মন মাঝারে : শতাব্দী মজুমদার।

দুপুরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়ার পর নিজের ঘরে এসে সবেমাত্র মেডিকেল জার্নালগুলোতে চোখ বুলোতে শুরু করলেন সিদ্ধেশ্বর ,ঘুমে চোখেরপাতা ভারী হয়ে আসছিল, সেদিনই বিলেত থেকে দেশে ফিরেছেন তিনি।

তখনই ভেজানো দরজা ঠেলে ও বাড়ির তপু ঢুকলো।মাথা ভর্তি সিঁদুর আর গা ভর্তি গয়নার আড়ালে সিদ্ধেশ্বর তার বাগদত্তা প্রেমিকাকে খুঁজে পেলেন না।তপুকে দেখে অবাক যেমন হলেন হয়তো বা একটু বিরক্ত।

বিলেতে বসেই সিদ্ধেশ্বর তপুর বিয়ের খবর জেনেছিলেন মেজবৌদির চিঠিতে । তার মন তখন থেকেই এক্কেবারে ভেঙে গিয়েছিল।

আসলে বিলেতফেরত ডাক্তার কি আর দেশে ফিরে তপুকে বিয়ে করতে চাইবে!হয়তো ওখানেই কোনো মেমসাহেবের সঙ্গে…, তাই বুঝি আগে ভাগেই পাশের গ্রামের এক উকিল পাত্রের সঙ্গে তপুর বিয়ে দেওয়া হলো।

সিদ্ধেশ্বর তপুকে দেখে অভিমানে বলে উঠলেন ,

-তুই এখানে এলি, কেউ দেখলে ব্যাপারটা ঠিক
হবে না। তুই এখন অন্যের বউ, কেন এসেছিস আমার কাছে?

তপু বললো,
-এ বিয়ে আমি চাইনি , বিশ্বাস করো আমার আর কোনো উপায় ছিল না।

সিদ্ধেশ্বর এবার বেশ রেগে গেলেন, রাগের মাথায় বলে ফেললেন,

– মরতে তো পারতিস, মরলি না কেন!যা তুই আমার সামনে থেকে, আর কখনো আসিস না আমার কাছে।

তপু মুখ নিচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।

সেদিন সন্ধ্যেবেলায় সিদ্ধেশ্বরের মেজবৌদি জানিয়ে ছিলেন তপু মাস ছয়েক আগে মারা গেছে ,প্রথম সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে।

বাল্যপ্রেমের স্মৃতি আগলে আর মৃত প্রেমিকাকে ভর্ৎসনা করার যন্ত্রনা মনে নিয়ে সিদ্ধেশ্বরডাক্তার সারাজীবন অকৃতদার থেকে গিয়েছিলেন।

সমাপ্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *