একাকীত্ব যখন ভয় : শতাব্দী মজুমদার।

বেশ বুঝতে পারছিলাম ছেলেটা একদম ওদেশেরই হয়ে গেছে।গত চার বছরে একবারের জন্যও দেশে ফেরার নাম করলো না।ওর বাবা থাকতে তাও বছরে একবার দেখতে পেতাম ওকে,ছেলে দেশে ফিরলে উনি বাজার করতেন মন ভরিয়ে আর আমি সারাদিন রান্নাঘরে,ভালোকরে ছেলেটার সঙ্গে কথাও বলতে পারতাম না।তবুও ও যে কাছে আছে এই অনুভূতিতে আমার এনার্জি লেভেল যেন আরও বেড়ে যেত।কত কি যে ওই কদিনে রান্না করে নিজের হাতে ওর সামনে সাজিয়ে দিতাম!

মন খারাপ হয় খুব কিন্তু উপায় ই বা কি!

আমিই তো চাইতাম ও সেরা ছাত্র হোক,ভালো চাকরি করুক ,বিদেশে যাক… উন্নতির শিখরে থাকুক সবসময়।

গর্বিত মা আমি,এই ছেলের জন্যই তো
আত্মীয় স্বজন ,চেনা পরিচিতদের কাছে আমার কদর বেড়ে গিয়েছিল অনেক।তাহলে আজ মন খারাপ কেন!

না,মন খারাপ নয়, ভয়। হ্যাঁ, হ্যাঁ, ভয়ই তো।

ভয় পাচ্ছি আমি ,ভীষণ ভয়।ওই যে টিভি খুললে বা খবরের কাগজে মাঝে মাঝে দেখি না ফ্ল্যাটে বৃদ্ধা খুন বা ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার বৃদ্ধের পচা গলা দেহ।

আচ্ছা আমার পরিণতি নিশ্চয়ই ওরকমই হবে!

কেউ কি মেরে রেখে যাবে আমাকে এই ফ্ল্যাটের ভেতর !কিন্তু আমার তো কোনো শত্রু নেই।খবরে দেখা ওই সব বৃদ্ধ মানুষদেরও কোনো শত্রু ছিল না ,তাহলে কি সম্পত্তির লোভ আর একাকিত্বের সুযোগ!হ্যাঁ, টাকা পয়সা আমারও কিছু আছে আর তার থেকেও ভয়ংকর, একাকীত্ব আছে আমার।

কেউ না মারলেও অসুখ হয়েও তো মরতে পারি আমি ।যত বয়স বাড়বে ততই না না রকম অসুখ আমাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাবে।একা একা কি করবো আমি তখন!

এই যে বেশ কয়েকদিন আমি ঠিক মতো খাবার খেতে পারছি না ,রাতে ঘুমোতে পারছি না।টিভি দেখছি না ,খবরের কাগজ পড়ছি না কাজের লোক কে আসতে বারণ করে দিয়েছি,ফোন এলে ফোনটাও তুলছি না ।শুধু ভয় আর ভয়।

ভয়ংকর একাকিত্বের ভয়।

অসুস্থ হলে দেখবে কে আমায়!হাসপাতালে নেবে কে!

কি হবে আমার!

এই ভয়েই বোধহয় একগ্লাস জলের সঙ্গে একগাদা সিডেটিভ গুলে নেওয়ার আগে কাজের মেয়েটিকে ফোন করে পরদিন সকালে আসতে বললাম।

সমাপ্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *