরা যুক্তরাষ্ট্রকে সমালোচনা করে তৃপ্তি পান (সবার কথা বলছিনা )। আমেরিকানরা কতটা বর্ণবিদ্বেষী সে নিয়ে কথা শুরু হলে সময়ের খেয়াল থাকেনা। প্রায় দু দশক ইউরোপে থেকে একটা কথা না বলে পারছিনা : এমন অনেক দেশ আছে এই মহাদেশে যেখানে নিজেকে বিদেশী লাগে, এলিয়েন লাগে। মেইনস্ট্রিম সমাজ যেখানে বিদেশীদের পের্সনা নন গ্রাটা করে রেখেছে।
কেন ? আমার বন্ধুরা সাইলেন্স নামের এক ইগলুতে লুকিয়ে থাকেন তখন ।

তাহলে আমেরিকা কি স্বর্গ ? না। মর্তে স্বর্গ নেই, স্বপ্নে আছে হয়ত।
বৈষম্য আছে, হিংসে আছে , অমানবিক দ্রাকোনিয়ান আইন কানুন আছে, দারিদ্র আছে, বঞ্চনা আছে ….তবুও এই সেই দেশ- এই সেই মেল্টিং পট- যেখানে পরিশ্রম করে প্রতিভার দাম পাওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক ভাবে বেশি অন্য দেশের চেয়ে। সারা পৃথিবীর মানুষ দেখা যায় যে দেশে সে দেশে নিজেকে বিদেশী বলে মনে হয়না। এই অস্থির কবিতাহীন সময়ে এপিটাফের পর এপিটাফ পেরিয়ে নিজেকে খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে সেই দেশটার নাম আমেরিকা।

লেখা /কপিরাইট : রাজাদিত্য ব্যানার্জী
হেলসিংকি, ফিনল্যান্ড

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here